193156

দাখিল পাশ করেছেন ১০ বছরে , ১৬ বছর বয়সে হয়েছেন শিক্ষক

মাত্র ১০ বছর বয়সে এসএসসি সমমানের দাখিল পাস। আর ১৬ বছর বয়সেই শিক্ষক হিসাবে চাকরি নেয়ার চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে সিলেটের বিয়ানীবাজারের মাদরাসার এক অধ্যক্ষের। এ নিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিয়ানীবাজার উপজেলার মাথিউরা ফাজিল মাদরাসার বর্তমান অধ্যক্ষ হিসাবে আছেন মাওলানা আব্দুল আলিম। দাখিলের (এসএসসি সমমান) সনদপত্র অনুযায়ী তিনি ১ মার্চ ১৯৬৯ সনে জন্মগ্রহণ করেন। আর দাখিল (এসএসসি সমমান) পরীক্ষায় পাশ করেন ১৯৭৯ সালে। এ হিসেবে জন্মের পরপরই তিনি লেখাপড়া শুরু করেছেন। আর ১৬ বছর বয়সেই তিনি শিক্ষকতা শুরু করেন।

১৯৮১ সালে তিনি আলিম (এইচএসসি সমমান), ১৯৮৩ সালে ফাজিল (স্নাতক) ও ১৯৮৫ সালে কামিল (এমএ) পাশ করে ফেলেন। অর্থাৎ মাওলানা আব্দুল আলিম ১০ বছর বয়সে দাখিল, ১২ বছরে আলিম, ১৪ বছরে ফাজিল এবং ১৬ বছর বয়সে তিনি কামিল পাশ করেন। এমন তথ্য বেরিয়ে আসে মাদরাসায় চাকরি নিতে দেয়া জীবনবৃত্তান্ত থেকে।

কামিল (এমএ) পরীক্ষা সাধারণ বছরের মাঝামাঝি সময়ে হয়ে থাকে। ফলাফল বের হতেও কয়েক মাস লাগে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। মাওলানা আব্দুল আলিম ১৯৮৫ সালে কামিল (এমএ) পাস করেন, ওই বছরের ১ মার্চ সহকারী সুপার পদে অভিজ্ঞতা দেখিয়ে জকিগঞ্জ সুনাপুর মাজহারুল উলুম দাখিল মাদরাসায় যোগদান করে শিক্ষকতা শুরু করেন।

সূত্র জানায়, এই পদে যোগ্যতা লাগে কামিল পাস এবং অভিজ্ঞতা লাগে সহকারী মৌলভী হিসেবে ৫ বছর। কিন্তু যে বছর কামিল পরীক্ষা দিয়েছেন, ওই বময়েই তিনি সহ-সুপার পদে ছিলেন। ফলে তার কামিল পরীক্ষা পাশের সনদ নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। উপাধ্যক্ষ হতে গিয়ে অভিজ্ঞায় এমনটি দেখাতে গিয়ে দেখাতে গিয়ে অনেকটা বিপাকে পড়েছেন অধ্যক্ষ আব্দুল আলিম। আর উপাধ্যক্ষ পদে এই অভিজ্ঞতা প্রযোজ্য ছিল না। মূলত উপাধ্যক্ষ হতে বিধি মোতাবেক তখন তার কোনো অভিজ্ঞতাই ছিল না।

জনবল কাঠামো আইন অনুসারে, ১৯৯৫ সনের ২৪ অক্টোবর হওয়া জনবল কাঠামোআইনে ফাযিল-কামিল মাদরাসায় প্রভাষক পদে ৬ বছরের অভিজ্ঞতা অথবা আলিম মাদরাসায় অধ্যক্ষ পদে ৮ বছরের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। কিন্তু তিনি দাখিল মাদ্রাসায় সহসুপারের অভিজ্ঞতা নিয়ে উপাধ্যক্ষ হিসেবে ১৯৯৮ সালের পহেলা এপ্রিল থেকে মাথিউরা ফাজিল মাদরাসায় বিধি-বহির্ভূতভাবে তিনি যোগদান করেন এমন অভিযোগ খোদ তার সহকর্মীদের।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুসারে, অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ লাভ করতে হলে- শূন্য পদের বিপরীতে জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, নিয়োগ বোর্ড গঠনসহ বিধি মোতাবেক সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হতে হবে। যার কোনোটিই তার বেলায় হয়নি।

আক্ষরিক অর্থে আব্দুল আলিমের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ বিধিসম্মত না হওয়ায় মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর তাকে পে-কোড ০৪ অনুসারে বেতন ভাতা প্রদান করেনি। বর্তমানে তিনি অধ্যক্ষের পদ ব্যবহার করলেও অধ্যক্ষের পে-কোড-৪ অনুযায়ী বেতন-ভাতা পান না। বরং উপাধ্যক্ষের পে-কোড-৫ অনুসারে বেতন পাচ্ছেন। একই কোডে বেতন পান মাদ্রাসার আরেক উপাধ্যক্ষ মাওলানা মোঃ ছালিক আহমদ।

মাদরাসার রেকর্ড পার্যালোচনা করে দেখা গেছে, সাবেক অধ্যক্ষ খলিলুর রহমানের মৃত্যুর পর ২০০৫ সালের ২৭ মার্চ থেকে মাওলানা আব্দুল আলিম ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালের ৪ জুন পর্যন্ত উপাধ্যক্ষ পদে এরপর ৫ জুন থেকে “স্ব-ঘোষিত” অধ্যক্ষ পদে কর্মরত আছেন। অধ্যক্ষ হিসেবে মাদরাসার অনার বোর্ডের তালিকায়ও টানিয়ে রেখেছেন নিজের নাম।

এ ব্যাপারে মাওলানা আব্দুল আলিম বলেন, বিষয়টি নিয়ে রিপোর্ট না করে, সরাসরি দেখা করতে অনুরোধ করেন।

মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আতাউর রহমান বলেন, এ বিষয় সম্পর্কে আমার কিছুই জানা নেই। কেউ যদি লিখিত অভিযোগ করে, সে মোতাবেক তদন্ত করে দেখা হবে।

উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সিলেটের উপ-পরিচালক জাহাঙ্গির কবীর আহমদ বলেন, মাত্র ১০ বছর বয়সে কেউ দাখিল পাশ করতে পারে না। নিয়মিত হলে নূন্যতম বয়স ১৪/১৫ বয়সে গিয়ে দাখিল (এসএসসি সমমান) পাস করতে পারে। তিনি বলেন, অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ ও অভিজ্ঞতা সনদে জালিয়াতি হয়েছে কিনা খতিয়ে দেখা হবে। উৎস: নয়াদিগন্ত।

ad

পাঠকের মতামত