262681

সেই সৌদি ব্যবসায়ীর লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই নেয়ার অনুমতি

নিউজ ডেস্ক।। ময়নাতদন্ত ছাড়াই ময়মনসিংহের গৌরীপুরে সৌদিয়ান ব্যবসায়ী আবু নাছের আল দুসারীর (৪৫) লাশ নিজ দেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ। সৌদি দূতাবাসের মাধ্যমে আবেদন পাওয়ার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বুধবার ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দেশে নেয়ার অনুমতি দেয়। অনুমতির পর লাশ এখন সৌদি দূতাবাসের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। বৃহস্পতিবার সৌদি এয়ারলাইসের বিশেষ বিমানে লাশ সৌদি আরবে নিয়ে যাওয়া কথা রয়েছে। আবু নাছের একজন ভিসা ব্যবসায়ী।

মৃত আবু নাছেরের ভাই ছাদ সালেহের আবেদনের প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ দেশে নেয়ার অনুমতির আদেশ দেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের (বহির্গমন শাখা-১) যুগ্ম সচিব মো. মুনিম হাসান। পরে আনুষ্ঠানিকভাবে বুধবার সৌদি দূতাবাসের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। লাশ গ্রহণ করেন সৌদি দূতাবাসের সেক্রেটারি টু চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ইয়াসিন মো. আব্দুস শহীদ চৌধুরী। লাশ হস্তান্তর করেন গৌরীপুর থানার ওসি মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন। গৌরীপুর থানার উপপরিদর্শক বিপ্লব মহন্তের নেতৃত্বে ঢামেক হিমঘর থেকে পুলিশ লাশ সৌদি দূতাবাসে পৌঁছে দেয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ডৌহাখলা গ্রামের করম আলীর ছেলে আবু সাঈদ সানীর সঙ্গে প্রায় ২০ বছর আগে ঢাকায় পরিচয় হয় আবু নাছের আল দুসারীর। এ পরিচয়ের সূত্র ধরেই অবকাশযাপনের জন্য প্রায়শই তিনি গৌরীপুরে আসতেন। সানীর লালন আখড়ার নামে সেখানে চলত মদ-গাঁজা ও গান-বাজনার আসর। সৌদি নাগরিক সর্বশেষ এ দেশে আসেন ২০১৮ সালের ৯ ডিসেম্বর। সেদিন থেকেই সানীর বাড়িতে তিনি থাকতেন। বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় সানীর বাড়িতে আবু নাছেরের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে গৌরীপুর থানার ওসি আবদুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।

এদিকে মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, সৌদি নাগরিক আবু নাছের আল দুসারীর মৃত্যুর ৩-৪ বছর আগে তার বন্ধু লালন সাধক আবু সাইদ সানীকে (৩৮) তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুরের ডৌহাখলা ইউনিয়নের ডৌহাখলা গ্রামে জমি কিনে পাকা বাড়ি করে দেন। সানীর জীবিকা নির্বাহের জন্য ওই গ্রামে জমি কিনে মাছের ফিশারিও করে দেন ওই সৌদি নাগরিক। অপরদিকে বাড়ি নির্মাণের পর সৌদি নাগরিক আবু নাসের প্রায়ই ডৌহাখলা ওই গ্রামের বাড়িতে দীর্ঘদিনের জন্য বেড়াতে এসে প্রতিদিন রাতে বন্ধু সানীকে নিয়ে মদ-গাঁজার আসর বসাতেন।

গত ৭ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার রাতে সানীর ওই বাড়ি থেকে সৌদি নাগরিক আবু নাছেরের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে মাদক মামলায় সানীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর থেকে সানীর ওই বাড়িটি তালাবদ্ধ রয়েছে। এলাকাবাসী ও সানীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডৌহাখলা ইউনিয়নের ডৌহাখলা গ্রামের দরিদ্র কৃষক করম আলীর ছেলে আবু সাইদ সানী। অভাব-অনটনের সংসারে ২২ বছর আগে তিনি নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নের সময় বাড়ি ছেড়ে ঢাকা গিয়ে হোটেলে কাজ নেন। কয়েক বছর পর ঢাকার গুলশানের একটি হোটেলে ভিসা ব্যবসায়ী সৌদি নাগরিক আবু নাছেরের সঙ্গে তার পরিচয় হয়।

তারপর দুজনের মধ্যে গড়ে উঠে বন্ধুত্ব। এরপর সৌদি নাগরিকের টাকায় অভাবী সানীর ভাগ্য পরিবর্তন হতে থাকে। মদ-গাঁজার আসর বসিয়ে দুহাতে সৌদি নাগরিকের টাকা উড়াতে থাকেন সানী। সানীর বড় ভাই আব্দুর রাশিদ জানান, ‘সানী ও সৌদি নাগরিক দুজনেই প্রচুর পরিমাণে মদপান করতেন। প্রথমদিকে তারা দুজন ময়মনসিংহ শহরের বিভিন্ন নামিদামি হোটেলে মাসের পর মাস এক সঙ্গে থেকে মদপান করতেন। প্রতিদিন তারা হাজার হাজার টাকা দামের মদ ও বিয়ার পান করতেন। কিন্তু হোটেলে থাকা-খাওয়া বেশি টাকা খরচ হয় বলে চার বছর আগে সৌদি নাগরিক সানীকে জমি কিনে গ্রামে পাকা বাড়ি করে দেন। এরপর থেকে সৌদি নাগরিক এই বাড়িতে বেড়াতে এসে নিয়মিত সানীর সঙ্গে মদের আসর বসাতেন। প্রতিদিন কমপক্ষে তাদের ১০ হাজার টাকার মদ লাগত।’

সানীর বাবা করম আলী বলেন,’সানী নেশার জগতে ঢুকে পড়ার পর থেকে আমাদের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক ছিল না। গৌরীপুর থাকলে সানী প্রায়ই আমার বাড়িতে এসে টাকার জন্য উৎপাত করত। কয়েক দিন আগেও সে বাড়িতে এসে আমার ঘরে ভাঙচুর করেছে।’ গৌরীপুর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘সৌদি নাগরিক আবু নাছেরের লাশ রোববার সৌদি দূতাবাসের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তার মৃত্যুর ঘটনায় কথিত লালন সাধক সানীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে সানী পুলিশকে জানিয়েছেন, সৌদি নাগরিকের টাকায় তিনি জমি কিনে বাড়ি করেছেন। বাড়ি নির্মাণের পর থেকে সৌদি নাগরিক প্রায়ই তার বাড়িতে বেড়াতে এসে মদপান করতেন। উৎস: যুগান্তর।

ad

পাঠকের মতামত