302661

পাঁচজনের গ্রাম ‘শ্রীমুখ’

এশিয়ার সবচেয়ে বড় গ্রামের নাম কি? জানতে চাইতে পারেন যে কেউ, এক বাক্যে বলবে বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং। আর এশিয়ার সবচেয়ে ছোট গ্রাম কোনটি? এমন প্রশ্নে অনেকেই দ্বিধায় পড়ে যাবেন।
ধারণা করা হচ্ছে, সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার নিজস্ব রাস্তাবিহীন ‘শ্রীমুখ’ গ্রামটিই এশিয়ার সবচেয়ে ছোট গ্রাম! কেননা, এর আগে এশিয়ার সবচেয়ে ছোট গ্রাম হিসেবে আলোচিত হওয়া কুমিল্লা জেলার লালমাই উপজেলার বেলঘর ইউপির ‘তিলইন’ গ্রামের জনসংখ্যা ৪০ জন। তাদের সবাই সনাতন ধর্মের বলে জানা গেছে।

অপরদিকে, বিশ্বনাথের শ্রীমুখ গ্রামের বর্তমান জনসংখ্যা পাঁচজন। তাদের মধ্যে রয়েছেন একজন পুরুষ, তিনজন নারী এবং একজন শিশু। সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার খাজাঞ্চি ইউপিতে অবস্থিত এই শ্রীমুখ গ্রামটি। সরকারি গেজেটভুক্ত এই গ্রামটিতে স্বাধীনতার আগে থেকেই বসবাস করে আসছে একটি মাত্র পরিবার।

উপজেলা সদর থেকে নয় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত খাজাঞ্চি ইউপি। এর ৫ নম্বর ওয়ার্ডের অর্ন্তগত তেলিকোনা ও পশ্চিম নোয়াগাঁওয়ের মধ্যবর্তী গ্রাম হচ্ছে শ্রীমুখ।

৬০ শতক জায়গাজুড়ে ‘এক ঘর-এক বাড়ি-এক গ্রাম’ খ্যাত শ্রীমুখ গ্রামে এক সময় একটি হিন্দু পরিবারের বসবাস ছিল। ১৯৬৪ সালে দাঙ্গার সময় ওই হিন্দু পরিবার তাদের বাড়ি বর্তমান বাসিন্দা আলতাফ আলীর পূর্ব পুরুষের কাছে বিক্রি করে অন্যত্র চলে যান। এরপর থেকে আলতাফ আলীর পরিবার এ বাড়িতেই বসবাস করে আসছেন। বর্তমানে আলতাফ আলী সৌদি প্রবাসী। আর বাড়িতে বসবাস করছেন তার স্ত্রী-কন্যা ও দুই বোন।

গ্রামটির চারদিকে ফসলি জমি, বাঁশ ঝাড়, জঙ্গল ও কাদামাটিতে পরিবেষ্টিত। খালি পায়ে কাদামাটি ও পানি পেরিয়ে কোনো রকমে ঢুকতে হয় রাস্তাবিহীন ও উন্নয়নবঞ্চিত এ গ্রামে।

কথা হয় গ্রামের একমাত্র পুরুষ সদস্য সৌদি প্রবাসী আফতাব আলীর স্ত্রী রাহিমা বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, নানা বঞ্চনা, দুর্ভোগ ও দুর্গতির কথা। তাদের একমাত্র মেয়ে প্রতিদিন কাদামাটি-পানি পেরিয়ে একটি কিন্ডারগার্টেনে যায়। তাদের আর্থিক দুরবস্থার কারণে ব্যবহার করতে হয় কাঁচা শৌচাগার। একমাত্র টিউবওয়েলটি নষ্ট থাকার কারণে পান করতে হচ্ছে পুকুরের পানি।

এ সময় তিনি অভিযোগ করে জানান, অনেক কষ্টের পর গ্রামে বিদ্যুৎ এলেও মিটার রিডাররা বাড়িতে না গিয়েই মনগড়া বিল তৈরি করেন। এছাড়াও তার এক ননদ বয়স্ক হলেও কোনো ভাতা পাননি বলেও জানান তিনি।

শ্রীমুখ গ্রামে মাত্র পাঁচজন সদস্য হওয়ায় তারা পার্শ্ববর্তী পশ্চিম নোয়াগাঁওয়েরর পঞ্চায়েতের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। গ্রামটির যাতায়াত ব্যবস্থা খুবই খারাপ। যাতায়াতের জন্য নেই কোনো রাস্তা। ছোট একটি আইল দিয়েই চলাচল করেন তারা। বিশেষ করে র্বষা মৌসুমে এই গ্রামের লোকজন নৌকা ছাড়া বাড়ি থেকে কোথাও যেতে পারেন না। শুকনো মৌসুমেও তাদের কাদা মাড়িয়ে চলাচল করতে হয়। ফলে গ্রামের বাসিন্দাদের অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গ্রামটি ছোট্ট হওয়ায় উন্নয়ন বঞ্চিত এবং অবহেলিত রয়েছেন বলে অভিযোগ ওই পরিবারটির।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তালুকদার মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, শ্রীমুখের পার্শ্ববর্তী জায়গার মালিকেরা যদি জমি দিয়ে সহযোগিতা করেন, তাহলে রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

তিনি আরো বলেন, আমি মনে করি সঠিক পর্যবেক্ষণ করা হলে আমার ইউপির শ্রীমুখ গ্রামটি বিশ্বের সবচেয়ে ছোট গ্রাম হতে পারে। যদি তাই হয় তাহলে ‘শ্রীমুখ’ গিনেজ বুকে নাম লেখাবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বর্ণালী পাল চৌধুরী বলেন, আমি নতুন এসেছি। এ গ্রামের কথা আমি জানি না, খোঁজখবর নিয়ে আমি দেখতে যাবো।

ad

পাঠকের মতামত