290635

অবহেলায় জীবন হারাতে যাচ্ছিলেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী!

এমবিবিএস পাস করে ছেড়েছিলেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক)। এরপর আর আসা হয়নি ডা. লোটে শেরিং’র। কমপক্ষে ২০ বছর পর নিজের সেই পীঠস্থানে আবারো ফিরলেন। তবে শুধু চিকিৎসক হয়ে নয়, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী হয়ে। পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে পহেলা বৈশাখ উদ্‌যাপন করলেন প্রায় ঘণ্টা তিনেক সময়।নিজের ক্যাম্পাস জীবনের ফেলে আসা দিনগুলোর কথা বলতে গিয়ে রীতিমতো নস্টালজিক হয়ে পড়েন তিনি। ছাত্রজীবনে কঠোর অধ্যবসায়ী চরিত্র ছিলেন তিনি।নিজের তখনকার বিভিন্ন ঘটনা জানাতে গিয়ে বললেন, একবার চিকিৎসকের অবহেলায় তার জীবন বিপন্ন হতে বসেছিল।

ভবিষ্যতের চিকিৎসকদের ‘রোগী বন্ধু’ হওয়ার সুপরামর্শও দিলেন। জানিয়ে দিলেন, ভালো চিকিৎসক হওয়ার চেয়েও জরুরি ভালো মানুষ হওয়া। প্রায় ২৭ মিনিটের বক্তৃতা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনলেন সবাই। এ যেন ঠিক এলেন, বললেন এবং জয় করলেন অবস্থা।মমেকের ২৮তম ব্যাচের এই শিক্ষার্থী রোববার বেলা ১১টার দিকে পহেলা বৈশাখ উদ্‌যাপন করতে মমেক ক্যাম্পাসে আসেন। দুপুর ১২টার দিকে কলেজ অডিটোরিয়ামে দেওয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসব কথা জানান ভুটানের প্রধানমন্ত্রী।

১৯৯১ সালে এই মেডিকেল কলেজে পড়তে আসেন লোটে শেরিং। ১৯৯৯ সালে এখান থেকে এমবিবিএস পাস করেন। পরে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) সার্জারিতে এফসিপিএস কোর্স সম্পন্ন করে ভুটানে ফিরে যান তিনি। ডা. লোটে শেরিং বলেন, আমি তখন চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। থাকতাম কলেজ ছাত্রাবাসের ওয়েস্ট ব্লকের ২০ নম্বর কক্ষে। একদিন রাতে হঠাৎ পেট ব্যথা অনুভব করলাম। সঙ্গে ছিলেন আমার হলের সিনিয়র বন্ধু ডা. সিলভা রাজত। সেই রাতে আমি তিনবার বমি করেছিলাম। পর দিন সকালে সে আমাকে হাসপাতালের আউটডোরে নিয়ে গিয়েছিল।

তিনি বলেন, তখনকার সময়ে আমরা আবাসিক চিকিৎসককে আরপি বলতাম। ছাত্র এবং রোগী হিসেবে এর আগে কখনোই তার কাছে যাওয়া হয়নি। তার কক্ষে প্রবেশ করে আমি আমার রোগের লক্ষণগুলো বলার চেষ্টা করছিলাম। তখন তিনি আমাকে থামিয়ে দিতে চাইলেন। আমি বললাম, অনেক দিন যাবৎ আমি এই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। এরপর উনি ন্যূনতম অপেক্ষা না করে আমাকে ওমিপ্লাজল এবং ব্যথানাশক ওষুধ দিয়ে দিলেন। ভুটানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওটা নিয়ে আমি আবার আমার ২০ নম্বর কক্ষে চলে গেলাম। বিশ্রাম নিলাম। যদিও ওমিপ্লাজল, রেনিটিডিন কোনো কিছুই কাজ করল না। পরের দিন সকালবেলা আমি আবারো বন্ধুসহ একই আরপি’র কাছে গেলাম। তখন তিনি বললেন, যদি ক্লাস না করে বিশ্রাম নিতে চাও স্টুডেন্ট কেবিনে গিয়ে ভর্তি হও।

স্মৃতিচারণ করতে করতে তিনি বলেন, আমি একটি স্টুডেন্ট কেবিনে ভর্তি হয়ে গেলাম। যেহেতু আবাসিক ডাক্তার অ্যাডমিশন দিয়েছেন মেডিসিনে তাই মেডিসিনের অধ্যাপকরা রাউন্ডে আসছেন। কিন্তু কোনো কিছুই হচ্ছে না। আমি জানি না ঠিক কত দিন পর ভিন্ন এক দল চিকিৎসক ওই স্টুডেন্ট কেবিন পরিদর্শন করতে আসলেন। সম্ভবত সার্জারি ডাক্তারদের একটি দল। ‘সন্ধ্যার সময় আমি স্পষ্ট মনে করতে পারছি একজন ভদ্রলোক বললেন, আরে এই ছেলেটা এভাবে পড়ে আছে কেন? কত দিন ধরে এভাবে আছে? এটা তো অ্যাপেন্ডিসাইটিস। এটা তো ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ব্যাপারটা আমাদের সঙ্গে আলোচনা করলেই হতো। তার দ্রুত অস্ত্রোপচার দরকার। আমি নিজেই এটি করব।

সেই চিকিৎসক তাকে অভয় দিয়েছিলেন। শঙ্কামুক্ত করেছিলেন তাকে। সেই কথা জানিয়ে ডা. লোটে শেরিং বলেন, ‘ডাক্তার আমাকে বলল চিন্তা করো না, চিন্তার কোনো কারণ নেই। যদিও তোমার পিতা-মাতা এখান থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছেন। আমি এই ধরনের হাজারো সমস্যা সমাধান করেছি। তুমি নিশ্চিত থাকো, তোমার কোনো সমস্যা হবে না। একজন রোগী হিসেবে আমার টেনশন হওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু যখনই তার ওই কথাগুলো মনে পড়ে আমি হাজারো এ রকম রোগীর চিকিৎসা করেছি, তোমার চিন্তার কোনো কারণ নেই। তখন এটা মনে হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যথাই আমার হারিয়ে গিয়েছিল’।

তিনি জানান, সেদিন রাতে সম্ভবত ৯টা থেকে ১০টায় অপারেশন থিয়েটারে ছিলাম। আমার অ্যাপেন্ডিক্স বেরিয়ে আসল। এটি বিশাল ছিল। এরপর আমি দুই থেকে তিন সপ্তাহ কেবিনে অবস্থান করলাম। আমি বিরতি নিলাম। এরপর সময়মতো আমি আমার ক্লাস শুরু করলাম।’ সেই চিকিৎসকের নাম প্রকাশ করেন ডা. লোটে শেরিং বলেন, ‘যিনি আমাকে অপারেশন করেছিলেন তিনি অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম। তিনি রোগী হিসেবে আমার মাঝে আত্মবিশ্বাস তুলে এনেছিলেন। সেদিন থেকে অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম এবং আমর মাঝে সম্পর্কটা পাল্টে গেছে। সেদিন থেকে তিনি শিক্ষক-ছাত্রের সম্পর্ককে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। আসলে চিকিৎসাই পেশা সর্বোৎকৃষ্ট পেশা’। সূত্র: দেশ রুপান্তর

ad

পাঠকের মতামত