192900

এরশাদের অফিস থেকে জাপা নেতা নুরুকে কৌশলে গ্রেফতার

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান, সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ প্রায় সবাই বনানীর কার্যালয়ে দলীয় কাজে ব্যস্ত। সেখানে সবার সাথে ছিলেন দলটির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান নরুল ইসলাম নুরুও।

দুপুর ২টা। বনানী থানা পুলিশের কয়েকজন সদস্য পরিচয় লুকিয়ে সিভিল পোশাকে ঢুকে পড়েন এরশাদের দলীয় কার্যালয়ে। সেখান থেকে কথার ছলে সামনের দোকানে চা খাওয়ার আমন্ত্রণ জানান পুলিশ সদস্যরা। কিছু বুঝতে না পেরে চায়ের আমন্ত্রণে এগিয়ে যান নুরুও। দোকানের সামনে আসা মাত্রই পুলিশ তাদের পরিচয় প্রকাশ করে এবং গ্রেফতার করে বনানী থানায় নিয়ে আসে নুরুল ইসলাম নুরুকে।বিকালেই তাকে দ্রুত আদালতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

বনানী থানা সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজারের স্থানীয় সাংবাদিক এম এ মুহিতের করা একটি মামলায় গ্রেফতার হন নুরু। এম এ মুহিত সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা পাওয়ার দাবিতে মৌলভীবাজার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গত সেপ্টেম্বরে মামলাটি দায়ের করেছিলেন। মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা বনানী থানায় আসায় পুলিশ নুরুকে গ্রেফতারের উদ্যোগ নেয়।

নুরুকে এরশাদের নিজস্ব কার্যালয় থেকে গ্রেফতার করার জন্য পুলিশকে বাড়তি কৌশল নিতে হয় বলে জানা গেছে।

এম এ মুহিত পরিবর্তন ডটকমকে টেলিফোনে বলেন, প্রায় চার বছর আগে নুরু যমুনা ইলেকট্রনিক্স-এর ডিলারশিপ দেওয়ার কথা বলে সাড়ে ৫ লাখ টাকা নিয়েছিলেন। ওই টাকা ফেরত না দিয়ে উল্টো নানান সময় নানানভাবে হুমকি দিতেন।

মুহিত বলেন, তার সাথে কথা বললে মনে হতো যেনো সারা ঢাকা শহরই তার।

বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরমান আলী পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, তিনি (নুরু) জাতীয় পার্টি করেন বলে শুনেছি। গ্রেফতারের পর তাকে আদালতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে এরশাদের জাতীয় পার্টির নেতারাও পড়েছেন অস্বস্তিতে। জাতীয় পার্টির কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নুরু একজন চিহ্নিত প্রতারক। ইতোমধ্যে এরশাদের মালিকানাধীন ইউনিয়ন ব্যাংকে চাকরি দেওয়ার নাম করে টাঙ্গাইলের সখিপুরের ফরমান আলী মাস্টারের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা নিয়ে প্রতারণা করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন ফরমান আল। এই অভিযোগ লিখিতভাবে এরশাদ ও রুহুল আমিন হাওলাদারের কাছেও দিয়েছেন তিনি।

টঙ্গীর মামুন নামে একজনের কাছ থেকে ব্যাংকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে প্রায় ২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে নুরুর বিরুদ্ধে। এছাড়াও টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের নৌহাটিবাজারের বারেক মল্লিকের কাছ থেকে চাকরি দেওয়ার নাম করে ৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা নেওয়াসহ অসংখ্য অভিযোগ উঠেছে জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান নুরুর বিরুদ্ধে।

জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ্র রায় বলেন, তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না।

যোগাযোগ করলে মৌলভীবাজার জেলা জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক মো কাইয়ুম পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, নুরু আমাদের লজ্জা রাখার আর জায়গা রাখেননি। এমন কাজ কোনো মানুষ করতে পারে না। তিনি বলেন, নুরু তো জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান দুরের কথা, দলের সদস্য হওয়ার যোগ্যও না।

একইভাবে জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান জহির আহমদ বলেন, নুরুর প্রতারণা কোন পর্যায়ের তা কল্পনারও বাইরে। তিনি কিভাবে এতোদিন এসব চালিয়ে যাচ্ছেন তা কেউ জানে না।

জাতীয় পার্টির একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দলেই প্রেসিডিয়ামসহ বেশ কয়েকজন অসাধু নেতার স্বার্থে তাদের সমর্থনে এই প্রতারক জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আশপাশে থাকার সুযোগ পাচ্ছেন।

উৎসঃ পরিবর্তন

ad

পাঠকের মতামত