261171

মা টাকার লোভে আরেকজনের সঙ্গে চলে যান, তাই জান্নাতুলের ঘর ইজি বাইকই

নিউজ ডেস্ক।। ‘আমি চাঁদকে বলি তুমি ছুন্দর না, আমার মায়ের মতো। গোলাপকে বলি, তুমি মিষ্টি না, আমার মায়ের মতো…’—এ গান বেদনা নিয়ে ঝরে পড়ে ছয় বছরের ফুটফুটে শিশু জান্নাতুল মাওয়ার কণ্ঠে। জান্নাতুল আর দশটা সাধারণ শিশুর মতো নয়। তার জীবন বিচিত্র। মা থেকেও নেই তার। আড়াই বছর বয়স থেকে বাবাই তার মা-বাবা। আনন্দ-বেদনা, মান-অভিমান সব ভাগাভাগি তার বাবার সঙ্গে। অন্য শিশুদের এ সময়টা খেলাধুলায় আর বর্ণ পরিচয়ে কাটলেও তার দিনের বেশির ভাগ সময় কাটে রাস্তায়। বাবা ব্যাটারিচালিত ইজি বাইকচালক। নিরাপদে দেখে রাখার মতো কেউ না থাকায় ইজি বাইকে বাবার সঙ্গেই দিন কাটে জান্নাতুল মাওয়ার। প্রতিদিনের তিন বেলা খাওয়া হোটেলে। আর রাতের ঘুম বাবার সঙ্গে ইজি বাইক চার্জ দেওয়ার গ্যারেজের কোণে। গোসলসহ প্রাকৃতিক কাজ গ্যারেজ মালিকের বাড়িতে।

জান্নাতুল মাওয়ার জন্মের আড়াই বছর পর তাকে ফেলে চলে যান তার গর্ভধারিণী। বেশি বিত্ত-বৈভবের লোভে তার বাবার হাত ছেড়ে মরিয়ম ধরেন অন্যের হাত। সেই থেকে বাবার সঙ্গে ইজি বাইকে ঘুরে বড় হচ্ছে সে, যা তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশের অন্তরায়। গত শুক্রবার সকালে যশোর শহরের শংকরপুর চাতাল মোড়ে গ্যারেজে কথা হয় তাদের সঙ্গে। তার বাবার সঙ্গে কথা বলার সময় পাশে বসে আপন মনে ওই গানটি গাইছিল জান্নাতুল। তবে গান গাইলেও মায়ের কাছে যেতে চায় না সে।

জান্নাতুল মাওয়ার বাবা মুরাদুর রহমান জানান, তাঁর পারিবারিক অবস্থা একেবারে খারাপ ছিল না। প্রেম করে মাওয়ার মাকে বিয়ে করেন তিনি প্রায় ৯ বছর আগে। পরিবারের অমতে বিয়ে করায় পৈতৃক বাড়ি ছাড়তে হয় মুরাদুর রহমানকে। তখন তিনি পোশাকে কারচুপির কাজ করতেন। পরে কারচুপির কাজের চাহিদা কমে যাওয়ায় অর্থনৈতিক সংকটে পড়েন মুরাদুর। তখন মাওয়ার বয়স আড়াই বছর। তিনি খাতা, কলম, ব্রাশ কম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি পদে চাকরি নেন। এ সময় তার মা টাকার লোভে আরেকজনের সঙ্গে চলে যান। কাজে গেলে শিশুটিকে দেখাশোনা করার জন্য কেউ ছিল না মুরাদুরের। আবার বাচ্চা নিয়ে কাজে গেলে ব্রাশ কম্পানির লোক বিরক্ত হতো। এ কারণে সেই কাজ ছেড়ে তিনি এখন ইজি বাইক চালান। আর বাধ্য হয়ে সঙ্গে রাখেন আদরের সন্তানকে।

মুরাদুর বলেন, ‘এমন পরিবেশে তো মেয়েকে রাখতে চাই না। বাচ্চাটির ঠাণ্ডা লাগে, কাশি হয়। কিন্তু কী করব? উপায় নেই। তাই বাধ্য হয়েই কলিজার টুকরোটাকে সারাক্ষণ সঙ্গেই রাখি।’ শিশুটির ভবিষ্যৎ চিন্তা করে আর দ্বিতীয় বিয়ের কথাও ভাবেন না মুরাদুর। এদিকে দিনে দিনে বড় হচ্ছে শিশুটি। এখন মুরাদুরের চিন্তা কিভাবে শিশুটিকে তার ভালোভাবে বেড়ে ওঠার নির্মল পরিবেশ দেবেন! গ্যারেজ মালিক শামিমুর রহমান বলেন, ‘বাপ-মেয়ের এমন কষ্টের জীবন দেখে আমার খারাপ লাগত। তাই দুজনকে আমার গ্যারেজে থাকতে দিয়েছি।’ তবে এভাবে চলতে থাকলে শিশুটির স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে বলে জানিয়েছেন যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের চিকিৎসক আবুল কালাম আজাদ লিটু। উৎস: কালের কণ্ঠ।

ad

পাঠকের মতামত