191482

ইজতেমায় অংশ নেবেন না মাওলানা সাদ

বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিচ্ছেন না বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিতে বাংলাদেশে আসা দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজের মুরব্বি মাওলানা সা’দ কান্ধলভি । ঢাকায় তার আগমন নিয়ে রাজপথে মুসল্লীদের বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ ও তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ার পর এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সরকারের তরফ থেকে বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাবলীগের আয়োজক ও ‍মুরব্বীদের। তারা সরকারের কাছে এব্যাপারে তাদের বক্তব্য জানিয়ে দিয়েছেন। এরপরই ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া জানান, মাওলানা সাদ ইজতেমায় অংশ নিচ্ছেন না।

মাওলানা সাদ কান্ধলভী বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। তবে তিনি সরাসরি ভারত থেকে রওনা না দিয়ে ব্যাংকক হয়ে ঢাকায় আসার পর তার আগমনের বিরুদ্ধে রাজপথে বিক্ষোভ হওয়ার কারণে বিমানবন্দরে কয়েক ঘন্টা আটকে থাকেন। এরপর পুলিশ প্রহরায় কাকরাইল মসজিদে পৌঁছান। অন্যদিকে বাংলাদেশে প্রবেশ না করে তাকে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার দাবিতে বিমানবন্দর চত্বর, সড়ক সহ প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে তাবলীগের একাংশের সমর্থক মুসল্লীরা। বৃহস্পতিবার সকালে ফের তারা সড়কে নেমে বিক্ষোভ করতে থাকে এবং এক পর্যায়ে কাকরাইল মসজিদ অভিমুখে অগ্রসর হলে পুলিশ তাদের নিয়ন্ত্রণ করে। পুলিশ কাকরাইল মসজিদ ঘিরে রেখেছে। সাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীরা বায়তুল মোকাররম মসজিদে অবস্থান করছে।

এর আগে সা’দ বিরোধীরা জাতীয় প্রেসক্লাবে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। তাদের বায়তুল মোকাররম মসজিদের দিকে হটিয়ে দেয় পুলিশ। বিক্ষোভরত তাবলীগ কর্মীরা বলছেন, মাওলানা সা’দ ঢাকা ত্যাগ না করা পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলবে। তাবলীগের কর্মীরা প্রেসক্লাবে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এখানেই আমরা অবস্থান নেব।

রমনা জোনের ডিসি মারুফ হোসেন সর্দার জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে তাবলীগকর্মীরা প্রেসক্লাবে প্রবেশের চেষ্টা চালায়। পুলিশ তাদের বাধা দেয় এবং বায়তুল মোকাররম মসজিদের ভেতর ঠেলে দেয়। তারা এখন সেখানেই অবস্থান করছে। তিনি বলেন, তাবলীগকর্মীরা জড়ো হলে প্রেসক্লাবের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষকদের সমস্যা হবে। তাই তাদের প্রতিহত করা হয়েছে।

রমনা থানার ওসি কাজী মাইনুল জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। কোনও ধরনের ঝামেলা নেই। পুলিশ সদস্যরা প্রেসক্লাব ও কাকরাইলে সতর্কতার সঙ্গে অবস্থান করছেন।

এদিকে বিশ্ব ইজতেমায় মাওলানা সা’দের অংশগ্রহণ ঠেকাতে কওমি মাদ্রাসার ছাত্রদের কাকরাইল মসজিদ ও ইজতেমা মাঠে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আল্লামা আবদুল কুদ্দুছ। এর আগে তিনি বলেছিলেন, মাওলানা সা’দকে কোনও অবস্থাতেই ইজতেমা মাঠে যেতে দেওয়া হবে না। আমাদের কওমি মাদ্রাসার ছেলেরা ইজতেমা মাঠের মঞ্চ পাহারা দেবে। দুই হাজার ছাত্র কাকরাইল মসজিদের সামনে অবস্থান নেবে এবং চার হাজার ইজতেমা মাঠে যাবে।

এর আগে সা’দ বিরোধীরা জাতীয় প্রেসক্লাবে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। তাদের বায়তুল মোকাররম মসজিদের দিকে হটিয়ে দেয় পুলিশ। বিক্ষোভরত তাবলীগ কর্মীরা বলছেন, মাওলানা সা’দ ঢাকা ত্যাগ না করা পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলবে। তাবলীগের কর্মীরা প্রেসক্লাবে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এখানেই আমরা অবস্থান নেব।

বিক্ষোভকারীরা বলছেন, এবারের ইজতেমায় মাওলানা সাদের অংশ নেয়ার বিষয়ে তারা আগে থেকেই বিরোধিতা করে আসছেন। তাদের আশ্বাসও দেয়া হয়েছিল যে, মাওলানা সাদ এবার আসছেন না।

এর আগে মাওলানা সাদ ‘তাবলীগ করা ছাড়া কেউ বেহেশতে যেতে পারবে না, বলে বক্তব্য দেয়ায় তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসা। সেখান থেকে মাওলানা সাদকে এ বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু তিনি উল্টো যুক্তি দেন। এ নিয়ে মাওলানা সাদের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় ওঠে। একপর্যায়ে দেওবন্দ মাদ্রাসার অনুসারী বাংলাদেশের আলেমরা তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তারা তাকে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমায় আসতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তাবলীগ জামাতের বাংলাদেশ শাখার ১১ শূরা সদস্যের মধ্যে ছয়জনই আলেমদের এ সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন।

গত ৬ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে আলেমরা সাক্ষাৎ করে মাওলানা সাদের ঢাকা সফরের ওপর নিষেধাজ্ঞার দাবি জানান।এর পর দিন যাত্রাবাড়ীর জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়ায় মাওলানা সাদকে নিয়ে বৈঠকে বসেন তবলিগ জামাতের মুরুব্বি ও কওমি আলেমদের সমন্বয়ে গঠিত একটি কমিটি। এতে বাংলাদেশ তবলিগের শূরা সদস্য ও উপদেষ্টারাও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উপস্থিত ২১ জনের মধ্যে ১৩ জন ইজতেমায় মাওলানা সাদের উপস্থিত না থাকার পক্ষে মত দেন।

এরা হলেন- বেফাকের সিনিয়র সহসভাপতি মাওলানা আশরাফ আলী, জামিয়া মাদানিয়া বারিধারার মুহাদ্দিস মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, তবলিগের শূরা সদস্য মাওলানা মোহাম্মাদ যোবায়ের, মাওলানা মুহাম্মাদ হোসাইন ও মাওলানা ফারুক, বেফাকের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, হাটহাজারী মাদ্রাসার সহকারি শিক্ষা সচিব মাওলানা আনাস মাদানী, তবলিগের শূরা সদস্য মাওলানা উমর ফারুক ও মাওলানা রবীউল হক, শাইখ জাকারিয়া, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক মাওলানা মিজানুর রহমান সাঈদ, হাটহাজারীর মুফতি কেফায়াতুল্লাহ, মাওলানা মুফতি মোহাম্মাদ আলী (আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদের প্রতিনিধি), ভারত সফরকারী প্রতিনিধি দলের সদস্য জামিয়া রাহমানিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহফুজুল হক। তবে এ বৈঠকের পর দিন ৮ জানুয়ারি ঢাকার কাকরাইলের মুরুব্বি প্রকৌশলী সৈয়্দ ওয়াসিফুল ইসলাম বিশ্ব ইজতেমায় মাওলানা সাদকে আনতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেন।

ad

পাঠকের মতামত