302102

মৃত মা-বাবার জন্য সন্তানের শ্রেষ্ঠ উপহার

ইসলাম মা-বাবাকে সন্তানের সুশিক্ষা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছে। যেন পৃথিবীতে তাদের জীবন স্বস্তিকর হয় এবং পরকালেও তাদের প্রতি কল্যাণের ধারা অব্যাহত থাকে। ইসলামের দৃষ্টিতে সুসন্তান পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম সম্পদ। কেননা মৃত্যুর পর মানুষ সীমিত যে কয়েকটি মাধ্যম দ্বারা উপকৃত হয়, সুসন্তান তার একটি। হাদিসের ভাষ্য মতে, মৃত্যুর পর সন্তানের ভালো কাজ মা-বাবাকে উপকৃত করে। তাই সন্তানের দায়িত্ব পরকালে মা-বাবার আত্মার মুক্তি ও মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য বেশি বেশি নেক আমল করা। শরিয়তের দৃষ্টিতে যেসব কাজের মাধ্যমে সন্তান তার মৃত মা-বাবাকে লাভবান করতে পারে তার কয়েকটি হলো—

১. দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা : মৃত মা-বাবার জন্য সন্তান সর্বদা দোয়া করবে। মা-বাবার জন্য সন্তানের দোয়া এবং সন্তানের জন্য মা-বাবার দোয়া আল্লাহ কবুল করেন। পবিত্র কোরআনেও মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়াকারীর প্রশংসা করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘যারা তাদের পরে এসেছে, তারা বলে, হে আমাদের প্রভু! আপনি আমাদের ক্ষমা করুন এবং আমাদের পূর্ববর্তী যেসব ভাই ঈমানের সঙ্গে গত হয়েছেন তাদেরও ক্ষমা করুন।’ (সুরা : হাশর, আয়াত : ১০)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন তোমরা মৃত ব্যক্তির জানাজা পড়বে, তখন তার জন্য নিষ্ঠার সঙ্গে দোয়া করবে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৫৬৪)

২. দান ও সদকা : বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত, জীবিত ব্যক্তির দান-সদকা মৃত ব্যক্তিকে উপকৃত করে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী (সা.)-কে বলেন, ‘আমার বাবা মারা গেছেন। তিনি সম্পদ রেখে গেছেন, তবে কোনো অসিয়ত করে যাননি। আমি যদি তার জন্য সদকা করি, তবে কি তাঁর পাপ মার্জনা হবে? তিনি বলেন, হ্যাঁ।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪০০১)

৩. রোজা রাখা : আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এলেন। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমার মা মারা গেছেন। তাঁর এক মাসের রোজা কাজা রয়েছে। আমি কি তাঁর পক্ষ থেকে তা আদায় করব? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যদি তোমার মায়ের কোনো ঋণ থাকত, তবে তুমি কি তা আদায় করতে? লোকটি বললেন, হ্যাঁ।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮৫২)

মা-বাবার কাজা রোজা আদায় করা ছাড়াও সন্তান মা-বাবার জন্য নফল রোজাও রাখতে পারে।

৪. কোরআন তিলাওয়াত করা : সন্তান মৃত মা-বাবার উদ্দেশে কোরআন তিলাওয়াত করতে পারে। এতে তাঁরা সওয়াব পাবেন। তবে অন্যের মাধ্যমে কোরআন পাঠ করানো এবং তার বিনিময় দেওয়া উচিত নয়; বরং নিজেই কোরআন তিলাওয়াত করবে এবং মা-বাবার আত্মার মুক্তির জন্য দোয়া করবে। আল্লামা ইবনে কুদামা (রহ.) মুগনিতে এ ব্যাপারে মুসলমানের ঐক্য দাবি করেছেন।

৫. নামাজ আদায় করা : সন্তান মৃত মা-বাবার জন্য নফল নামাজও আদায় করতে পারে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসুল! জীবদ্দশায় আমি আমার মা-বাবার আনুগত্য করি। তাঁদের মৃত্যুর পর আমি তাঁদের আনুগত্য কিভাবে করব? তিনি বলেন, মৃত্যুর পর তাদের আনুগত্য হলো, তুমি নামাজ পড়ার সময় তাদের জন্য নামাজ পড়বে এবং তুমি রোজা রাখার সময় তাদের জন্য রোজা রাখবে।’ (আওজাজুল মাসালিক ইলা মুয়াত্তায়ে মালিক, পৃষ্ঠা ২৬৭)

৬. কবর জিয়ারত করা : রাসুলুল্লাহ (সা.) নিয়মিত মদিনার ‘বাকি’ কবরস্থান জিয়ারত করতেন। মৃত আপনজন, আত্মীয়-স্বজন ও সাহাবিদের জন্য দোয়া করতেন। চলার পথে কোনো কবর বা কবরস্থান পড়লেও মৃত ব্যক্তিদের জন্য দোয়া করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নবী (সা.) মদিনার একটি কবরস্থান অতিক্রম করার সময় তার দিকে ফিরে বলেন, ‘হে কবরবাসী! তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহ আমাদের ও তোমাদের মাফ করে দিন। তোমরা আমাদের অগ্রগামী, আমরা তোমাদের পদাঙ্ক অনুসারী।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১০৫৩)

এ ছাড়া হাদিস শরিফে মৃত ব্যক্তির জন্য হজ করার কথাও রয়েছে। ইসলামী স্কলাররা বলেন, সব ধরনের ভালো কাজের সওয়াবই মৃত মা-বাবা লাভ করেন। আল্লামা ইবনে কাইয়্যিম (রহ.) বলেন, ‘মৃত ব্যক্তির জন্য সবচেয়ে উপকারী হলো, দাসমুক্তি। তাঁর জন্য রোজা রাখার চেয়ে তাঁর জন্য দান করা উত্তম। যে দানের মাধ্যমে গ্রহীতার প্রয়োজন পূর্ণ হয় এবং যার উপকারের ধারা অব্যাহত থাকে তা উত্তম। যেমন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সর্বোত্তম সদকা (দান) তৃষ্ণার্তকে পানি পান করানো।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৩৬৬৫)

সুতরাং সন্তান মৃত মা-বাবার জন্য দান করবে এবং অভাবগ্রস্ত মানুষদের বেশি বেশি দান করবে।

লেখক : সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (সিসি), বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা

ad

পাঠকের মতামত