247142

অর্থ মন্ত্রণালয় হারালো সিলেট ২৮ বছর পর

নিউজ ডেস্ক।। বাংলাদেশের ১১তম অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন বর্তমান পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিানার নেতৃত্বে গঠিত নতুন মন্ত্রিসভায় অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছেন। তবে অবাক করার বিষয় হলো গত ২৮ বছর ধরে অর্থমন্ত্রী যারাই ছিলেন, তারা সবাই ছিলেন সিলেট অঞ্চলের বাসিন্দা। ১৯৯০ সালে দেশে গণতন্ত্র ফেরার পর ‘অর্থ মন্ত্রণালয় মানেই সিলেট’ এমন একটি ধারণা তৈরি হয়েছিল সব মহলে। ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়ার সরকারে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পান এম সাইফুর রহমান। টানা পাঁচ বছর ওই দায়িত্বে ছিলেন তিনি। সাইফুর ১৯৮০ সালে প্রথম অর্থমন্ত্রী হন, সেটাই ‘সিলেটী’ কারও প্রথম অর্থমন্ত্রী হওয়া। জিয়াউর রহমানের সরকারে দুই বছর ওই দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

সাইফুর রহমানের পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে অর্থমন্ত্রী হন শাহ এ এম এস কিবরিয়া। তার বাড়ি হবিগঞ্জ বৃহত্তর সিলেটের অন্তর্ভুক্ত। শেখ হাসিনার সরকারে পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনকারী কিবরিয়া বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে গ্রেনেড হামলায় নিহত হন। তার ছেলে রেজা কিবরিয়া এবার সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জোটের প্রার্থী হয়েছিলেন। ২০০১ সালে খালেদা জিয়া আবার প্রধানমন্ত্রী হলে সাইফুর রহমানকে পুনরায় অর্থমন্ত্রী করেন। পুরো মেয়াদ সেই দায়িত্বে ছিলেন তিনি। দশককাল পরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন তিনি।

জরুরি অবস্থা পেরিয়ে ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর শেখ হাসিনা সরকার গঠনের সময় অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়ার জন্য বেছে নেন আরেক ‘সিলেটী’ আবুল মাল আবদুল মুহিতকে।মুহিত তার আগেও অর্থমন্ত্রী হয়েছিলেন এইচ এম এরশাদের সামরিক সরকারে ১৯৮২ সালে। ওই সরকারে থেকে দুটি বাজেট দিয়েছিলেন তিনি। ২০০৯ সালে শপথ নেওয়ার পর একটানা দুই মেয়াদে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনের পর এবার অবসরে যাওয়ার কথা আগেই জানিয়েছিলেন মুহিত। তিনি এবার নির্বাচনও করেননি। তার আসন সিলেট-১ এ এবার এমপি নির্বাচিত হয়েই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাচ্ছেন ভাই এ কে এ মোমেন।

মুহিত অর্থমন্ত্রী হিসেবে ১২ বার জাতীয় বাজেট দিয়েছেন। তার সমান বাজেট দিয়েছেন সাইফুর রহমানও। এবার অর্থমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে যাওয়া মুস্তফা কামাল গত পাঁচ বছর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সামলে আসছেন। রাজনীতিক পরিচয়ের বাইরে ক্রীড়া সংগঠক হিসেবেও পরিচিত তিনি। তিনি ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। ২০১৪ সালে তিনি আইসিসির সভাপতিও নির্বাচিত হন। মুস্তফা কামাল অর্থমন্ত্রী হওয়ায় তার স্থান পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আবার এসেছেন একজন ‘সিলেটী’, তিনি হলেন আবদুল মান্নান। গত পাঁচ বছর অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা মান্নান এবার পূর্ণ মন্ত্রী হচ্ছেন।

এদিকে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে দেশ স্বাধীন হয়। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফিরে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করেন। সে মন্ত্রিসভায় বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত প্রিয়ভাজন তাজউদ্দীন আহমদকে দেশের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব অর্পন করেন। তাজউদ্দিন আহমেদ ছিলেন দেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী। তিনি ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনকের হত্যাকাণ্ডের পর ড. আজিজুর রহমান অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এরপর প্রধান সামরিক প্রশাসক লে. জেনারেল জিয়াউর রহমান, ড. এম এন হুদা, এম সাইফুর রহমান, এএমএ মুহিত, এম সায়েদুজ্জামান, মেজর জেনারেল (অব.) মুনিম, ড. ওয়াহিদুল হক, এসএএমএস কিবরিয়া, মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭২-১৯৭৩ তাজউদ্দীন আহমদ ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট দেন, ১৯৭৩-১৯৭৪ তাজউদ্দীন আহমদ ৯৯৫ কোটি টাকা, ১৯৭৪-১৯৭৫ তাজউদ্দীন আহমদ ১০৮৪.৩৭ কোটি টাকা, ১৯৭৫-১৯৭৬ ড. আজিজুর রহমান ১৫৪৯.১৯ কোটি টাকা, ১৯৭৬-১৯৭৭ জিয়াউর রহমান ১৯৮৯.৮৭ কোটি টাকা, ১৯৭৭-১৯৭৮ জিয়াউর রহমান ২১৮৪ কোটি টাকা, ১৯৭৮-১৯৭৯, রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ২৪৯৯ কোটি টাকা, ১৯৭৯-১৯৮০ ড. এম এন হুদা ৩৩১৭ কোটি টাকার বাজেট দেন। এছাড়া ১৯৮০-১৯৮১ এম সাইফুর রহমান ৪১০৮ কোটি টাকা, ১৯৮১-১৯৮২ এম সাইফুর রহমান ৪৬৭৭ কোটি টাকার বাজেট দেন। ১৯৮২ সালে এইচএম এরশাদ ক্ষমতা গ্রহণ করেন। এ সময় ১৯৮২-১৯৮৩ এএমএ মুহিত ৪৭৩৮ কোটি টাকা, ১৯৮৩-১৯৮৪ এএমএ মুহিত ৫৮৯৬ কোটি টাকার বাজেট দেন।

