192342

দু’বার গুলি, প্রান বাঁচাল কুকুর

রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া সারমেয় প্রাণ বাঁচাল পরিবারের। কসবার বাসিন্দা সুরজিৎ রায়কে সপরিবারে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা, তাঁর মা’কে লক্ষ্য করে গুলি—হার মানল চার বছরের গুলগুলের কাছে। কসবা থানায় দায়ের করা অভিযোগপত্রে সুরজিতের মা শীলা রায় লিখেছেন, শনিবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ রাতের খাওয়া শেষ হওয়ার পর বাড়ির কাজ করছিলেন তিনি। আচমকা গুলগুলের চিৎকার শুনে নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে এসে দেখেন, বড় ছেলে সুরজিতের ঘরের দরজা ভাঙার চেষ্টা করছে মুন্না পাণ্ডে, বিধান

সরকার এবং আরও একজন। অভিযুক্তেরা সকলেই স্থানীয় বাসিন্দা। গত ১৭ ডিসেম্বর সুরজিৎ, তাঁর ভাই সুব্রত এবং ভাইয়ের বন্ধুর সঙ্গে গন্ডগোলকে ঘিরে এই হামলা বলে দাবি অভিযোগকারিণীর। পুলিশকে শীলা জানিয়েছেন, বড় ছেলের ঘরের সামনে মুন্না, বিধানকে দেখে বাধা দিতে যান তিনি। সেই সময় বিধান পকেট থেকে রিভলভার বার করে শিলাকে লক্ষ্য করে দু’টি গুলি চালায়। গুলগুলের জন্যই তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।রাজডাঙা মেন রোডে রাস্তা থেকে সরু লোহার সিঁড়ি বেয়ে উঠলে বাঁ দিকে সুরজিতের ঘর।

ডানদিকে ছাদ হয়ে সুরজিতের মা এবং বাবার ঘরে যাওয়ার রাস্তা। ছাদ সংলগ্ন একটি জায়গায় গুলগুলের ঘর। শীলার অভিযোগ, ছাদ যেখান থেকে শুরু হচ্ছে, সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল বিধান। সে রিভলভার তাক করেছে দেখে নিজের ঘরের দিকে দৌড় দেন তিনি। এরই মধ্যে বিধানের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে গুলগুল। শীলার কথায়, ‘‘রিভলভার ধরা হাতের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ও। দু’বার। গুলগুলের সঙ্গে বিধানের ধস্তাধস্তিতেই আমার গায়ে গুলি লাগেনি। টবে লেগেছে। গুলগুলই আমার প্রাণ বাঁচিয়ে দিল। ’’

চার বছর আগে নলবনে পিকনিক করতে গিয়েছিলেন সুরজিতেরা। ছ’দিনের কুকুরছানাকে বারবার আসতে দেখে মায়া পড়ে যায় সুব্রতের। তাকে বাড়ি নিয়ে আসেন তাঁরা। প্রাণ বাঁচানোর জন্য সেই গুলগুলকে বারবার ধন্যবাদ দিচ্ছেন সুরজিৎ এবং স্ত্রী মৌসুমি। সুরজিৎ জানান, তিন বছরের মেয়ে জিনিয়ার জ্বর। রাতে শিশুকন্যাকে ওষুধ খাওয়ানোর সময় বাড়ির নীচে মোটরবাইক দাঁড়ানোর শব্দ পান মৌসুমি। সেই সময় চিৎকার শুরু করে গুলগুল। মৌসুমী জানান, প্রথমে দরজায় লাথি মারে দুষ্কৃতীরা। শাশুড়ি ঘরে থেকে বেরোলে গুলির শব্দ পান তিনি।

সুরজিৎ বলেন, ‘‘মা ঘরে ঢোকার পরে একজন বলছিল, তাড়াতাড়ি ঢাল। ওই গলা মুন্না ছাড়া কারও নয়। পেট্রোলের গন্ধ পেয়ে ঘরের ভিতর থেকে দরজার ফাঁক দিয়ে দু’বোতল জল ঢেলে দিই। কিন্তু লাভ হয়নি। দাউদাউ করে আগুন ধরে যায়। ’’ মৌসুমী বলেন, ‘‘আগুন দেখে ছেলে এবং মেয়েকে নিয়ে দেওয়ালে সিঁটিয়ে ছিলাম। এসব সিনেমায় দেখেছি। আমাদের সঙ্গেই এমন হবে ভাবিনি। ’’ এদিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, দরজার তলার অংশ পুড়ে গিয়েছে। টিভির তার আগুনের তাপে কালো। মেঝেয় পড়ে রয়েছে মাছের খাবার, ওষুধের শিশি। সুরজিতের দাবি, ‘‘আমাকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করেছিল। ’’

দুষ্কৃতী হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় কসবা থানার পুলিশ। পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনাস্থল থেকে একটি কার্তুজের খোল, তাজা গুলি এবং পোড়া জুতো উদ্ধার হয়েছে। শীলার অভিযোগের ভিত্তিতে মুন্নাদের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা, অসৎ উদ্দেশে বিস্ফোরক এবং আগ্নেয়াস্ত্র হাতে বাড়িতে প্রবেশ এবং অপরাধমূলক কাজের অভিযোগে মামলা রুজু হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, রাতে মুন্না এবং বিধানকে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমার থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ad

পাঠকের মতামত