191653

মহাজোট সরকারের ভালো-মন্দের ৪ বছর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের চার বছরে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অটুট থাকলেও ছিল টানাপড়েন ও অস্বস্তি। এই সময়ে বহুল আলোচিত পদ্মা সেতুসহ অনেক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড দৃশ্যমান হয়েছে। এই চার বছরে হরতাল ও অবরোধের নামে জ্বালাও-পোড়াওয়ের মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেনি বিএনপি। জঙ্গি তৎপরতা থাকলেও তা অগ্রাহ্য করে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি তার দক্ষ, গতিশীল ও সৃজনশীল নেতৃত্ব দিয়ে সব বাধা ডিঙিয়ে বিশ্বসভায় বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। বাংলাদেশ এখন নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশ।

মিয়ানমার থেকে আসা ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় ও খাদ্য সহায়তাসহ নানা উদ্যোগ নেওয়ায় বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। রোহিঙ্গাদের প্রতি মমত্ববোধ ও উদার দৃষ্টিভঙ্গির জন্য ‘মানবতার মা’ বলে অভিনন্দিত হয়েছেন।

এ বছরের শেষে জাতীয় সংসদের নির্বাচন। স্বভাবতই সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতার নানামাত্রিক বিশ্নেষণ চলছে। বিশ্নেষকদের দৃষ্টিতে, সরকার উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখলেও টানাপড়েন দুর্নিরীক্ষ নয়, পথ চলতে হোঁচটও খেতে হয়েছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি দুর্বল হয়ে আন্দোলন গড়ে তোলার সক্ষমতা হারিয়ে এখন ‘গণবিস্ম্ফোরণে’র অপেক্ষায়।

এ সময়ে সার্বিক অর্থনীতির উন্নয়ন ধারা বেগবানই থেকেছে। নিজস্ব অর্থায়নে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর নির্মাণ ও মেট্রোরেলের কাজ শুরুসহ একাধিক বড় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন হয়েছে। রাজধানীর দৃশ্যপট বদলে যাচ্ছে। গ্রামের মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা বেড়েছে। আগুন সন্ত্রাস, বিদেশি নাগরিক ও ব্লগার হত্যার মতো বৈরী বাস্তবতা আপাতত নেই। এ সময়ে নারী ও যুবশক্তির নব অভ্যুদয় ঘটেছে।

চার বছরে সাফল্যের পাল্লা ভারী হলেও ব্যর্থতাও তুচ্ছ করে দেখার মতো নয়। আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর কিছু নেতাকর্মীর অপকর্মের কারণে সরকারের সাফল্য অনেকটা নিষ্প্রভ-বিবর্ণ হয়েছে। তাদের বেপরোয়া সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, টেন্ডারবাজি ও দুর্নীতির ঘটনা সরকার এবং দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর অবস্থান অত্যন্ত কঠোর। অনেকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এ সময়ে কয়েকজন মন্ত্রী ও এমপি নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। পবিত্র হজ ও তাবলিগ জামাত নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করায় মন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। এ নিয়ে গণমাধ্যমে দারুণ তোলপাড় হয়েছে। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে আলোচনায় এসেছিলেন ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়।

রাজনীতিতে অস্থিরতা না থাকলেও রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে শিষ্টাচার ও সহিষ্ণুতা প্রায় অনুপস্থিত ছিল। আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুতে শোক জানাতে গেলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রধান ফটক থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। ফেনীতে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা হয়েছে। এ ধরনের অনেক ঘটনাই ঘটেছে বিদায়ী বছরে।

আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলার অঙ্গীকার থাকলেও দৃশ্যমান উদ্যোগ দেখা যায়নি। জ্বালাও-পোড়াও যারা করে, তাদের সঙ্গে সংলাপ নয়- এই যুক্তিতে সরকার সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিচ্ছে। সরকার ও সরকারবিরোধী নেতাদের বেসামাল ও অশোভন কথাবার্তায় মানুষ বীতশ্রদ্ধ। কে কত খারাপ ভাষায় কথা বলবেন যেন তারই প্রতিযোগিতা চলেছে। বিএনপি দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এলে বেশ স্বস্তিতে থাকে সরকার।

সরকারের চতুর্থ বছরেও সংসদ নিষ্প্রাণ থেকেছে। মন্ত্রিসভায় থেকে জাতীয় পার্টির প্রধান বিরোধী দল হওয়াটা অনেকের কাছেই কৌতুককর মনে হয়েছে। শরিক দলের সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে আওয়ামী লীগের। মন্ত্রিসভায় দপ্তর রদবদল নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে ১৪ দলে।

এ সময়ে দল গোছাতে উদ্যোগী ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সম্মেলনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ অনেক নতুন মুখ এসেছে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সম্মেলন হওয়ায় তৃণমূলে নতুন নেতৃত্বের ছড়াছড়ি। এই নেতৃত্বের মাধ্যমেই দল গুছিয়ে আনছেন শেখ হাসিনা। তিনি এখন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ জন্য ২৬ জানুয়ারি থেকে সাংগঠনিক সফরে বেরোচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

