192531

বাংলা সিনেমা জগতের হারিয়ে যাওয়া নায়িকাদের খোঁজ, তারা কোথায় কেমন আছেন?

বাংলা সিনেমা জগতে কত নায়িকা এসেছেন। আবার চলেও গিয়েছেন। মাঝখানে তৈরি করেছিলেন কিছু সম্ভাবনা। সেই সম্ভাবনাময়ী কয়েকজন নায়িকার খোঁজ আজ দেওয়া হলো। হয়তো এ সময়ে এসেও তারা নায়িকার চরিত্র করতে পারতেন। অথবা তাঁরা অভিনয়ে নিয়মিত থাকলে সিনেমা জগত থাকতো আরও উজ্জ্বল।

তামান্না

প্রয়াত চলচ্চিত্র পরিচালক শহীদুল ইসলাম খোকনের ‘ভণ্ড’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে অভিষেক হয়েছিল তামান্নার। চিত্রনায়ক রুবেলের বিপরীতে প্রথম সিনেমাতেই বাজিমাত। এরপর হূদয়ে লেখা নাম, তুমি আমার ভালোবাসা, কঠিন শাস্তি, আমার প্রতিজ্ঞা, চাই শুধু ভালোবাসা, সন্ত্রাসী বন্ধুসহ অনেক সিনেমায় তাকে দেখা গেছে। ২০১৩ সালে অভিনীত মঈন বিশ্বাস পরিচালিত পাগল তোর জন্য রে চলচ্চিত্রের পর তাকে আর অভিনয়ে দেখা যায়নি।

তিনি বর্তমানে সুইডেনে আছেন। বেশ কয়েকবছর ধরেই সেখানে আছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুইডেন থেকে দেশে ফেরার সম্ভাবনা নেই এই অভিনেত্রীর।

রত্না

একটা সময়ে ঢাকাই সিনেমায় সম্ভাবনা তৈরি করেছিলেন এ নায়িকা। তবে সেই সম্ভাবনা খুব বেশি দিনের জন্য টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। চলচ্চিত্রের কাজ কমে যাওয়ায় তিনি ছোটপর্দায় কাজ করছিলেন। কিন্তু এ মাধ্যমেও ততটা সফলতা অর্জন করতে পারেননি। বর্তমানে অভিনয় জগত থেকে সম্পূর্ণ দূরে রয়েছেন। ব্যাবসায় মনোযোগী হয়েছেন। তামান্না ফিল্মস নামে একটি প্রযোজনা সংস্থা্ও গড়ে তুলেছেন তিনি। সেখান থেকে সর্বশেষ ‘সেদিন বৃষ্টি ছিল’ নামে একটি সিনেমা মুক্তি দিয়েছিলেন। সেখানে নায়িকাও ছিলেন তিনি। কিন্তু সিনেমাটি কোনভাবেই কোন আলোচনা তৈরি করতে পারে নি।

শাকিবা

চিত্রনায়িকা শাকিবা বিনতে আলী। এখন পর্যন্ত তার অভিনীত প্রায় ৪০টির বেশি ছবি মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু প্রায় ৭ বছর ধরে চলচ্চিত্র থেকে দূরে রয়েছেন একসময়ের সুপারহিট চিত্রনায়িকা।

শাকিবার অভিষেক হয়েছিল মমতাজুর রহমান আকবরের ‘জীবনের গ্যারান্টি নাই’ ছবির মাধ্যমে। আমিন খানের বিপরীতে প্রথম ছবিই সুপারহিট হয়। এরপর অনেকগুলো ছবিতে কাজ করেছেন। যেমন- ‘ভন্ড নেতা’,‘বাঁচাও দেশ’,‘ মাঝির ছেলে ব্যারিস্টার’, রূপান্তর, দুর্ধষ’, ‘বস্তির ছেলে কোটিপতি’, ‘এক জবান’, ‘মাটির ঠিকানা’

লিমা

১৯৯৪ সালের শেষের দিকে জীবন রহমান পরিচালিত প্রেম যুদ্ধ ছবিতে সালমানের সঙ্গে জুটি বাঁধেন লিমা। পরের বছর দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর কন্যাদান ছবিতেও দেখা যায় এই জুটিকে। কিন্তু চিত্রনায়িকা লিমা পরে একেবারেই হারিয়ে যায় চিত্রজগত থেকে।

