263498

সৌদির সাথে সামরিক চুক্তি : ক্ষোভ প্রকাশ করে যা বললেন মেনন

নিউজ ডেস্ক।। সৌদি আরবের সাথে বাংলাদেশের সামরিক চুক্তিকে সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক আখ্যায়িত করে এবং এই চুক্তির বিষয় সংসদে আলোচনা না করায় সংসদে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাতীয় পার্টির সিনিয়র সদস্য ফখরুল ইমাম। তারা বিষয়টির ব্যাপারে সংসদের ৩০০ বিধিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেছেন এবং বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য স্পিকারে প্রতিও আহবান জানিয়েছেন। গত রাতে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনা শুরুর আগে পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নিয়ে তারা প্রসঙ্গটি উত্থাপন করে স্পিকারের রুলিংও চান। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বৈঠকে সভাপতিত্ব করছিলেন। তবে স্পিকার এ বিষয়ে কিছুই বলেননি।

রাশেদ খান মেনন তার বক্তব্যে বলেন, আমাদের সংবিধানের রাষ্ট্রীয় মূলনীতিতে ২৫ বিধিতে যা বলা হয়েছে, জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও সমতার প্রতি শ্রদ্ধা, অন্যান্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, আন্তর্জাতিক বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং আন্তর্জাতিক আইনের ও জাতিসঙ্ঘের সনদে বর্ণিত নীতিগুলোর প্রতি শ্রদ্ধাÑ এসব নীতি হবে রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভিত্তি এবং এসব নীতির ভিত্তিতে রাষ্ট্র (ক) আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শক্তিপ্রয়োগ পরিহার এবং সাধারণ ও সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণের জন্য চেষ্টা করবেন; (খ) প্রত্যেক জাতির স্বাধীন অভিপ্রায় অনুযায়ী পথ ও পন্থার মাধ্যমে অবাধে নিজস্ব সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা নির্ধারণ ও গঠনের অধিকার সমর্থন করবেন; এবং (গ) সাম্রাজ্যবাদ, ঔপনিবেশিকতাবাদ বা বর্ণবৈষম্যবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বের সর্বত্র নিপীড়িত জনগণের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামকে সমর্থন করবেন।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই বিসিসি পরশুদিন সংবাদ দিয়েছে যে, বাংলাদেশ সৌদি আরবের সাথে একটি প্রতিরক্ষা সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করার কথা বলেছিল। এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটাই করেনি। ওই সমঝোতা চুক্তির আওতায় ইয়েমেন সীমান্তে এক হাজার এক শ’ বাংলাদেশী সেনা নিয়োগ দেয়ার কথা। সৌদি আরবে ইসলামিক মিলিশিয়ান কাউন্টার টেরোরিজম কোয়ালিশন বাংলাদেশ থেকে একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারলসহ পাঁচজন কর্মকর্তাকে নিয়োগের জন্য নামও দেয়া হয়েছে বলে খবরে প্রকাশ।

মেনন বলেন, ২০১৫ সালে যখন সৌদি নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসবিরোধী উদ্যোগে বাংলাদেশ নাম লিখেছিল তখনই আমরা বলেছিলাম বিষয়টি আমাদের জন্য কতটা ইতিবাচক হবে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ জরুরি। খটকা ছিল তখনই এবং সেই সময় সৌদি আরব যেটাকে ৩৪ জাতির সামরিক জোট বলেছিল আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেটাকে ইনিয়ে বিনিয়ে বলেছিল এটা হচ্ছে একটি সন্ত্রাসবিরোধী সমন্বিত উদ্যোগ। সেই সময় জনগণের উদ্বেগ এবং আশঙ্কাকে নিরসন করে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেছিলেন, সৌদি আরবে যে দু’টি মসজিদ রয়েছে অর্থাৎ মক্কা ও মদিনায় এই দু’টি যদি আক্রমণের মুখে পড়ে তখনই কেবল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পাঠাবে। এর বাইরে কখনো বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পাঠাবে না। আমরা আশ্বস্ত হয়েছিলাম। এখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যদিও স্পষ্ট করে কিছু বলছে না। কিন্তু আমরা জেনেছি ইতোমধ্যেই এই চুক্তি স্বাক্ষরের পর্যায়ে। এর মধ্য দিয়ে আমাদের সংবিধানের ২৫ বিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে কি না সেটা পরিষ্কার করা প্রয়োজন। বাংলাদেশে সংবিধানে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখতে বলেছে। এই দিক দিয়ে বিদেশনীতি পরিষ্কার দাবি রাখে। প্রথমটি হচ্ছে। এই সেনাবাহিনী মোতায়েন সেটা জাতিসঙ্ঘের সিদ্ধান্তের সাথে সম্পর্কিত কি না, সঙ্গতিপূর্ণ কি না। দ্বিতীয়ত, আমাদের সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে আমাদের রাজনৈতিক ভাবমূর্তি কী হবে? আমরা জানি ইয়েমেনে সৌদি আরবের নেতৃত্বে যে কোয়ালিশন এবং যুক্তরাষ্ট্র মিলে সেখানে প্রতি মুহূর্তে আক্রমণ চালাচ্ছে। সেখানে হুতি বিদ্রোহীদের দমন করার জন্য।

