300583

দিনে ২ লাখ টাকা চাঁ’দা দাবি জবি ছাত্রলীগের! কম দেয়ায় মা’রধর

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সামনের ফাঁকা জায়গার (টিএসসি) দোকান থেকে চাঁ’দাবাজি করছে ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সাবেক সভাপতি তরিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেলের নেতাকর্মীরা। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষপদে রদবদলের এক দিনে বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি থেকে দুই লাখ টাকা চাঁ’দা দাবি করেন তারা। চাঁ’দার টাকা কম দেয়ায় খিচুড়ির পাতিল ছিনতাই ও দোকানীদের পিটিয়ে আহত করেন।

টিএসসি’র দোকানদারের সাথে কথা বলে জানা, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতারা তাদের কর্মীদের মাধ্যমে দীর্ঘদিন চাঁ’দাবাজি করে আসছিল। দোকান বসানোর সময় প্রতি দোকান থেকে ১০ হাজার টাকা করে অগ্রিম (অফেরতযোগ্য) নেয়া হয়েছিল। গত ১৯ ফেব্রুয়ারী ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্তির পর এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন শাখা প্রশাখায় বিভক্ত হয়ে পড়ে। এতে করে টিএসসিতে চাঁ’দাবাজির ব্যপকতা বেড়ে যায়।

জানা যায়, গত ১৪ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কমিটি রদবদলের রাতে ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল করেন এবং পরদিন মিস্টি খাওয়ার নাম করে টিএসসিতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সভাপতি তরিকুল ইসলামের একান্ত আস্থাভাজন কর্মী অ্যাকাউন্টিং বিভাগের ৭ম ব্যাচের মাসুম বিল্লাহ, ৭ম ব্যাচের আলমগীর মুন্সী, বাংলা বিভাগ ৭ম ব্যাচের সাইফ আহমেদ লিখন, ম্যানেজমেন্ট ১০ম ব্যাচের সামিউল তাছাহাব শিশির সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেলের একনিষ্ঠ কর্মী ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ৭ম ব্যাচের আব্দুল্লাহ আল মামুন, ইংরেজি বিভাগ ৯ম ব্যাচের কামরুল ইসলামের নেতৃত্বে ১২-১৫ জন গিয়ে দোকানীদের কাছে দুই লাখ টাকা চাঁ’দা দাবী করে। দোকানীরা চাঁ’দা কম দেয়ায় এসময় তাদের মা’রধর করে। এক খিচুড়ি দোকানীর পাতিল ছিনতাই করে নিয়ে আসে। এরপর তারা ক্যাশ থেকে প্রায় অর্ধ লাখ টাকা নিয়ে চলে যায়। এর প্রতিবাদে দোকানীরা ধর্মঘট ডেকেছে। এতে করে ভোগান্তিতে পড়েছে শিক্ষার্থীরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক দোকানদার বলেন, রোববার সন্ধ্যায় মাছুম, মামুন, আলমগীর, লিখন, শিশির, কামরুলসহ ১২-১৫ জন টিএসসিতে এসে প্রতি দোকান থেকে ২০ হাজার করে ও সিংগারা চমুচার দোকান থেকে ৫০ হাজার টাকা তাৎক্ষণিক চাঁ’দা দাবী করে। এসময় দোকানীরা এতো টাকা দিতে পারবে না বলে জানালে দোকানদার ইমনকে পাইপ দিয়ে মা’রধর শুরু করে।

তাকে বাঁচাতে এলে আরো দুই দোকানদারকে মা’রধর করে তারা। এরপর দোকানের ক্যাশ হাতিয়ে সব দোকান থেকে প্রায় ৫০ হাজার টাকা ও সিগারেটের প্যাক ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এক খিচুড়ির দোকানের ক্যাশে টাকা না থাকায় খিচুড়ির পাতিল ছিনতাই করে নিয়ে আসে। পাশের বিকাশের দোকান থেকে ক্যাশের পাশাপাশি ৬ হাজার টাকা বিকাশ করে নিয়ে যায়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, টিএসসিতে কমপক্ষে ৯টি চায়ের দোকান, খিচুরির দোকান ৪টি, ১টি সমুচা-সিংগাড়ার দোকান, ১টি শুকনো খাবারের দোকান, ১টি শরবতের দোকান ও ১টি বিকাশ-ফ্লাক্সির দোকান। ক্যাম্পাস খোলা থাকলে মূল ফটকের পাশেই সকাল থেকেই বসে বেশ কয়েকটি ঝালমুড়ি, চটপটির দোকানসহ হালিমের দোকান। চায়ের দোকান থেকে প্রতিদিন ১৫০ টাকা হিসেবে মাসে ৪ হাজার ৫০০, সমুচা দোকান থেকে প্রতিদিন ৫০০ হিসেবে মাসে ১৫ হাজার, খিচুরী দোকান থেকে প্রতিদিন ৪০০ হিসেবে ১২ হাজার ও রিচার্জের দোকান থেকে প্রতিদিন ১০০ টাকা করে মাসিক ৩ হাজার টাকা চাঁ’দা তুলে থাকে। এছাড়া মূল ফটকের সামনের দোকান থেকেও নেয়া হয় প্রায় ২০ হাজার টাকা। সে হিসেবে প্রতিমাসে প্রায় লক্ষাধিক টাকা চাঁ’দা তুলে আসছিল জবি ছাত্রলীগের নেতারা।

জবি ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক কমিটির সভাপতি তরিকুল ইসলাম এবিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি প্রথমে চাঁ’দাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করেন। এরপর বলেন, টিএসসিতে চাঁ’দাবাজির বিষয়টি আমার জানা নেই। বিষয়টি এখন জেনেছি, খোঁজ নিয়ে দেখবো।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, চাঁ’দাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ যে কোনো ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডকে প্রশ্রয় দেবে না ছাত্রলীগ। কোন অপরাধ দেখা মাত্র আমরা জড়িতদের বি’রুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেবো। প্রশাসনকেও বলবো যাতে কোন ছাড় না দেয়া হয়।

এবিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল বলেন, র‌্যাব ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে চাঁ’দাবাজদের একটি তালিকা চাওয়া হয়েছে। আমরা বিভিন্ন মাধ্যম থেকে চাঁ’দাবাজদের তালিকা তৈরি করছি। খুব শীঘ্রই আমরা এদের বি’রুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানিক সিদ্ধান্তও নেবো। এবিষয়ে সকলের সহযোগিতা দরকার।

সুত্রাপুর থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী বলেন, টিএসসিতে চাঁ’দাবাজির বিষয়ে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ দেয়নি। চাঁ’দাবাজির বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্স রয়েছি। এবিষয়ে কেউ অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা নেবো। সূত্রঃ নয়া দিগন্ত

ad

পাঠকের মতামত