192680

আমি প্রবাস থেকে জিন্দা লাশ বলছি ……

আমি প্রবাস থেকে জিন্দা লাশ বলছি …… মা, মাগো ও,,,,,,,মা এই দেখো মা, আমি তোমার ছেলে রানা বিদেশ থেকে এসেছি। দেখোনা মা কত্তো বড় লাগেস এনেছি।

অন্যরা যখন বিদেশ থেকে আসে তখন মা বাবা ভাই বোন বউ ছেলে মেয়ে এবং কি সবাই খুব আনন্দে মেতে উঠে। আমি না হয় সেই আনন্দ টুকু তোমাদের দিতে পারি নাই। কারণ আমার লাগেজ খোলার সাথে সাথে তোমাদের দু নয়নে অঝোর ধারায় শুধু কান্না আসবে।

আসাটাই স্বাভাবিক, কারন আমি যে লাশ হয়ে ফিরেছি মা। মা ,ও মা … তুমি কেঁদো না মা, লাশ হলে ও আমিতো তোমারই বুকে এসেছি। মা ,আমাকে দোয়া করো আমি যেন ওপাড়ে ও অন্ধকার কবরে গিয়ে সুখি হতে পারি মা …

প্রবাসীদের দিকে সরকার দৃষ্টি দাও !!!! বিদেশের মাটিতে বছরের পর বছর, মাসের পর মাস কঠোর পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করে থাকে প্রবাসী বাংলাদেশী ভাই ও বোনেরা।

আর প্রবাসীরা তাদের কষ্টের রেমিটেন্স বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছেন, কিন্তু সেই প্রবাসীদের মধ্যে কোন ভাই অথবা বোন যখন বিদেশের মাটিতে মারা যায় তখন সেই লাশ বিদেশের কোন না কোন হাসপাতালের মর্গে অবহেলায় পড়ে থাকে দিনের পর দিন ও মাসের পর মাস।

যেন বিদেশে মরেও শান্তি নেই প্রবাসীদের !মরবার পর প্রবাসীর লাশ হয়ে উঠে ভোগান্তি অপর না আর পরিবারের কাছে উৎকণ্ঠা আহাজারি !!

বিদেশের মাটিতে একজন প্রবাসীর লাশ দেশে ফেরত আনতে বিমান খরচের টাকা, প্রবাসী কর্মী হিসেবে সংশ্লিষ্ট দেশ ও দূতাবাসের কাগজপত্র ও এক গাদা নিয়ম কানুন শেষ করে লাশ দেশে আসতে পেরিয়ে যায় অনেক টা সময়। নিজ দেশের পরিবার পরিজনদের কাছে ততক্ষণে ওই মৃত্যু সংবাদ হয়তো অনুভূতি শূন্য একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।

কোন কোন ক্ষেত্রে হয়তো প্রবাসীদের মৃত্যু সংবাদ ৭/৮ দিন এমনকি মাসখানেক পরে এসে পৌছায় দেশের আত্মীয়-স্বজনদের কাছে। আবার কখনো কখনো বিদেশের মাটিতে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন হয়ে যায় হতভাগ্য প্রবাসীর ।

একজন প্রবাসী বিদেশে জীবিত থাকা কালীন মা বাব এবং স্ত্রী সন্তান ছেড়ে বিদেশে থেকে কর্ষ্টাজিত রেমিটেন্স দেশে পাঠান তারা। বিভিন্ন দেশের প্রবাসীদের অভিযোগ, তাদের জন্য জীবিত অবস্থায় কোন সরকারি সহযোগীতা পান তো না ই বরং বিদেশের মাটিতে মৃত্যু হলে সেই লাশটি কে ও পড়তে হয় চরম দুর্ভোগে ও ভোগান্তিতে। প্রবাসীদের চাঁদার টাকা ও দেশে থেকে স্বজনদের পাঠানো টাকা না হলে সেসব লাশ গুলোর ভাগ্যে দেশের মাটি জোটে না !

আবার কখনো কখনো বাংলাদেশী প্রবাসী কমিউনিটির কাছ থেকে টাকা চাঁদা উঠিয়ে হতভাগ্য’দের লাশ দেশে পাঠানো হয়। অনেক সময় দেখে যায় রাস্তায় লাশ ফেলে রেখে স্থানীয় বিদেশী’দের কাছ থেকে চাঁদা তুলে দেশে পাঠানোর বিমান খরচ বহন করা হয়।

হায়রে নিয়তি যারা নিজেদের ভাগ্য বদল ও দেশের বৃহত্তর স্বার্থে জীবনের বেশির ভাগ সময় প্রবাসে কাটান তাদের মৃত্যুর পর আমাদের দূতাবাসের নজরে অনেক পরে আসে যখন লাশের দুর্গন্ধ বাহির হয় !

বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশী প্রবাসীদের অভিযোগ, মৃত্যুর পর লাশ দেশে পাঠানোর ব্যাপারে দূতাবাসের হস্তক্ষেপ কামনা করলেও তারা যথাসময়ে প্রয়োজনীয় সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন না ! তাদের বক্তব্য এমনটি যে নিজেদের চেষ্টায় লাশ পাঠানোর জন্য
উৎসাহিত করেন। তারা ।।

বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন দেশে দূতাবাস খুলে কিছু লোকের কর্মসংস্থান করেছে প্রবাসীদের সহায়তার জন্যই আর তারা কি করছে ?

বিদেশের বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির দেওয়া তথ্য মতে, একজন প্রবাসীর লাশ বাংলাদেশে পাঠাতে নিচের পক্ষে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা অথবা আরও বেশি খরচ হয়। একজন প্রবাসী যখন বিদেশে মারা যায় তখন তার পাশে কোন আপনজন থাকেনা। সেখানে দাফন অথবা দেশে পাঠানোর এই ব্যয়ভার আপনজন বা স্বজন না থাকলে কেউ নিতে চায় না।

যার ফলে প্রবাসীর লাশের করুণ দশা ও চরম নিষ্ঠুরতাকেও কখনো কখনো হার মানায়। সকল দেশের প্রবাসীদের প্রত্যাশা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তথা দেশের সরকার যদি অসহায় জিন্দা অথবা মুর্দা প্রবাসীদের পাশে দাঁড়ান এবং সঠিক আইনের বাস্তবায়নের মাধ্যমে দূতাবাসগুলোকে এ ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা রাখতে কঠোর নির্দেশ দেন ও তদারকি করেন তাহলে হয়তো প্রবাসীদের সকল সমস্যা এবং লাশ জটিলতার সমস্যার সমাধান হতে পারে খুব সহজেই …… ।

মনে রাখবেন আজ জিন্দা আছি কাল মরেও যেতে পারি তাই আসুন সকলে মিলে আওয়াজ তুলি – প্রবাসীদের দিকে সরকার দৃষ্টি দাও !!!! আহমেদ রানা
রিয়াদ, সৌদি আরব

ad

পাঠকের মতামত