এ সময়ে বিদ্যুৎ-গ্যাসের সুনিশ্চিত সরবরাহ না থাকায় শিল্প খাতে আশানুরূপ গতি আসেনি। বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিল্প খাত। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সময়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছেন। তার নির্দেশে সরকার দিনবদলের সনদ রূপকল্প-২০২১ এবং ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজ করছে। জাতি এখন ২০৪১ সালের মধ্যে বিশ্বসভায় উন্নত দেশের মর্যাদায় অভিষিক্ত হওয়ার স্বপ্ন দেখছে।

চার বছরে আইনের শাসন সুসংহত ও সমুন্নত রাখতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাকারী পলাতক খুনিদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা হয়েছে। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলাটি বিচারিক আদালতে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির পর্যায়ে রয়েছে। নারায়ণগঞ্জে সাত খুন মামলার রায়ে ২৬ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার রায় হয়েছে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির অপেক্ষায়।

সমালোচনা হলেও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড থেমে নেই। সর্বোচ্চ আদালতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় ও রায়ের পর্যবেক্ষণ নিয়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সঙ্গে সরকারের টানাপড়েনের পর প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ ছিল এ সময়ের সাড়া-জাগানো প্রসঙ্গ।

চার বছরে সরকারের গর্ব করার মতো সাফল্যের মধ্যে রয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তির রায় কার্যকর। এ সময়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, কামারুজ্জামান ও মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। ন্যায়পাল নিয়োগ হয়নি চার বছরেও। মানবাধিকারসহ মতপ্রকাশের বিষয় সংকুচিত হয়েছে। নারী ও শিশু অধিকারের বিষয় এখনও উদ্বেগজনক।

সরকারের চার বছরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বস্তিদায়ক ছিল না। গাইবান্ধা-১ আসনে আওয়ামী লীগের এমপি মনজুরুল ইসলাম লিটন নির্মমভাবে খুন হয়েছেন। এ জন্য বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে। দুর্নীতির দায়ে কক্সবাজারে সরকারদলীয় এমপি আবদুর রহমান বদির জেল হলেও সার্বিকভাবে দুর্নীতি কমছে না। তবে দুর্নীতির তদন্ত ও অনুসন্ধানে মন্ত্রী, এমপি ও আমলাদের জিজ্ঞাসাবাদের দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছে। প্রশাসনে দলীয়করণের চর্চা এখনও বহাল রয়েছে।

গুলশানের রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসী হামলা ও জিম্মি উদ্ধার, কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদের নামাজের আগে সন্ত্রাসী হামলার পরিস্থিতি সরকার সফলভাবে সামাল দিলেও কুমিল্লায় সোহাগী জাহান তনুসহ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডে বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দুদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা এবং গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতাল উচ্ছেদের ঘটনাও সরকারের জন্য সুখকর ছিল না।

ইতালির নাগরিক সিজার তাভেলা ও জাপানি নাগরিক হোশি কোনিও হত্যার ঘটনা সরকারের দ্বিতীয় বছরে বড্ড অস্বস্তির ছিল। একজন ব্লগার হত্যার বিচারের ঘটনা কিছুটা স্বস্তি দিলেও অভিজিৎ রায়, অনন্ত বিজয় দাশ, নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়, ফয়সাল আরেফিন দীপনসহ পাঁচজন ব্লগার খুনের ঘটনা সরকারকে বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে। ধর্মযাজকের ওপর নৃশংস হামলার ঘটনায় সরকার বিব্রত হয়েছে।

শিয়া ও আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মসজিদসহ কান্তজিউর মন্দিরে সন্ত্রাসী হামলায় কিছুটা হলেও কাবু হয়েছে সরকার। শিয়া সম্প্রদায়ের তাজিয়া মিছিল-পূর্ব প্রস্তুতিতে বোমা হামলার ঘটনা নতুন আতঙ্ক তৈরি করেছে। গত চার বছরে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। শিক্ষাবর্ষ শুরুর দিনেই বিনামূল্যে বই পৌঁছে দিয়ে সরকার সাধুবাদ কুড়ালেও একের পর এক প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ায় উদ্বেগ বেড়েছে। শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস, অপরাজনীতি ও দলীয়করণ কমেনি গত চার বছরে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা চুরির ঘটনা সরকারকে কিছুটা বেকায়দায় ফেললেও গত বছর পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। চার বছরে জিডিপি বৃদ্ধি দৃষ্টিগ্রাহ্য হলেও অর্থনীতির চাকা যতখানি সচল হওয়া উচিত ছিল, ততখানি হয়নি। তবে বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ নানা প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে সরকার অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা ও স্থিতিশীলতা বজায় রেখেছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশে।

