191398

ভয়ঙ্কর বিষ টেস্টিং সল্ট

ডেস্ক রিপোর্ট : খাবারের স্বাদ বাড়াতে বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট ও হোটেলে বিভিন্ন ধরনের খাদ্যে টেস্টিং সল্ট ব্যবহার করা হচ্ছে। বাসাবাড়িতেও খাবারের স্বাদ বাড়াতে রান্নায়ও ব্যবহার করা হচ্ছে। টেস্টিং সল্ট খাদ্যের গন্ধ এবং স্বাদকে বহুগুণ বাড়াতে পারে বলে এটি খুব বেশি ব্যবহার হয়। আসলে টেস্টিং সল্ট হিসেবে যে পণ্য ব্যবহার হচ্ছে তা এক ধরনের রাসায়নিক, যার নাম ‘মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট’। বিশেজ্ঞরা বলছেন, এটি মানবদেহের জন্য ভয়ানক ক্ষতিকর।

মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট বা টেস্টিং সল্ট খাবার মুখরোচক বা মজাদার করার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। কৃত্রিম স্বাদ বর্ধনকারী উপাদানটির মধ্যে কোনো পুষ্টিমান নেই। এটি বেশি ব্যবহার করলে স্নায়ুতন্ত্রের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। বিজ্ঞানীরা একে ‘স্নায়ুবিষ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

জানা গেছে, টেস্টিং সল্ট সব ধরনের খাবারে ব্যবহার করা হয় না। বিশেষ করে স্যুপ, মাংস দিয়ে তৈরি খাবার, নুডলস, চানাচুর, বিস্কুট, স্ন্যাকস, চায়নিজ জাতীয় খাবার, হোটেল-রেস্টুরেন্টের খাবারে, ফাস্টফুড, বেকারির খাদ্যপণ্য, বিয়ে ও মেজবানির অনুষ্ঠানসহ বাসাবাড়ির রান্নার কাজেও টেস্টিং সল্ট ব্যবহারের পরিমাণ বেড়েছে। তবে বেশি ব্যবহার করা হয় চায়নিজ জাতীয় খাবার তৈরি ও রেস্টুরেন্টগুলোয়। এ ছাড়া বাজারে যেসব পটেটো চিপস বিক্রি হয়, তাতেও টেস্টিং সল্ট ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সাবেক উপদেষ্টা ও জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, টেস্টিং সল্ট সাধারণত খাবারের স্বাদ বাড়াতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে টেস্টিং সল্ট ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে; কিন্তু আমাদের দেশে এটি বেশি পরিমাণে ব্যবহার হচ্ছে। টেস্টিং সল্ট বেশি ব্যবহার করলে কিডনি, লিভারসহ বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষতি করতে পারে। মানুষের উচিত টেস্টিং সল্ট ব্যবহার না করে আয়োডাইজড সল্ট ব্যবহার করা। টেস্টিং সল্টের বিষয়ে আমাদের দেশে কোনো স্ট্যান্ডার্ড নেইÑ এটি একটি বড় সমস্যা।

বিজ্ঞানের ভাষায় ‘স্নায়ুবিষ’ আর ভোজনরসিকের ভাষায় এটি ‘টেস্টিং সল্ট’। যারা চায়নিজ খাবারে বেশি অভ্যস্ত তাদের রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বেশি। অনেকে আবার বাসায় তৈরি নাস্তাতেও নিয়মিত টেস্টিং সল্ট ব্যবহার করেন; তারাও বিভিন্ন রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হতে পারেন।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, টেস্টিং সল্ট ভালো জিনিস নয়। যারা নিয়মিত এটি খায় তাদের জন্য মারাত্মক সমস্যা হতে পারে। এটি বেশি ব্যবহার করলে স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি হতে পারে। এ ছাড়া মাথাব্যথা, বমিবমি ভাব, ঘুমঘুম ভাব, অনিন্দ্রা, খাবারে অরুচি, স্মৃতিশক্তি হ্রাস, বুকের ব্যথা, দুর্বল লাগা, স্কিনর্যাশ, গলায় জ্বালা, পিপাসা বৃদ্ধি, কাজ করতে অনীহা, কানে ভোঁ-ভোঁ শব্দ করা, হার্টের সমস্যা, কিডনি ও ক্যান্সারসহ বিভিন্ন জটিল রোগ হতে পারে। টেস্টিং সল্ট সবাই কম-বেশি খাচ্ছে। তবে আগে যে হারে ব্যবহার হতো, এখন মানুষ অনেক সচেতন হয়েছে। এতে ব্যবহার কমেছে; কিন্তু রেস্টুরেন্টের খাবারে এটি নিয়মিত ব্যবহার করা হচ্ছে। সেখানকার খাবারের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ নেই। এই জায়গায় সরকারের নিয়ন্ত্রণটা কীভাবে হতে পারে, সেটি দেখার বিষয়। এটি যদি রুলস অ্যান্ড রেজুলেশনসে আনা যায়, তাহলে হয়তো টেস্টিং সল্টের ব্যবহার কমিয়ে আনা যাবে।