আমরা জানি, আরব বসন্তের বিকৃত রূপ ঘটিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেখানে কী পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল। জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব স্পষ্ট করে বলেছেন, ইয়েমেনের ঘটনা হচ্ছে এখন পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানবিক বিপর্যয়। সেখানে আমাদের সেনাবাহিনী উপস্থিত হয়ে সীমান্তে মাইন অপসারণ করবেন কার জন্য? কার জন্য আমাদের সেনাবাহিনী যারা এ কয়দিন কুয়েতে মাইন অপসারণ করে সুনাম কুড়িয়েছিল ইরাকি আগ্রাসনের জন্য। তারা কেন আজ যেন মাইন অপসারণের নামে সেখানে জীবন দেবে যা আমাদের সংবিধানে অনুমোদন করে না। কেবল তাই নয়, যখন ইয়েমেনের সীমান্তে আমাদের সেনাবাহিনী থাকবে খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি বিরোধপূর্ণ সম্পর্ক সেখানে সৃষ্টি হবে। এ বিষয়ে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো বিবৃতি আমরা পাইনি। আমি দাবি করি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে ৩০০ বিধিতে একটি বিবৃতি দেবেন এবং একই সাথে স্পিকার হিসেবে আপনি বিষয়টি সংবিধানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কি না এ বিষয়ে রুলিং আশা করছি।

এরপর ফ্লোর নিয়ে জাতীয় পার্টির ফখরুল ইসলাম বলেন, আমাদের সংসদ হচ্ছে আমাদের সব আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু যা আমরা সবসময় বলে থাকি। এখন সংসদ চলছে। আজকে টেলিভিশনে দেখলাম সৌদি আরবের সাথে একটা সামরিক চুক্তি হচ্ছে। তিনি সংবিধানের মূলনীতি ও অনুচ্ছেদের উল্লেখ করে বলেন, প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ, ক্ষমতার মালিক হলো জনগণ। সংসদ রাষ্ট্রের একটি সাংবিধানিক অঙ্গ। তিনি সংবিধানের ১৪৫ (ক)-এর উল্লেখ করে বলেন, এই যে চুক্তিটা, সংবিধানে বলা আছে যদি চুক্তিটা কোনো বৈদেশিক চুক্তি হয় আপনি এটা রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেবেন এবং রাষ্ট্রপতি সেটা সংসদে জমা দেবেন। আমার কথা সেখানে না। আমার কথা হলোÑ এটা আলোচনা করলে কী অসুবিধা ছিল। পররাষ্ট্রমন্ত্রী কালকেও এখানে ছিলেন। উনি জানতেন যে চুক্তিটা হবে। এটা আমাদের অধিকারকে ক্ষুণœ করে কি না, এটা আপনার কাছে আমার সাবমিশন। সংবিধানের যেগুলো বললাম এগুলোর সাথে, আমাদেরকে না জানিয়ে, সংসদকে পাশ কাটিয়ে, পার্লামেন্টকে মূল্যহীন ভেবে এই জিনিসগুলো সরকারের করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত হয়েছে যেখানে রাষ্ট্রের একটা প্রধান অঙ্গ হচ্ছে সংসদ।

আজকে যদি সংসদ অধিবেশন না চলত তাহলে হয়তো বলতে পারতেন। সুতরাং এই জিনিসগুলো আপনার বিবেচনার জন্য ছেড়ে দিলাম। আমরা দেখেছি, টিফা চুক্তিও দেখেছি কোনো চুক্তিই আজ পর্যন্ত বৈদেশিক চুক্তি আপনার কাছে জমা পড়েছে কি না, আমি জানি না। ২৫ বছরের চুক্তিও আপনার কাছে আছে কি না জানি না। সুতরাং এটা আরো পরিচ্ছন্ন হওয়া উচিত। সংসদের মানমর্যাদার জন্য আমাদের গণতন্ত্রের মূল্যায়নের জন্য, আমরা চাই গণতন্ত্র আস্তে আস্তে এগিয়ে যাক। গণতন্ত্র একটি রূপ লাভ করুক। পরে স্পিকার এসব বিষয়ে কোনো জবাব না দিয়ে পরবর্তী কর্মসূচিতে চলে যান। উৎস: নয়াদিগন্ত।

ad

পাঠকের মতামত