288655

বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা চুমু দেয়ার

আসলে চুমু দেয়ার সময় বা হ্যান্ডশেক করার সময় মূলত আমাদের ঠোঁটের চেয়ে ব্রেইনই বেশি তৃপ্ত হয়। চুমু খেলে, বা হাতে হাত রেখে উষ্ণ করমর্দন করলে যেন একটা ব্রেইন আরেকটা ব্রেইনের সঙ্গে পুরোপুরিভাবে লেপ্টে যায়। এর মূল কারণ হলো আমাদের সামান্য ঠোঁট, মুখ এবং হাতের তালুর স্পর্শগুলো নিখুঁতভাবে, গভীরভাবে উপভোগ করার জন্য ব্রেইনের প্রায় অর্ধেক অংশই নিয়োজিত রয়েছে। এটাকে নিউরোসায়েন্সের ভাষায় সোমাটো-সেন্সরি এরিয়া বলে। ঠোঁট, জিহ্বা, হাতের বুড়ো আংগুলেত সোমাটোসেন্সরি এরিয়া পুরো দেহের সোমাটো সেন্সরি এরিয়ার সমান।

তাই বলা যায়, আমরা একে অন্যের সঙ্গে পুরো শরীর লাগিয়ে যে পরিমাণ তৃপ্ত হই, তার চেয়ে অনেক অনেক গুণ বেশি তৃপ্ত হই সামান্য করমর্দন করে কিংবা ঠোঁটের সঙ্গে ঠোঁট লাগিয়ে আলতো আলিঙ্গন করে। আর এটার মূল কারণ, এই যে বললাম ঠোঁট বা হাতের তালুর সংবেদন নিখুঁতভাবে উপলব্ধি করার জন্য নিয়োজিত অনেক বেশি পরিমাণে ব্রেইন কোষ যা প্রায় সারা শরীরে সংবেদন বুঝে নেবার ব্রেইন কোষের সমান।

শেষ করি বৈধ সম্পর্কের জালে আবদ্ধ প্রিয়জনকে চুমু দেয়ার দুটো উপকারী বার্তা দিয়ে। গভীর আলিঙ্গন বা চুমুতে উচ্চরক্তচাপ প্রশমিত হয়, টেনশন কমে যায়, হার্ট মজবুত হয়, ব্রেইন থেকে প্রচুর ডোপামিন, অক্সিটোসিন হরমোন নিঃসরণ হয় যা থেকে আনন্দ অনুভূতি বাড়ে, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বোঝাপড়া বাড়ে, পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় হয়। মানুষ মৃত্যুর সময়ও তার প্রিয়জনকে শেষবার চুমু দেয়।

তবে আবারও বলছি, আমরা যেহেতু মানুষ, জীবজন্তু নই। আলিঙ্গনের ক্ষেত্রে আমাদের স্থান, কাল, পাত্র সব সময় বিবেচনায় রাখতে হবে। পাবলিক নুইস্যান্স যাতে ক্রিয়েট না হয়, পরিবেশ দূষণ যাতে না হয়, আমাদের প্রতিক্রিয়ায় অন্য যাতে বিব্রত না হয় সেটা মাথায় রাখতে হবে। কারণ প্রকাশ্যে জৈবিক লীলা খেলায় মত্ত হওয়া কিন্তু আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

সাইকোলজিস্টদের মতে, বলা হয়ে থাকে আদিকালে প্রজাতিকূল তাদের সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানদের মুখে মুখ লাগিয়ে খাইয়ে দিত। সদ্যভূমিষ্ঠ প্রজাতির দাঁত না থাকায় অনেক সময় খাবার চিবিয়ে নরম করেও তা মুখের ভেতর পুরে দিত। সেখান থেকেই ভালোবাসা, আদর, মায়ামমতার বহিঃপ্রকাশ বা আদান প্রদানে চুমু খাওয়াটি এসেছে। তবে বিশ্বের অনেক দেশ আছে যেখানে চুমু দেয়াকে পাপ বা অপরাধ হিসেবে দেখা হয়। ১৬৬৬ সালে পোপ আলেকজান্ডার চুমু দেয়াকে পাপ হিসেবে ঘোষণা করে বসেন।

বাবা-মেয়ে, মা-ছেলে, দাদি-নাতি, কিংবা স্বামী-স্ত্রী এসব আত্মীয়স্বজনরা পরস্পর আলিঙ্গন করতে কাছে টেনে চুমু দেন। যেখানে হয়তো সামান্য স্পর্শ করেই ভালোবাসা বিনিময় করা যেত, সেখানে কাছে টেনে নিয়ে একটা গভীর চুমু না দেয়া পর্যন্ত যেন মনে হয় ভালোবাসা, মায়ামমতা বা মনের ভাব প্রকাশ অসম্পূর্ণ থেকে যাচ্ছে। আবার সম্পর্কের বাছবিচারে একেক চুমুতে ব্রেইনে একেক ধরনের ডাটা ট্রান্সফার হয়। ছেলে মাকে চুমু দিলে ব্রেইন একভাবে তৃপ্ত হয় আবার স্বামী স্ত্রীকে চুমু দিলে ব্রেইন অন্যভাবে তৃপ্ত হয়। বিষয়টি রহস্যময়। সৃষ্টিকূলের মধ্যে চুমুর মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি ডাটা বা তথ্য ট্রান্সফার করে পিঁপড়া।

ad

পাঠকের মতামত