192038

সিদ্ধিরগঞ্জে জোড়া খুন: নানিকে হত্যার সময় দেখে ফেলায় খুন হয় নাতিও

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে নানি-নাতি খুনের রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ। নানি পারভীন আক্তারকে হত্যার দৃশ্য দেখে ফেলায় নাতি ১৩ বছরের মেহেদী হাসানকেও একই কায়দায় হত্যা করে ঘাতকরা। পুলিশের অভিযানে তিন ঘাতকই গ্রেফতার হয়েছে। তাদের মধ্যে আক্তার হোসেন গত ৭ জানুয়ারি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। হত্যার সঙ্গে জড়িত অন্য দু’জন হলো সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি পাইনাদী এলাকার ইছামুদ্দিনের ছেলে মাসুম ও একই এলাকার মৃত ঈমান আলীর ছেলে মুক্তার। তারা সবাই এলাকায় মাদকাসক্ত হিসেবে পরিচিত।

গত ৪ জুনয়ারি সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদী মধ্যপাড়া এলাকার ইতালিপ্রবাসী তোফাজ্জল হোসেনের বাড়ির একটি কক্ষ থেকে পারভীন আক্তার ও তার নাতি মেহেদী হাসানের গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পারভীন ওই বাড়ির কেয়ারটেকার ছিলেন। গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর থেকে এ দু’জন নিখোঁজ ছিলেন। এ ব্যাপারে নিহত পারভীনের মেয়ের জামাই সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেছিলেন। জিডির সাত দিন পর দু’জনের গলিত লাশ উদ্ধার হলে পুলিশ হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পারভীনের মেয়ে জামাতা নবী আউয়ালকে আটক করে। মেয়ে শিল্পী আক্তার আরব আমিরাতে থাকায় নাতি মেহেদী হাসান ও নাতনি ফাহিমা আক্তারকে নিয়ে পারভীন ইতালিপ্রবাসী তোফাজ্জল হোসেনের বাড়িতে বসবাস করতেন। তবে ঘটনার সময় ৯ বছরের ফাহিমা ঘরে টিভি দেখতে থাকায় সে কিছু টের পায়নি। যে কারণে সেদিন ঘাতকদের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিল ফাহিমা।

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ‘ক’ অঞ্চল শরফুদ্দিন বলেন, নানি-নাতি হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড ছিল মাসুম। এর মধ্যে মাসুম ও মুক্তার সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়। আর আক্তার ছিল পাহারায়। মাসুম ও মুক্তার স্থানীয় এবং আক্তার এলাকার ভাড়াটে। তারা তিনজনই মাদকাসক্ত।

আক্তার তার জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছে, ঘটনার দুই মাস আগে মাসুমের পরামর্শে নিরাপদে ইয়াবা খাওয়ার জন্য আক্তার ওই বাড়ির একটি কক্ষ ভাড়া নেয়। তিন রুমের বাড়িটির প্রথম কক্ষে পারভীন তার নাতি-নাতনি নিয়ে বসবাস করতেন। মাঝের কক্ষ মাসুম, মুক্তার ও আক্তারের কাছে ভাড়া দেওয়া হয়। আর শেষের কক্ষটিতে পারভীনের জামাতা নবী আউয়াল বসবাস করতেন।

কক্ষটি ভাড়া নেওয়ার পর মাসুম, মুক্তার ও আক্তার নিরাপদে মাদক সেবন করে আসছিল। এর মধ্যে মাসুম এলাকার নিরীহ মানুষকে ওই বাড়িতে ধরে নিয়ে আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায় করত। একদিন এক লোককে ধরে এনে দুই লাখ টাকা দাবি করে মাসুম। পরে ওই লোকের পরিবার বিকাশের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। বিষয়টি পারভীন দেখে ফেলে এবং মাসুমকে বাসা ছেড়ে দিতে বলে। এর পরও মাসুম ওই বাড়িতে বাইরের লোকজন নিয়ে এসে আড্ডা দিলে তাতে বাদ সাধেন পারভীন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পারভীনকে চড় মারে মাসুম।

এ ঘটনার পর গত ২৯ ডিসেম্বর মাঝের ওই কক্ষটি অন্যজনের কাছে ভাড়া দিয়ে দেন পারভীন। এ কথা জানতে পেরে তিনজনই ওই বাড়িতে যায়। সেখানে গিয়ে মাসুম পারভীনের চুলের মুঠি ধরে মারধর করতে থাকে। এ দৃশ্য দেখে মেহেদী চিৎকার করলে মাসুম পারভীনকে তাদের কক্ষে নিয়ে যায়। মেহেদীকেও সেখানে নিয়ে যেতে বলে। এরপর প্রায় এক ঘণ্টা পর মাসুম ও মুক্তার কক্ষ থেকে বের হলে আক্তার দেখতে পায় পারভীনের মুখের ওপর বালিশ চাপা দেওয়া এবং মেহেদীর গলায় রশি দিয়ে পেঁচানো। কক্ষ তালা দিয়ে যাওয়ার সময় মাসুম জানায়, দু’জনকেই মেরে ফেলা হয়েছে।

ad

পাঠকের মতামত