এমএমএ মুহিত অর্থমন্ত্রী থেকে সরে দাঁড়ালে এম সায়েদুজ্জামান ১৯৮৪-১৯৮৫ অর্থবছর ৬৬৯৯ কোটি টাকা, ১৯৮৫-১৯৮৬ অর্থবছর ৭১৩৮ কোটি টাকা, ১৯৮৬-১৯৮৭ অর্থবছর ৮৫০৪ কোটি টাকা এবং ১৯৮৭-১৯৮৮ ৮৫২৭ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেন। ১৯৮৮-১৯৮৯ অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান মেজর জেনারেল (অব.) মুনিম। তিনি ১০,৫৬৫ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেন। ১৯৮৯-১৯৯০ অর্থবছর অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন ড. ওয়াহিদুল হক। তিনি ১২,৭০৩ কোটি টাকার বাজেট দেন। ১৯৯০-১৯৯১ আবার অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পান মেজর জেনারেল (অব.) মুনিম। তিনি ওই অর্থবছর ১২,৯৬০ কোটি টাকার বাজেট প্রণয়ন করেন।

ব্যাপক গণআন্দোলনের মুখে এরশাদ পদত্যাগে বাধ্য হলে তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বিএনপি সরকার গঠন করে। এ সময় এম সাইফুর রহমান দ্বিতীয় মেয়াদে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তিনি পরপর পাঁচটি বাজেট দেন। এর মধ্যে ১৯৯১-১৯৯২ অর্থবছর ১৫,৫৮৪ কোটি টাকা, ১৯৯২-১৯৯৩ অর্থবছর ১৭,৬০৭ কোটি টাকা, ১৯৯৩-১৯৯৪ অর্থবছর ১৯,০৫০ কোটি টাকা, ১৯৯৪-১৯৯৫ অর্থবছর ২০৯৪৮ কোটি টাকা এবং ১৯৯৫-১৯৯৬ অর্থবছর ২৩,১৭০ কোটি টাকা। ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নের্তৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। এ সময় অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পান এসএএমএস কিবরিয়া। তিনি ১৯৯৬-১৯৯৭ অর্থবছর ২৪,৬০৩ কোটি টাকা, ১৯৯৭-১৯৯৮ অর্থবছর ২৭,৭৮৬ কোটি টাকা, ১৯৯৮-১৯৯৯ অর্থবছর ২৯,৫৩৭ কোটি টাকা, ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছর ৩৪,২৫২ কোটি টাকা, ২০০০-২০০১ অর্থবছর ৩৮,৫২৪ কোটি টাকা এবং ২০০১-২০০২ অর্থবছর ৪২৩০৬ কোটি টাকার বাজেট দেন।

২০০১ সালের নির্বাচনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সরকার গঠন করে এবং এম সাইফুর রহমান তৃতীয় মেয়াদে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তিনি ২০০২-২০০৩ অর্থবছর ৪৪,৮৫৪ কোটি টাকা, ২০০৩-২০০৪ অর্থবছর ৫১,৯৮০ কোটি টাকা, ২০০৪-২০০৫ অর্থবছর ৫৭,২৪৮ কোটি টাকা, ২০০৫-২০০৬ অর্থবছর ৬১,০৫৮ কোটি টাকা, ২০০৬-২০০৭ অর্থবছর ৬৯,৭৪০ কোটি টাকার বাজেট দেন। তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান কে হবেন এ নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে তীব্র আন্দোলনের এক পর্যায়ে সেনা সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। সে সরকারের অর্থ উপদেষ্টার দায়িত্ব পান মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি পরপর দুটি বাজেট দেন। তিনি ২০০৭-২০০৮ অর্থবছর ৮৭,১৩৭ কোটি টাকার এবং ২০০৮-২০০৯ মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ৯৯৯৬২ কোটি টাকার বাজেট দেন।

২০০৮ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে অর্থমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পান। তিনি ২০০৯-২০১০ অর্থবছর ১১৩,৮১৫ কোটি টাকা, ২০১০-২০১১ অর্থবছর ১৩২,১৭০ কোটি টাকা, ২০১১-২০১২ অর্থবছর ১৬৫,০০০ কোটি টাকা, ২০১২-২০১৩ অর্থবছর ১৯১,৭৩৮ কোটি টাকা, ২০১৩-২০১৪ অর্থবছর ২ লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকার বাজেট দেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা লাভ করে। এ সময়ও অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পান আবুল মাল আবদুল মুহিত। ২০১৪-২০১৫ অর্থবছর ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছর ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছর ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছর ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছর ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট দিয়ে এক অনন্য রেকর্ড গড়েন।

ad

পাঠকের মতামত