সাহারা

২০০৪ সালে ‘রুখে দাঁড়াও’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে চিত্রজগতে আত্মপ্রকাশ সাহারার। একসময় অশ্লীলতার তকমা গায়ে জড়িয়েছিলেন। মাঝে ভালো কিছু ছবিতে অভিনয় করে নিজেকে কিছুটা ধুয়েমুছে পরিষ্কার করে নিয়েছিলেন। ২০০৬ সালে শাকিব খানের বিপরীতে ‘প্রিয়া আমার প্রিয়া’ চলচ্চিত্র বেশ ভালো ব্যবসা করেছে। ঢালিউডে শিল্পী সংকট উত্তরণে যথেষ্ট ভূমিকা রেখে এগোচ্ছিলেন এই নায়িকা। কিন্তু ২০১৩ সালে এক চিত্রপ্রযোজককে গোপনে বিয়ে করে চলচ্চিত্র থেকে স্বেচ্ছানির্বাসনে যান তিনি। বর্তমানে পুরোদস্তুর সংসারী।

কেয়া

চলচ্চিত্রের আরেকজন গ্ল্যামারগার্ল কেয়া। সিনেমায় এসে বেশ আলোচনা তৈরি করেছিলেন। কিন্তু বখাটেপনার কারণে আজ তিনি হারিয়ে। কালেভদ্রে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেও ঘুরে দাড়ানোর সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন। গত ঈদে টিভি নাটকে অভিনয় করেছেন। তবে সেটাও আলোচিত কিছু নয়। কেয়াও পুরোপুরি হারিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় আছেন।

শিল্পী

১৯৯৫ থেকে ২০০০ সাল- এই পাঁচ বছরে ৩৬টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন দর্শকনন্দিত নায়িকা শিল্পী। তার পুরো নাম আঞ্জুমান আরা শিল্পী। মোহাম্মদ হোসেন প্রযোজিত রানা নাসের পরিচালিত ‘প্রিয়জন’ চলচ্চিত্রের কথা মনে করিয়ে দিলেই খুব সহজেই দর্শক শিল্পীকে মনে করতে পারেন। কারণ তিনি প্রয়াত অমর নায়ক সালমান শাহর বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন। দর্শকপ্রিয়তার শীর্ষে থেকেও ২০০০ সালে চলচ্চিত্র থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন শিল্পী।

তার অভিনীত মুক্তিপ্রাপ্ত সর্বশেষ চলচ্চিত্র দুটি হচ্ছে নায়করাজ রাজ্জাকের ‘প্রেমের নাম বেদনা’ এবং দেওয়ান নজরুলের ‘সুজন বন্ধু’। বহু নাটকেও অভিনয় করেন এ অভিনেত্রী। বর্তমানে অভিনয় ছেড়ে সংসার এবং দুই সন্তান ছেলে সানাদ ও মেয়ে অ্যাঞ্জেলিনাকে নিয়েই ব্যস্ত তিনি।

মুক্তি

অভিনেত্রী আনোয়ারার মেয়ে মুক্তি। ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘হাছন রাজা’ ও ‘চাঁদের আলো’ সহ বেশ কিছু সিনেমায় অভিনয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন। কিন্তু একটা সময়ে কোথায় যেন হারিয়ে গেছেন। এরপর পাশ্বচরিত্রে কিছু সিনেমায় অভিনয় করলেও নিজের খ্যাতিটা আর তুঙ্গে তুলতে পারেননি এই অভিনেত্রী। শোনা গেছে তার মায়ের অভিনীত কিছু বিখ্যাত সিনেমা যেমন ‘শুভদা’,‘দেবদাস’, ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ সিনেমাগুলো রিমেক করবেন। ছবিগুলোতে তিনি নিজেই অভিনয় করবেন।

সোনিয়া

নব্বইয়ের দশকে ঢাকাই সিনেমার অন্যতম ব্যস্ত নায়িকা ছিলেন। পঞ্চাশটির অধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন এ অভিনেত্রী। যার মধ্যে বেশ কিছু সিনেমা ব্যবসাসফলও হয়েছে। সালমান শাহ, বাপ্পারাজ, রিয়াজসহ প্রথম সারির নায়কদের বিপরীতে অভিনয় করেছেন সোনিয়া। চলচ্চিত্রের পাশাপাশি তিনি নাটকেও অভিনয় করতেন।

