300205

পুকুর খনন শিখতে ১ কোটি ২৮ লাখ টাকায় সফরে বিদেশ যাচ্ছেন ১৬ কর্মকর্তা

পুকুর খননে দক্ষতা লাভ করতে রাজশাহীর বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ১৬ কর্মকর্তা বিদেশ সফর করবেন। এ জন্য ব্যয় হবে ১ কোটি ২৮ লাখ টাকা। বরেন্দ্র অঞ্চলে বহু আগে থেকে যে পুকুরগুলো স্থানীয় লোকজন সেচের কাজে ব্যবহার করতেন, সেই পুকুরগুলো পুনঃখনন করে সেচ কাজে ব্যবহার করা হবে। এ জন্য বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) ‘পুকুর পুনঃখনন ও ভূ-উপরিস্থ পানি উন্নয়নের মাধ্যমে ক্ষুদ্র সেচে ব্যবহার’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে।

গত ২৭ আগস্ট একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রকল্পের ১৬ কর্মকর্তা অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস যে কোনো একটি দেশ সফর করবেন। প্রথম পর্যায়ে আটজন ও পরবর্তী পর্যায়ে আট কর্মকর্তা এই সফরে যাবেন। আটজনের মধ্যে চারজন করে বিএমডিএর প্রকৌশলী আর বাকি চারজন মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা থাকবেন।

প্রকল্পের ডিপিপি তৈরি করেছেন বিএমডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন। বিদেশ সফরের উদ্দেশ্য সম্পর্কে এই প্রকৌশলী বলেন, ওই সব দেশ দক্ষতার সঙ্গে কীভাবে এবং কী প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভূ-উপরিস্থ বৃষ্টির পানি ব্যবহার করছে, সে বিষয়ে বাস্তব জ্ঞান অর্জনের জন্য এই সফরের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

তবে পুকুর খনন ও ক্ষুদ্র সেচের দক্ষতা লাভের জন্য বিদেশ সফরের বিষয়টি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকল্প হলেই তার সঙ্গে বিদেশ সফর রাখার একটা প্রবণতা শুরু হয়েছে। এ ধরনের প্রকল্পের জন্য দেশীয় জ্ঞান কাজে না লাগিয়ে প্রথমে বিদেশে যাওয়াটা তাঁরা সমর্থন করছেন না।

বিএমডিএ সূত্র জানায়, রাজশাহী, নওগাঁ, বগুড়া ও নাটোর জেলার ৪৩টি উপজেলার বরেন্দ্র অঞ্চলে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত কম। সেচকাজে মূলত ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এ লক্ষ্যে বিএমডিএ সদর দপ্তরে কর্মরত নির্বাহী প্রকৌশলী ও স্মার্ট কার্ড বেইজড প্রিপ্রেইড পাম্প ইউজেস অ্যান্ড এনার্জি মিজারিং সিস্টেম প্রকল্পের (দ্বিতীয় পর্যায়) পরিচালক প্রকল্প প্রস্তাবটি প্রস্তুত করেছিলেন। প্রস্তাবনা অনুযায়ী- পুকুর পুনঃখননের জন্য প্রতি লাখ ঘন মিটারে ব্যয় হবে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা এবং দিঘি পুনঃখননে ব্যয় হবে ১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। সেটি কৃষি মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশন হয়ে একনেকে ওঠে।

গত ২৭ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে ১২৮ কোটি ১৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকার ‘পুকুর পুনঃখনন ও ভূ-উপরিস্থ পানি উন্নয়নের মাধ্যমে ক্ষুদ্র সেচের ব্যবহার’ শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদন হয়। অনুমোদনের পর প্রকল্পের পরিচালক নিয়োগের কার্যক্রম শুরু করা হয়। তা সম্পন্ন হলে প্রকল্প আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করা হবে।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পে ৭১৫টি পুকুর ও ১০টি দিঘি পুনঃখনন, ৮৫টি সৌরচালিত লো লিফট পাম্প স্থাপন, ৮০টি ভূ-গর্ভস্থ সেচনালা নির্মাণ, ৮৫টি প্রিপেইড মিটার ক্রয়, ৯ হাজার মিটার ফিতা পাইপ ক্রয় এবং দেড় লাখ বৃক্ষ রোপণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

প্রকল্পের ব্যয় বিভাজনে দেখা যায়, এই প্রকল্পে ১৮ জন কর্মকর্তা ও ৮ জন কর্মচারী কাজ করবেন। তাদের বেতন ধরা হয়েছে সাড়ে ৩ কোটি টাকার বেশি। তাদের ভাতা যাবে সোয়া ৭ কোটি টাকা। প্রকল্পের প্রস্তাবনা অনুযায়ী দুই শিফটে ১৬ জনকে বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হবে। যার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ২৮ লাখ টাকা।

এছাড়া ৭২৫টি পুকুর ও দীঘির জরিপে ব্যয় হবে সাড়ে ৭৩ লাখ টাকা। ভূ-গর্ভস্থ সেচনালা নির্মাণের জন্য ইউপিভিসি পাইপ কেনা হবে ১ হাজার মিটারের ৮৫টি, যাতে খরচ ধরা হয়েছে ৬ কোটি টাকা। ফলে প্রতিটি পাইপের মূল্য পড়ছে সাড়ে ৭ লাখ টাকা। আর এই পাইপ প্রতিটি বসাতে ব্যয় হবে ৪ লাখ টাকা। ৮০টি পাইপ বসাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা।

শুধু তাই নয়, ৪২ মাস মেয়াদী এই খনন কার্যক্রমের জন্য বাড়ি ভাড়া বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ কোটি ৬২ লাখ ২০ হাজার টাকা। যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী এই প্রকল্পের জন্য নিয়োগ পাবেন তাদের সবাই বাড়ি ভাড়া পাবেন। প্রকল্পের সব খরচই বহন করবে সরকার। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে প্রকল্পের ১৬ কর্মকর্তার পুকুর খনন প্রশিক্ষণে বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহ-উপাচার্য ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক চৌধুরী সারোয়ার জাহান দেশের ভূগর্ভস্থ জলাধার ব্যবস্থাপনা জাতীয় কৌশল নির্ধারণী কমিটির সদস্য। ১৬ কর্মকর্তার বিদেশ সফর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নতুন কোনো প্রকল্প হলেই তার সঙ্গে বিদেশ সফর রাখার মানেই হচ্ছে জনগণের ওপর করের চাপ বাড়ানো। তিনি মনে করেন, আগে দেশীয় জ্ঞান ও বিবেচনা কাজে লাগিয়ে দেখতে হবে। তাতে একান্তই সম্ভব না হলে একজন বিদেশি বিশেষজ্ঞ আনা যেতে পারে।

সারোয়ার জাহান বলেন, এখন ইন্টারনেটে সার্চ দিলেই অনেক বিষয়ে জানা যায়। নেটেই অনেক পড়াশোনা করা যায়। ঘরে বসেই অনেক তথ্য জানা যায়। আর পুকুর খনন ও সেই পানি সেচে ব্যবহার করার জ্ঞান লাভের জন্য প্রথমেই বিদেশ সফরের প্রয়োজন আছে বলে তিনি মনে করেন না।

ad

পাঠকের মতামত