303110

আবরারকে খুনের পরও সকালে নাস্তা করেছে খেলা দেখেছে খুনিরা

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার পরও নির্লিপ্ত ছিল হত্যাকারীরা। রাতে খুনের পর সকাল বেলা দিব্যি গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেরিয়েছে খুনিরা। তারা নাস্তা করেছে, খেলা দেখেছে।

শুক্রবার (১১ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বুয়েটের শহীদ মিনারের পাশের রাস্তায় আন্দোলনের সময় এসব কথা বলেন আবরারেরই এক সহপাঠী। বিকেল ৫টায় বুয়েটের উপাচার্যের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উন্মুক্ত আলোচনা শুরু হয়েছে। এই আলোচনার আগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আবরার হত্যার বিষয়ে নিজেরাই বিভিন্ন প্রশ্ন তোলেন এবং নিজেরাই তার উত্তর দেন। এ রকম এক প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আবরারের এক সহপাঠী এসব কথা বলেন।

ওই সহপাঠী বলেন, ‘ওই মুহূর্তে আদৌ বোঝার উপায় ছিল না, আমরা এই ঘটনার বিচার পাব কি না। হলের মধ্যে খুনের মতো একটা ঘটনা ঘটে গেছে। কে কে এই কাজটা করেছে, তাদের অন্তত চেহারাটুকু দেখাটা ওই মুহূর্তে দরকার ছিল। কারণ, যারা খুনি তারা কিন্তু রাতে খুনের পরেও সকালবেলা দিব্যি গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেরিয়েছে। তারা নাস্তা করেছে, খেলা দেখেছে। তাদের এই যে নির্লিপ্ততা ছিল, আমরা যদি সিসিটিভি ফুটেজ না পেতাম, তাহলে বিষয়টা আমাদের জন্য অনেক বিভ্রান্তিকর হতো। আন্দোলনটা এত সুন্দরভাবে সংগঠিত করতেও পারতাম না। তাই আমরা সিসিটিভি ফুটেজ দাবি করেছিলাম। আমরা কোনো সহিংসতা করিনি, হলের কোনো কিছু ভাঙিনি।’

তিনি বলেন, ‘বুয়েটে আমরা এর আগেও দেখেছি, এই জাতীয় ঘটনায় প্রশাসন থেকে বিভিন্ন রকম আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ তারা করেনি। এ রকম যখন বারবার ব্যাপারটা ঘটছে, তখন এই ফুটেজ আমাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। শিক্ষার্থীদের কাছে ফুটেজের একটা কপি না আসলে তা ট্যাম্পারিং হতে পারে বা সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।’

প্রভোস্টকে বের হতে না দেয়ার অভিযোগের বিষয়টি উত্থাপন করেন আরেক আন্দোলনকারী। এর জবাবে আবরারের এই সহপাঠী বলেন, ‘আমরা উনাকে সেখানে রেখে এ বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। আলোচনা শেষে উনি ফুটেজ দিয়ে দিতে সম্মত হন। কয়েক দফায় উনি ফুটেজ দেয়ার কথা বলেন- একবার ৩টায়, একবার ৫টায়। এই পুরো সময়টা উনার সঙ্গে কো-অপারেট করছিলাম। ফুটেজ দেয়ার পর উনি চলে যান। বিষয়টা অবরুদ্ধ করে রাখার মতো নয়। বিষয়টা হলো, উনার সঙ্গে আমরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলাম।’ এই ফুটেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অধিকার বলেও জানান তিনি।

রোববার (৬ অক্টোবর) দিবাগত মধ্যরাতে বুয়েটের সাধারণ ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ফাহাদকে শেরেবাংলা হলের দ্বিতীয় তলা থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান। সোমবার (৭ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

জানা যায়, ওই রাতেই হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার মরদেহে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে সোমবার সন্ধ্যার পর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহত আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ্। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ ১৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

ad

পাঠকের মতামত