191959

শান্তাবাই ‘ক্ষুর’ দিয়ে লড়াই করছেন ৫০ বছর যাবৎ

শান্তাবাইয়ের বয়স এখন ৭১ বছর। জীবনযাপনের লড়াইটা তার শুরু হয়েছিল ১২ বছর বয়সে। গত প্রায় ৫০ বছর ধরে ক্ষুর-কাচি চালিয়ে যাচ্ছেন শান্তবাই শ্রীপতি যাদব। এতে বেশ ভালোই আছেন ভারতের ইতিহাসে প্রথম এই নারী নাপিত।

মহারাষ্ট্রের কোলাপুরের হারুসাগিরি গ্রামের বাসিন্দা শান্তাবাই। বাবা ও স্বামী দুজনেই নাপিত ছিলেন। স্বামী শ্রীপতির তিন একরের মতো জমিও ছিল। কিন্তু নিজের ভাইদের সঙ্গে বিবাদের জেরে জমি ভাগাভাগি হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত শান্তাবাইয়ের স্বামী নিজের ভাগে এক একরেরও কম জমি পান। এতে সংসার চলছিল না তার।

তাই সংসারের অভাব মেটাতে ধার করতে শুরু করেন শান্তার স্বামী। একসময়ে ধারের টাকা শোধ করতে গিয়ে দেউলিয়া হয়ে যান শ্রীপতি। পরে নিজেদের গ্রাম ছেড়ে হাসুরাসাসগিরি গ্রামে গিয়ে থাকতে শুরু করেন তারা। খবর বিবিসি বাংলার।

এদিকে শান্তা ছয় সন্তানের জন্ম দেন। এর মধ্যে শিশুকালেই দুজনের মৃত্যু হয়। তবে শ্রীপতির ভালো উপার্জন করায় সংসারে অভাব ছিল না। কিন্তু ১৯৮৪ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শ্রীপতির মৃত্যু হয়। শান্তার বড় মেয়ের বয়স তখন আট বছর। আর ছোট মেয়ের বয়স এক বছর মতো।

স্বামীর মৃত্যুর পরের তিন মাস কৃষিশ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন শান্তা। আট ঘণ্টা কাজ করে সামান্য উপার্জন করতেন তিনি। কিন্তু এই উপার্জনে চার সন্তানকে নিয়ে সংসার চলছিল না। শেষ পর্যন্ত নিজের চার মেয়েকে নিয়ে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন শান্তা।

তখনই গ্রামের সভাপতি হরিভাই কাদুকরের পরামর্শে নাপিতের পেশাকে জীবিকা হিসেবে বেছে নেন শান্তা। প্রথমে অবশ্য নাপিত হিসেবে কাজ করার প্রস্তাব পেয়ে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন শান্তা। কারণ মহিলা নাপিত হিসেবে কারো কাজ করার কথা শোনা যায়নি। কিন্তু এই পেশাকে বেছে নেয়া ছাড়া শান্তাবাইয়ের কাছে বিকল্প কোনো পথও ছিল না।

নিজের মেয়েদের প্রতিবেশীর বাড়িতে রেখে দিনে চার-পাঁচ কিলোমিটার ঘুরে ঘুরে লাগোয়া গ্রামগুলোতে গিয়ে নাপিতের কাজ করতেন শান্তা। ধীরে ধীরে শান্তার কথা আশপাশের গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। যে গ্রামগুলোতে কোনো নাপিত ছিল না, সেখানে সহজেই ক্রেতা পেয়ে যান শান্তা।

নিজের কাজের জন্য বিভিন্ন সংস্থার থেকে স্বীকৃতি পেয়েছেন শান্তা। ১৯৮৪ সালে চুল এবং দাড়ি কাটার জন্য এক রুপি পারিশ্রমিক নিতেন শান্তা। আর গবাদিপশুর ক্ষৌরকাজ করার জন্য পাঁচ টাকা নিতেন তিনি।

নাপিত হিসেবে কাজ করেই নিজের মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন শান্তা। এখন তার দশজন নাতি-নাতনি রয়েছে। কিন্তু বয়সের ভারে এখন আর গ্রামে গ্রামে ঘুরে কাজ করতে পারেন না তিনি। তাছাড়া গ্রামে এখন সেলুন হয়েছে। অল্প বয়সী ছেলেরা সেখানেই যায়। বয়স্ক এবং গ্রামের পুরনো বাসিন্দারা শান্তার কাছেই আসেন।

বর্তমানে চুল এবং দাড়ি কাটার জন্য ৫০ রুপি পারিশ্রমিক নেন শান্তা। আর গবাদিপশুর ক্ষৌরকাজের জন্য নেন ১০০ রুপি। যদিও এখন মাসে তিন থেকে ৪০০ টাকার বেশি উপার্জন হয় না। এছাড়া সরকারি ভাতা হিসেবে মাসে ৬০০ রুপি পান শান্তা।

তাই যত দিন চোখে দৃষ্টি রয়েছে এবং হাতে ক্ষুর ধরতে পারছেন, তত দিন তিনি কাজ চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর। তবে শান্তা জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়ার যাবতীয় কৃতিত্ব দিতে হরিভাই কাদুকরকে। কারণ তার পরামর্শেই নাপিত হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন তিনি।

ad

পাঠকের মতামত