192597

চূড়ান্ত চুক্তি সই: প্রতিদিন ৩০০ রোহিঙ্গা ফেরত নেবে মিয়ানমার

বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের রাখাইনে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ নামের মাঠ পর্যায়ের চুক্তিটি সই হয়েছে।

চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিদিন ৩০০ জন রোহিঙ্গাকে ফেরত নেবে মিয়ানমার। সপ্তাহে ১৫০০ রোহিঙ্গা ফেরত যাবেন। তিনমাস পর এই সংখ্যা পুনরায় পর্যালোচনা করে বাড়ানো হবে।

সোমবার সকালে এ নিয়ে মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে বৈঠকটি হয়। নেপিডোতে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বাংলাদেশের পক্ষে এবং মিয়ানমারের পক্ষে দেশটির পার্মামেন্ট সেক্রেটারি মিন্ট থো বৈঠকে নেতৃত্ব দেন। টানা ১৩ ঘণ্টার বৈঠকের পর মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) সকালে আবার বৈঠক হয়। উক্ত বৈঠকেই চুক্তিটি চূড়ান্ত হয়। চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার ফলে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য সরকারি পর্যায়ের কাজটি সম্পন্ন হলো।

আজকের বৈঠক সম্পর্কে পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য আমরা সফলভাবে ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট চূড়ান্ত করে ফেলেছি। সেই সঙ্গে যেসব রোহিঙ্গা ফেরত যাবেন, তাঁদের জন্য একটি ফরমের রূপও চূড়ান্ত করা হয়েছে।

পররাষ্ট্রসচিব আরও বলেন, ওই চুক্তিতে প্রত্যাবাসনের সংখ্যাসহ অন্য যেসব বিষয় আছে, সেগুলোর উল্লেখ আছে। বিশেষ করে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার ভূমিকার বিষয়টি এখানে যুক্ত করা হয়েছে। এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, প্রত্যাবাসনের পর রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জীবন-জীবিকার বিষয় নিশ্চিত করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত আছে।

শহীদুল হক বলেন, সামগ্রিকভাবে দুই পক্ষের আলোচনার পর একটি ভারসাম্যপূর্ণ চুক্তি হয়েছে। এখন দুই পক্ষ যদি আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে, তবে টেকসই উপায়ে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের কাজ শুরু করা যাবে বলে আশা করা যায়।

জানা যায়, চুক্তি অনুযায়ী প্রত্যাবাসন দুই বছরের মধ্যে সম্পন্ন করার মধ্যবর্তী সময়ে এ প্রক্রিয়ার অগ্রগতির বিষয়টি পর্যালোচনা করা হবে বিভিন্ন সময়। প্রত্যাবাসন যাতে দ্রুত শেষ করা যায় সে জন্য বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার সীমান্তের জিরো পয়েন্টে থাকা রোহিঙ্গাদের দিয়েই এ কাজ শুরু করতে দুই দেশ রাজি হয়।

বৈঠক সূত্র জানায়, প্রতি সপ্তাহে ১৫ হাজার করে রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছিল বাংলাদেশ। অপরদিকে মিয়ানমারের প্রস্তাব ছিল শনি ও রবিবার বাদ দিয়ে সপ্তাহে ১৫০০ করে রোহিঙ্গাকে ফেরত নেওয়া। বৈঠকে দুটি প্রস্তাবের মধ্যবর্তী একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। সেই প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৫০০ করে রোহিঙ্গা ফেরত পাঠানো হতে পারে।

আগামী ২৩ জানুয়ারি থেকে রোহিঙ্গাদের আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের বিষয়ে গত ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম বৈঠকে এক লাখ রোহিঙ্গার প্রাথমিক তালিকা নেপিডোর কাছে হস্তান্তর করার কথা রয়েছে ঢাকার।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত সাড়ে ছয় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। এর আগে থেকেই বাংলাদেশে অবস্থান করছিল আরও প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা। সবমিলিয়ে এখানে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখের বেশি। গত ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে নিবন্ধন করা হয়েছে।

ad

পাঠকের মতামত