মাথাপিছু আয় ১৪৫ মার্কিন ডলার বৃদ্ধি পেয়ে এক হাজার ৬১০ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। এটি বড় অর্জন। রফতানি আয় ৩৪ দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৩ দশমিক ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। মূল্যস্ম্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। করদাতাকে উদ্বুদ্ধ করতে ইনকাম ট্যাক্স আইডি কার্ড প্রবর্তন ও পরিবারের সদস্যদের কর প্রদানে উৎসাহিত করার জন্য কর বাহাদুর খেতাব দেওয়া হচ্ছে। আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে বৈদেশিক সহায়তায় অর্জিত প্রতিশ্রুতি ১৭ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে।

৮৩ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য কাজ শুরু হয়েছে। মহাকাশে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। এটি এখন উৎক্ষেপণের অপেক্ষায়। দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ চলছে। জনকল্যাণমুখী সামাজিক কার্যক্রম সম্প্রসারিত হয়েছে।

নির্বাচন, গণতন্ত্র ও সুশাসন নিয়ে মতভেদ থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক জোরদার হয়েছে। সন্ত্রাসবিরোধী সামরিক জোটে সমর্থন দেওয়ায় সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক অটুট হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সফর ছিল সবিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান হয়েছে। সার্বিকভাবে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব সুদৃঢ় হয়েছে।

এ সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় নেতৃত্বের অবদানের জন্য জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনপি) সর্বোচ্চ পরিবেশবিষয়ক সম্মান ‘চ্যাম্পিয়ন অব দি আর্থ’ এবং ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিইউ) ‘আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার’ অর্জন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আইটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়।

প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ আরও এগিয়ে যাবে- এ প্রত্যাশা মানুষের। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে দিনবদলের অঙ্গীকারে সন্ত্রাস ও দুর্নীতির কলুষমুক্ত ন্যায়ভিত্তিক সুন্দর এবং উন্নয়নের পথে দ্রুত অগ্রসরমান আধুনিক ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে উঠবে- এটিও সবার প্রত্যাশা। এই প্রত্যাশা পূরণে সরকারের সামনে আরও একটি বছর রয়েছে। নির্বাচনের বছরটিতে পথের কাঁটা সরিয়ে এগোতে হবে সরকারকে। জাতির সামনে সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের দরজা খুলে দিতে হবে। সেইসঙ্গে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার, আইনের শাসন সুসংহতকরণ এবং জাতির অগ্রযাত্রার স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষার সফল বাস্তবায়ন করতে হবে।

তবে আগামীর পথ কুসুমাস্তীর্ণ নাও হতে পারে। কারণ, এ বছর নির্বাচন। এই নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত কোন দিকে মোড় নেয়, সেটা ভাবনার বিষয়। তাই রাজনৈতিক বিশ্নেষকরা সরকারকে এখন থেকেই সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তাদের শঙ্কা, ২০১৪ সালের মতো ২০১৮ সালে আবারও রাজনৈতিক সহিংসতা দেখা দিতে পারে।

তবে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বর্তমান সরকারের ওপর জনগণের আস্থা আরও বেড়েছে। দেশের সর্বস্তরের মানুষের বিবেচনায় অসাম্প্রদায়িকতা, শান্তি, উন্নয়ন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একমাত্র আওয়ামী লীগই পরীক্ষিত রাজনৈতিক শক্তি। তিনি বর্তমান সরকারকে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল রাজনৈতিক সরকার হিসেবে দাবি করছেন। তার ভাষায়, দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একটি গণতান্ত্রিক সরকার ধারাবাহিকভাবে দেশ পরিচালনা করছে। সরকারের ধারাবাহিকতা আছে বলেই পদ্মা সেতু নির্মাণের কার্যক্রম শুরুর পাশাপাশি বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান হয়েছে। গ্রাম পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হয়েছে। প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। সর্বত্র এখন দৃশ্যমান উন্নয়নের ছড়াছড়ি। সুতরাং এমন অবস্থায় নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ আবারও বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তা মানতে নারাজ। তিনি বলেছেন, সরকার গণতন্ত্রের লেবাসে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। দলীয় সরকারের অধীনে বিরোধী দলগুলোকে চাপে রেখে একতরফা নির্বাচনের ষড়যন্ত্র করছে। তিনি চার বছরে সরকার গণতন্ত্রকে হত্যা করে সাফল্য দেখিয়েছে মন্তব্য করে বলেছেন, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়েছে। উন্নয়নের নামে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট ও দুর্নীতি বিস্তৃত হয়েছে। এ ব্যাপারে বিএনপি মহাসচিবের মূল্যায়ন- চার বছরে আয়ের বৈষম্য বেড়েছে। সরকারের মদদপুষ্ট কিছু ব্যক্তি ও সংগঠন বিত্তশালী হয়েছে। মানুষ আরও দরিদ্র হয়েছে। উন্নয়নের কথা বলা হলেও সড়কপথ, নৌপথ ও আকাশপথের পরিবহন ব্যবস্থা নিম্নগামী হয়েছে। মুদ্রাস্ম্ফীতি ঘটেছে। চালের দাম অসহনীয়ভাবে বৃদ্ধি হওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসপ্রায়। একই অবস্থা স্বাস্থ্যক্ষেত্রেও। সুশাসন কোথাও নেই। উৎস: সমকাল।

ad

পাঠকের মতামত