192698

সাদা ধবধবে বিছানার চাদরে ’কুমারীত্ব’ পরীক্ষা!

বধূটি কি ভার্জিন? প্রথম মিলনে কি ছিন্ন হয়েছে যোনিপর্দা? বেরিয়েছে রক্ত? বিছানা কি রঞ্জিত লাল রঙে? প্রশ্নগুলো আজও সমাজের কোনও কোনও অংশে বহাল তবিয়তে বিদ্যমান। হ্যাঁ, যখন মানুষ মঙ্গলে পাড়ি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তখনও হাইমেনের হেঁয়ালিতেই আটকে রয়েছে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের একাংশ। এবার তা বদলের ডাক দিচ্ছেন যুবকরাই। হোয়্যাটসঅ্যাপের মতো জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মকে কাজে লাগিয়েই এই বিচ্ছিরি মানসিকতার পরিবর্তনে এগিয়ে এসেছেন একদল যুবক।

সময় বদলেছে। সমাজ এগিয়েছে। চাঁদে জমি কেনা বা মঙ্গলে পাড়ি দেওয়ার দিকে লক্ষ্য মানুষের। তবু এত অগ্রগতির মধ্যেও অন্ধকার। আজও পুরুষের মন কোথাও কোথাও আটকে আছে বস্তাপচা ধারণাতেই। নববধূ কুমারী কিনা, এ যেন আজও খুব বড় প্রশ্ন। কেউ স্বীকার করেন। কেউবা করেন না। কিন্তু সংশয় কাঁটা বিঁধে থাকে পুরুষতন্ত্রের অন্দরে। কোনও কোনও সম্প্রদায়ের মধ্যে তো রীতিমতো অগ্নিপরীক্ষার ব্যবস্থা আছে। যেমন কঞ্জরভাট সম্প্রদায়। সেখানে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই তবে বধূর স্বীকৃতি মেলে। নইলে কপালে অশেষ দুঃখ। কী সেই পরীক্ষা? বিয়ের পর মিলনের প্রথম রাতে গ্রাম পঞ্চায়েতের মতো নির্দেশমতো পেতে দেওয়া সাদা ধবধবে বিছানার চাদর। তার উপরই স্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গমে রত হয় পুরুষ। পরেরদিন সকালে খুঁটিয়ে দেখা হয়। যদি বিছানার চাদরে লাল রক্তের ছোপ থাকে, তবেই নারীর যোনিপর্দা বা হাইমেন ছিন্ন হওয়া নিয়ে নিশ্চিত হয় পুরুষ সমাজ। বিয়ের আগে বধূটি যে কুমারী ছিল, তা নিয়ে আর কোনও সংশয় থাকে না। তৃপ্ত হয় পুরুষতন্ত্রের অহং। অন্যথায় নারীর কপালে জোটে অশেষ লাঞ্ছনা। ধরেই নেওয়া হয়, বিয়ের আগে অন্য পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে রত ছিল নারীটি। যদিও বিজ্ঞান বলছে, সাইকেল চালানো থেকে নাচার অভ্যাস-এরকম নানা কারণে অল্পবয়সে হাইমেন ছিন্ন হতে পারে। তার সঙ্গে সঙ্গমের কোনও সম্পর্ক নেই। কিন্তু প্রাচীন সংস্কারের কাছে কোথায় বিজ্ঞান। অন্ধবিশ্বাসের ঝুল পড়ে আছে পুরুষতন্ত্রের ফিউডাল দেওয়ালে।

তবে সময় সত্যিই বদলেছে। মহিলাদের এই হেনস্তা রুখতে এগিয়ে এসেছেন ভারতের পুণের একদল যুবক। হোয়্যাটসঅ্যাপে তাঁরা একটি গ্রুপ তৈরি করেছেন। এই বিচ্ছিরি সংস্কার বদলানোর ডাক তাঁদের। গ্রুপটি তৈরি করেছেন বিবেক তামাইচেকর নামে এক যুবক। মুম্বইয়ের টাটা ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল সায়েন্সের ছাত্র তিনি। গ্রুপ তৈরি করার সঙ্গে সঙ্গেই অভূতপূর্ব প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন। এমনকী কঞ্জরভাট সম্প্রদায়ের মধ্যে থেকেই সমমনস্ক বহু যুবক এগিয়ে এসে এর প্রতিবাদ করেছেন।

এখানেই থেমে থাকেননি ওই যুবক। পুলিশের কাছে তিনি এই প্রথার অনুশীলন বন্ধের দাবিতে অভিযোগও দায়ের করেছেন। ঠিক যেভাবে তিন তালাক অসাংবিধানিক, সেভাবে এই প্রথাও অসাংবিধানিক বলে দাবি তাঁর। সংবিধানের ১৪ ও ২১ নং ধারার বিরোধী এই প্রথা। যা একজন নারীর সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। তবে দীর্ঘদিনের সংস্কার। আজও মানুষ তা পালন করেন ঐতিহ্যের কথা ভেবেই। যা প্রকারন্তরে নারী নির্যাতনের একটি হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। তবে এত সহজে তো এই প্রথা দূর করা যাবে না। তাই সোশ্যাল মিডিয়া মারফত সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সচেতনতা জোরদার হলেই এই প্রথা যে রদ হবে, এমনটাই বিশ্বাস তাঁর।

ad

পাঠকের মতামত