191717

‘আমাকে ফুটন্ত তেলের কড়াইয়ে নিক্ষেপ করলেও ঈমান ত্যাগ করবো না’

মিরাজের রাত। রাসূল সা: বাইতুল মুকাদ্দাসে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে উর্ধ্বাকাশের দিকে যাচ্ছিলেন। তখন নিচ থেকে হৃদয়জুড়ানো সুঘ্রাণ পাচ্ছিলেন। মনমাতানো ঘ্রাণ। রাসূল সা:বিস্মিত হলেন। জিব্রাইল আ: কে জিজ্ঞেস করলেন , হে জিব্রাইল! আমি নাকে জান্নাতের সুঘ্রাণ অনুভব করছি।

জিব্রাইল আ: বললেন, জান্নাতের এই সুঘ্রাণ ফেরাউনের দাসীর কবর থেকে আসছে।

ফেরাউন। জগ্বিখ্যাত দাম্ভিক। সে নিজেকে আল্লাহ দাবী করেছিল (নাউজুবিল্লাহ)। তার এক দাসী ছিল। সে কালেমা পড়ে গোপনে মুসলমান হয়েছিল। কিন্তু তা বেশিদিন গোপন থাকেনি। ফেরাউনের কাছে খবর পৌঁছল। ফেরাউন তাকে দরবারে তলব করল। দাসীর দুটি কন্যা সন্তান ছিল। একটি দুগ্ধ পোষ্য। অপরটি তার চেয়ে বড়।

ফেরাউন রাগে ক্ষোভে ফেটে পড়ল। বলল, এতো বড় দু:সাহস তোর? আমার দাসী হয়ে মুসার রবকে প্রভূরূপে গ্রহণ করলি ?

ফেরাউন দাসীর জন্য দৃষ্টান্তমূলক নির্মম শাস্তির ব্যবস্থা করল। বড় একটি কড়াই আনা হল। তাতে তেল ঢেলে আগুনে গরম করা হলো। প্রচণ্ড তাপে টগবগ করতে থাকে কড়াই ভর্তি তেল। আড়ম্বরপূর্ণ দারবার বসিয়ে , সভাসদদের সামনে দাসীকে বলল, তোর জন্য পথ দুটি। মুসার খোদাকে অস্বীকার করবি। নয়তো এই ফুটন্ত তেলে জ্বলে পুড়ে নৃশংসভাবে মরবি। আগে তোর সন্তান দুটিকে ফুটন্ত তেলে নিক্ষেপ করবো, পরে তোকেও। এখন বল তোর সিদ্ধান্ত কী?

ভয়হীন, শংকাহীন, নির্লিপ্তভাবে দাসী বলল, আমার মাত্র দুটি সন্তান। যদি আরও সন্তান থাকতো, আর তুমি যদি তাদের সবাইকে এই ফুটন্ত তেলে নিক্ষেপ করতে এরপরও আমি আমার ঈমান থেকে এক চুল পরিমাণও নড়াতাম না ।

তোমার যা করার করতে পারো। আর আমি যা করেছি বুঝে শুনেই করেছি। মুসা আ. আল্লাহর নবী। আল্লাহ আমার রব। তিনি এক। অদ্বিতীয়। তার কোন শরীক নেই। নেই কেউ তাঁর সমকক্ষ। আমি তোমাকে কস্মিনকালেও খোদা মানবো না।

এরপর ফেরাউন ক্ষোভে ফেটে পড়ল। দাসীর বড় সন্তানটিকে বাজপাখির মতো ছো মেরে নিয়ে ফুটন্ত তেলে নিক্ষেপ করল। মাছের মতো ভাজা হয়ে গেল মূহ্যর্তে। এরপর দুধের শিশুটিকেও ফুটন্ত তেলে নিক্ষেপ করল। সেও মুহূর্তের মধ্যে সিদ্ধ হয়ে গেল। তবুও দাসী একটু আহ ওহ-ও করেনি। দুটি সন্তান হারানোর বেদনা তাকে একটুও বিচলিত করেনি। ঈমান থেকে একচুল পরিমাণও বিচ্যুত হয়নি।

এরপর ফেরাউন তার দাসীকে ধরে ফুটন্ত তেলে নিক্ষেপ করে। দাসী অটুট ঈমান নিয়ে মহান আল্লাহর দরবারে পৌঁছে যায়। এই ছিল পূর্ববর্ত মুসলিমদের ঈমান।

ad

পাঠকের মতামত