192241

বৈধতা পাচ্ছে উবার, পাঠাও

ডেস্ক রিপোর্ট : তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর যোগাযোগ সার্ভিস উবার, পাঠাও বৈধতা পেতে যাচ্ছে। পাশাপাশি আরো কয়েকটি কোম্পানির সার্ভিসও বৈধতা পাবে। তবে কোনো প্রাইভেট কার রাইডশেয়ারিং মোটরযান এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট ছাড়া তাদের সার্ভিস পরিচালনা করতে পারবে না। রাইডশেয়ারিং মোটরযান এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট একবারে সর্বোচ্চ তিন বছরের জন্য দেয়া হবে। মেয়াদ শেষে তা নবায়ন করা যাবে। এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট ফি মোটসাইকেলের জন্য পাঁচশ’ টাকা এবং অন্যান্য মোটরযানের জন্য এক হাজার টাকা।

হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হয়ে গেলে একই পরিমাণ অর্থ জমা দিয়ে এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট নেয়া যাবে। কোনো মোটরযান রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার এক বছর পর রাইডশেয়ারিং কার্যক্রম চালাতে পারবে। আজ সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠেয় মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে খসড়া ‘রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা, ২০১৭’ অনুমোদনের জন্য উঠবে। অনুমোদন মিললেই তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর সার্ভিসটি বৈধতা পাবে। খসড়া নীতিমালায় রাইডশেয়ারিং সার্ভিসের ভাড়ার হার সম্পর্কে বলা হয়েছে, ব্যক্তিগত মোটরকারের ভাড়া ‘ট্যাক্সিক্যাব সার্ভিস গাইডলাইন, ২০১০’ অনুযায়ী নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি হতে পারবে না। তবে কোনো কারণে ভাড়া সংক্রান্ত যাত্রী অসন্তোষ সৃষ্টি হলে সে ক্ষেত্রে সরকার ভাড়া নির্ধারণ বা পুনঃনির্ধারণ করতে পারবে। খসড়া নীতিমালায় রাইড শেয়ারিংয়ের সঙ্গে জড়িত মোটরযান চালকের ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি, ড্রাইভারের বর্তমান ঠিকানার প্রমাণপত্র, মোবাইল ফোন নম্বরসহ যোগাযোগের তথ্যাদি, ড্রাইভিং লাইসেন্সের কপি ও অন্য তথ্য রাখতে হবে। নীতিমালায় রাইডশেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট প্রদানের পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, রাইডশেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে ‘এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট’-এর জন্য অনলাইনে বিআরটিএ’র বরাবরে আবেদন করতে হবে।

আবেদনপত্রের সঙ্গে এক লাখ টাকা এনলিস্টমেন্ট ফি, ট্রেড লাইসেন্স, ইটিআইএন সার্টিফিকেট, ভ্যাট ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে। আবেদন পাওয়ার পর কর্তৃপক্ষ যাচাই বাছাই করে এক বছর মেয়াদের জন্য ‘এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট’ দেবে। সার্টিফিকেট পেলে কোম্পানিটি মোটরযানের চালক ও মালিকের সঙ্গে চুক্তি করবে। ওই চুক্তিতে নিজেদের স্বার্থের কথা উল্লেখ থাকবে। এরপর ‘এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট’ মেয়াদ শেষের তিন মাস আগে নবায়নের জন্য দশ হাজার টাকা ফিসহ আবেদন করতে হবে। হারানো বা নষ্ট এবং কোনো তথ্য সংশোধনের দরকার হলে এক হাজার টাকা ফি দিয়ে আবেদন করতে হবে। এদিকে মন্ত্রিসভায় উত্থাপনের জন্য গত ১০ই ডিসেম্বর একটি সারসংক্ষেপ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। সার সংক্ষেপে বলা হয়েছে, ব্যক্তিগত মোটরকার, মোটরসাইকেল, জিপ, মাইক্রোবাস ইত্যাদি ব্যক্তি মালিকানাধীন হালকা মোটরযান সাধারণত একজন ব্যক্তি বা একটি পরিবার ব্যবহার করে থাকে। ব্যক্তি মালিকানাধীন এসব মোটরযানের কারণে মহানগরীগুলোতে ব্যক্তি মালিকানাধীন হালকা মোটরযানের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

ক্রমবর্ধমান এ সংখ্যা বাড়ার ফলে প্রতিনিয়ত যানজট সৃষ্টি, মূল্যবান শ্রম-ঘণ্টা বিনষ্ট, জ্বালানির অপচয় এবং সার্বিক পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। ‘রাইডশেয়ারিং’ সার্ভিস’ প্রবর্তন এ পরিস্থিতির উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। ‘রাইডশেয়ারিং সার্ভিস’ এমন একটি পরিবহন সেবা ব্যবস্থা যেখানে ব্যক্তিগত মোটরযানের মালিক নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে অবসর সময়ে স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ভিত্তিক অনলাইন এপ্লিকেশন ব্যবহার করে ব্যক্তিগত মোটরযানকে ভাড়ায় পরিচালনা করে থাকেন। ‘রাইডশেয়ারিং সার্ভিস’ প্রবর্তন করা হলে ঢাকাসহ অন্যান্য মহানগরীতে যানজট পরিস্থিতির উন্নয়ন হবে, যাত্রীসেবার মান বাড়বে। পাশাপাশি মোটরযান মালিকরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। একারণেই খসড়া রাইডশেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে।

খসড়া রাইডশেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালায় ১০টি অনুচ্ছেদ এবং ৪৫টি উপ-অনুচ্ছেদ রয়েছে। এর আগে দেশে প্রথম ২০১৬ সালের ৮ই মে রাইড শেয়ারিং অ্যাপ চালু করে ‘ডাটাভক্সসেল লিমিটেড’ শেয়ার এ মোটরসাইকেল (স্যাম) নামে। ডাটাভক্সসেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমতিয়াজ কাসেম মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ার ধারণার প্রবর্তক। এরপর ২০১৬ সালের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক উবার অ্যাপভিত্তিক ট্যাক্সি সেবা চালু করে। পাঠাও নামের এক ক্যুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান মোটরসাইকেলে ‘চালক নিয়োগ’ দিয়ে শুরু করে রাইড শেয়ারিং। রাজধানীতে মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ারিং জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। উবারের মতো ট্যাক্সি সার্ভিস এবং মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং অ্যাপ ছাড়াও এ পর্যন্ত নাম এসেছে ইজিয়ার, গো-টু টেকনোলজিস, রানারের- লেটস গো, আমার রাইড, ইয়েস বাইক, বাহসহ কয়েকটি রাইড শেয়ারিং অ্যাপের। বেশিরভাগই মোটরসাইকেল ভিত্তিক। এছাড়া আরো কয়েকটি কোম্পানি তাদের কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি নিয়েছে। নীতিমালা অনুমোদন হলে অ্যাপসভিত্তিক সেবা নির্দিষ্ট কাঠামোতে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। মানবজমিন

ad

পাঠকের মতামত