192231

পুলিশ সরল বিশ্বাসে অপরাধের দায়মুক্তি চায়

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে গঠিত ‘পুলিশ অ্যান্টি টেররিজম’ ইউনিটের জন্য খসড়া বিধিমালা প্রণয়ন করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। এ বিধিমালা অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এখন মন্ত্রণালয় খসড়া বিধিমালা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর অনুমোদন দেবে। এ বিধিমালা অনুযায়ী পরিচালিত হবে ‘পুলিশ অ্যান্টি টেররিজম’ ইউনিটের সব কার্যক্রম। এ বিধিমালার অধীনে পুলিশ অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের কোনো সদস্য দায়িত্ব পালনকালে সরল বিশ্বাসে করা কোনো কাজে কোনো ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে ওই কর্মকর্তা বা সদস্যের বিরুদ্ধে দেওয়ানি বা ফৌজদারি মামলা বা কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ‘পুলিশ অ্যান্টি টেররিজম’ ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, কোনো জঙ্গি আস্তানা কিংবা কোনো সন্ত্রাসীদের আস্তানায় অভিযানকালে কোনো সাধারণ মানুষ হতাহত হয় সে ক্ষেত্রে দায়মুক্তি চাওয়া হয়েছে। যে কোনো অভিযানে পুলিশ নিরীহ মানুষের জানমালের হেফাজত করতে সব সময় সচেষ্ট থাকে। কিন্তু ঘটনাক্রমে সাধারণ মানুষও অভিযানকালে আক্রান্ত হলে সে ক্ষেত্রে দায়মুক্তি চাওয়া হয়েছে। এটাই সরল বিশ্বাসে কৃত কাজ। আক্রান্ত ব্যক্তি পুলিশের টার্গেট ছিল না।

জানা গেছে, বিধিমালার অধীনে ‘পুলিশ অ্যান্টি টেররিজম’ ইউনিট সন্ত্রাসে অর্থায়ন, সন্ত্রাসী কার্যক্রম, জঙ্গি কিংবা সন্ত্রাসী চক্র জড়িত এ রূপ বিস্ফোরকদ্রব্যসংক্রান্ত অপরাধ, জঙ্গি ও কিংবা সন্ত্রাসী চক্র জড়িত এ রূপ অস্ত্র মামলা, সব ধরনের সাইবার অপরাধ, ফরেন টেররিস্ট ফাইটার্সসংক্রান্ত অপরাধ, জঙ্গি কিংবা সন্ত্রাসী চক্র কর্তৃক হত্যা মামলা এবং জঙ্গি কিংবা সন্ত্রাসী চক্র কর্তৃক ডাকাতি, দস্যুতা এবং খুনসহ ডাকাতির অপরাধের মামলা অনুসন্ধান ও তদন্ত করতে পারবে। এগুলো হলো ‘পুলিশ অ্যান্টি টেররিজম’ ইউনিটের তফসিলভুক্ত অপরাধ। এ ছাড়া সরকার, আদালত এবং আইজিপি কর্তৃক নির্দেশিত অপরাধের তদন্ত কার্য পরিচালনা করতে পারবে।

অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের তফসিলভুক্ত অপরাধ সংশ্লিষ্ট কোনো ঘটনা সংঘটনের সঙ্গে সঙ্গে অথবা মামলা রুজু হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রাথমিক তথ্য বিবরণী (এফআইআর) থানার ওসিসহ নিকটস্থ ‘পুলিশ অ্যান্টি টেররিজম’ ইউনিটের কর্মকর্তাকে অবহিত করতে হবে। প্রাথমিক ক্রাইমসিন ম্যানেজমেন্ট থেকে মামলা হস্তান্তর হওয়া পর্যন্ত থানাপুলিশ ঘটনাস্থল সংরক্ষণ, প্রাথমিক তদন্ত ও আসামি গ্রেপ্তার করতে পারবে।

‘পুলিশ অ্যান্টি টেররিজম’ ইউনিট কোনো মামলার তদন্ত শুরু করলে আইজিপির লিখিত অনুমোদন ছাড়া অন্যকোনো সংস্থায় ওই মামলা হস্তান্তর করা যাবে না। ‘পুলিশ অ্যান্টি টেররিজম’ ইউনিট এবং পুলিশের অন্য কোনো ইউনিট কর্তৃক একই সময়ে কোনো মামলা তদন্তের বিষয় উত্থাপিত হলে ‘পুলিশ অ্যান্টি টেররিজম’ ইউনিট ওই মামলা গ্রহণ করবে। পুলিশ কমিশনার বা ক্ষেত্রমত জেলা পুলিশ সুপারকে অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের তফসিলভুক্ত মামলা অধিগ্রহণের অনুরোধ করা হলে অনতিবিলম্বে পুলিশ কমিশনার বা ক্ষেত্রমত জেলা পুলিশ সুপার অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের তদন্তের জন্য মামলা হস্তান্তর করবে। তবে পুলিশের অপর বিশেষায়িত ইউনিট র্যাব ‘পুলিশ অ্যান্টি টেররিজম’ ইউনিটের তফসিলভুক্ত অপরাধের কোনো ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থাকলে তারা চাইলে ওই ঘটনার দায়ের করা মামলা তদন্ত করতে পারবে। অন্যদিকে পুলিশ অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে অগ্রণী ভূমিকা হিসেবে কাজ করবে।