একটা সময়ে এসে নেই হয়ে যান মিডিয়া থেকে। প্রায় দশ বছর ধরে মিডিয়ার বাহিরে আছেন। তিনি এখন লন্ডন প্রবাসী। কয়েক বছর আগে বিয়ে করে প্রবাসী স্বামীর হাত ধরে লন্ডনে পাড়ি দিয়েছিলেন। তিনি সেখানকার নাগরিকও হয়েছেন। বৈবাহিক জীবনে সোনিয়া তিন সন্তানের জননী। লন্ডনে হাসি নামেই সবার কাছে পরিচিত সোনিয়া।

১৯৯১ সালে ‘মাস্তান রাজা’ ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে সোনিয়ার চলচ্চিত্র অভিনয় শুরু। এরপর প্রয়াত নায়ক রাজ রাজ্জাকের নির্দেশনায় বাপ্পারাজের বিপরীতে ‘প্রেম শক্তি’ ছবিতে প্রথম নায়িকা চরিত্রে কাজ করেন। সোনিয়া সর্বশেষ অভিনয় করেন দেবাশীষ বিশ্বাস পরিচালিত ‘শ্বশুড় বাড়ি জিন্দাবাদ’ ছবিতে। এরপর আর নতুন কোনো ছবিতে তাকে অভিনয় করতে দেখা যায়নি।

অন্তরা

২০১৪ সালের ৮ জানুয়ারি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে অন্তরার মৃত্যু হয় বলে জানানো হয়েছিল পরিবারের পক্ষ থেকে।

পরবর্তীতে অন্তরার স্বামীর বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ করেছিলেন মা আমেনা খাতুন। ২০১৫ সালে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের (সিএমএম) আদালতে অন্তরাকে হত্যার অভিযোগ এনে পিটিশন মামলা করেন তিনি। এরপর অন্তরার লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সে মামলার কোন আগ্রগতি পরবর্তীতে জানা যায় নি।

মূলত শিশুশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু তার। এরপর তিনি নায়িকা হিসেবে কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেন। এসবের মধ্যে প্রেমের কসম, লেডি র‌্যাম্বো , আমার মা, দোলন চাঁপা, শয়তান মানুষ, ফজর আলী আসছে ও নাগ নাগিনীর প্রেম উল্লেখযোগ্য।

সিমলা

প্রথম সিনেমাতেই বাজিমাত। আলেকজান্ডার বো এর বিপরীতে ‘ম্যাডাম ফুলি ‘ সিনেমার জন্য সে বছর জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন। তার মধ্যে অনেকেই বাংলা চলচ্চিত্রে খ্যাতিমান কোন নায়িকার। বেশকিছু প্রশংসিত সিনেমায় অভিনয় করেছেন। কিন্তু একটা সময়ে এসে খেই হারিয়ে ফেলে। সর্বশেষ ‘নিষিদ্ধ প্রেমের গল্প’ নামে একটি সিনেমা নিয়ে বহুদিন আলোচনা চলছে। কিন্তু তাঁর খোঁজ এখন আর মিডিয়া খুব বেশি রাখে না। তার স্বরুপে ফেরার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। আমেরিকা টু বাংলাদেশের যাতায়াতের মধ্যেই আছেন। আমেরিকাতে গিয়ে কি করেন তার সঠিক তথ্য নেই। তবে তিনি বলে থাকেন পারিবারিক কাজে সেখানে অবস্থান করেন। সিমলাকে হারিয়ে যাওয়ার তালিকায় নিয়ে আসার কারন সে পথেই সে হাটছে।

এছাড়াও তালিকায় আছেন রেসি, শ্যামা, একা, বৃষ্টি, সাবরিনা ও কাঞ্চি সহ আরও অনেকে। এরা সিনেমায় এসে কোনো না কোনো সময়ে দ্যুতি ছড়িয়েছেন। আবার কোথায় যেন হারিয়ে গেছেন।

ad

পাঠকের মতামত