অলিগলির দোকানে বিক্রি হচ্ছে : দেশের নামিদামি কোম্পানিসহ বিভিন্ন কোম্পানি টেস্টিং সল্ট উৎপাদন করছে। উৎপাদিত এ পণ্য নামিদামি দোকানসহ অলিগলির দোকানে দেদার বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর রামপুরা ও মগবাজার এলাকার বিভিন্ন দোকানে এ পণ্য পাওয়া যায়। দেশের একটি গ্রুপ অব কোম্পানিসহ বিভিন্ন কোম্পানি টেস্টিং সল্ট তৈরি করছে। ছোট ছোট প্যাকেট করে বিক্রি হচ্ছে। ৫০ গ্রাম ওজনের এক প্যাকেট টেস্টিং সল্টের খুচরা মূল্য নেওয়া হচ্ছে ২০ টাকা। এই হিসাবে এক কেজি টেস্টিং সল্টের মূল্য দাঁড়ায় ৪০০ টাকা। পণ্যটি সহজলভ্য হওয়ায় মানুষ বিভিন্ন খাবার তৈরিতে ব্যবহার করছে। যারা এসব টেস্টিং সল্ট ব্যবহার করছেন, তারা এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে অবগত নন। নিজের অজান্তে টেস্টিং সল্ট ব্যবহার করে শরীরে বিষ প্রবেশ করাচ্ছেন।

মানবদেহের নীরবঘাতক টেস্টিং সল্ট ব্যবহারে ভালো-মন্দ দেখার সরকারি কোনো অথরিটিও নেই। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই) যেসব খাদ্যদ্রব্য মনিটর করে সেই তালিকায়ও নেই পণ্যটি।

টেস্টিং সল্ট দেশে উৎপাদন ও বিপণন হয় বলে স্বীকার করেন বিএসটিআইয়ের সহকারী পরিচালক কেএম হানিফ। তিনি বলেন, বিএসটিআই ১৫৪টি পণ্যের দেখভাল করে থাকে। এর মধ্যে টেস্টিং সল্ট আইটেমটি নেই। এ নামে আদৌ কোনো পণ্য আমদানি হয় কিনা; টেস্টিং সল্ট নামে আমদানি করার কথাও না। এটি কী নামে আমদানি হয়, তা নিশ্চিত নই। তবে মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য নয়। আইনগতভাবে এটি উৎপাদন ও বিপণন কাজে বাধা দেওয়ার এখতিয়ার বিএসটিআইয়ের নেই। এটি আমদানি, উৎপাদন ও বিপণনে বিএসটিআইয়ের কোনো অনুমোদন নিতে হয় না। ফলে বিএসটিআই এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে যদি কেউ অভিযোগ করেন, তাহলে মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট বা টেস্টিং সল্টের যদি কোনো স্ট্যাডার্ন্ড থাকে তাহলে সে হিসেবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, মাসখানেক আগে জাপানি একটি টিম এসেছিল, তার জানতে চেয়েছিল টেস্টিং সল্টের অনুমোদন দেওয়া হয় কিনা এবং কোনো স্ট্যাডার্ন্ড আছে কিনা। আমরা তাদের জানিয়ে দিয়েছিÑ টেস্টিং সল্টের কোনো অনুমোদন দেওয়া হয় না; এর কোনো মানও নেই।

উৎসঃ আামদের সময়

ad

পাঠকের মতামত