বিধিমালা অনুযায়ী, পুলিশ অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন মেট্রোপলিটন ও জেলায় মোতায়েন ও কার্যালয় স্থাপন করতে পারবে। আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ইন্টেলিজেন্স বেসড একটি স্বতন্ত্র ও স্বয়ংসম্পূর্ণ পৃথক বিশেষায়িত ইউনিট হিসেবে কাজ করবে। উগ্রবাদী, জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা, অনুসন্ধান এবং এ সংক্রান্ত মামলা তদন্ত করবে। কাউন্টার রেডিকালাইজেশন ও ডি রেডিকালাইজেশনসহ অন্য কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। সন্ত্রাসী ও জঙ্গিসংক্রান্ত কর্মকা-ের আগাম তথ্য সংগ্রহ এবং প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করবে। সন্ত্রাসী কর্মকা-ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পেশাজীবী শ্রেণি এবং জনসাধারণকে সচেতন করতে কাজ করবে, সন্ত্রাসী কর্মকা- দমনে সারা দেশ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ, এবং বিন্যাসের মাধ্যমে নিয়মিত সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের সক্ষমতা সম্পর্কে নজর রাখবে। এ কাজ করতে গিয়ে তারা ল-ফুল ইন্টারসেপশন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে। এ ছাড়া জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ের কারণ ও প্রতিকারে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করবে, সন্ত্রাসী কর্মকা-ের হুমকি মোকাবিলা, সম্ভাব্য প্রতিকার এবং এ বিষয়ে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মধ্যে তথ্য বিনিময়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের অবস্থান শনাক্ত ও কর্মকা- প্রতিরোধ এবং এ সংক্রান্ত কর্মকা- প্রতিরোধে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বেসরকারি বিশেষজ্ঞ সহায়তা গ্রহণ করতে পারবে।
অভিযান পরিচালনা, অনুসন্ধান, তদন্ত কার্য, প্রশাসনিক ও লজিস্টিকসংক্রান্ত বিষয়ে পুলিশ অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট পুলিশ বাহিনীর অন্য ইউনিটের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করবে।

ইউনিটপ্রধান এবং তার অধীনস্থ কর্মকর্তারা অ্যান্টি টেররিজম এ দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে, ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসরণে থানার অফিসার ইনচার্জ গ্রেপ্তার, আটক তল্লাশি ও জব্দসহ অন্যান্য ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে। এ ছাড়া গ্রেপ্তার, পলায়ন ও পুনরায় গ্রেপ্তার, সমন, ক্রোক, তল্লাশি এবং তদন্তসংক্রান্ত অন্যান্য কার্যক্রমের ক্ষেত্রে অ্যান্টি টেররিজমের সদস্যরা, ফৌজদারি বা ক্ষেত্রমত পুলিশ রেগুলেশনের সংশ্লিষ্ট বিধান অনুসরণ করবে।

অ্যান্টি টেররিজমের কার্যক্রমে পুলিশ কমিশনার এবং ক্ষেত্রমতে, জেলা পুলিশ সুপারের দায়িত্ব হবে অভিযান পরিচালনা, অনুসন্ধান, এবং মামলা তদন্তের প্রয়োজনে অ্যান্টি টেররিজমের চাহিদা মোতাবেক জনবল, অস্ত্রশস্ত্র এবং অন্য লজিস্টিকসসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান, কোনো স্থানে সন্দেহভাজন জঙ্গি কিংবা সন্ত্রাসীর উপস্থিতি পরিলক্ষিত হলে অথবা কোনো অপরাধ জঙ্গি কিংবা সন্ত্রাসী চক্র কর্তৃক সংঘটিত হয়েছে মর্মে সন্দেহ হলে থানাপুলিশ ঘটনাস্থল ঘেরাও করে রাখবে এবং নিকটস্থ অ্যান্টি টেররিজমের সদস্যদের দ্রুত অবহিত করবেন।

থানাপুলিশ কোনো মামলা তদন্তকালে কিংবা কোনো অভিযান পরিচালনাকালে উক্ত ঘটনার সঙ্গে জঙ্গি কিংবা সন্ত্রাসী জড়িত মর্মে সন্দেহ হলে তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি নিকটস্থ অ্যান্টি টেররিজম সদস্যদের অবহিত করবেন।
থানাপুলিশের কাছে কোনো বোমা বা বোমাসদৃশ্য বস্তু কিংবা বিস্ফোরকজাতীয় দ্রব্য দৃশ্যমান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থল ঘেরাও করে এবং অনতিবিলম্বে বিষয়টি নিকটস্থ অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের সদস্যদের অবহিত করবেন।

থানাপুলিশ কোনো জঙ্গি কিংবা সন্ত্রাসীকে আটক করলে কিংবা জনসাধারণ কোনো জঙ্গি অথবা সন্ত্রাসীকে আটক করে থানাপুলিশের কাছে হস্তান্তর করলে ওই সন্ত্রাসী কিংবা জঙ্গিকে অনতিবিলম্বে অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করবে। মাসিক অপরাধ সভা বা আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কিত সভায় অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। উৎস: দৈনিক আমাদের সময়

ad

পাঠকের মতামত