191549

চিকিৎসক ব্ল্যাকমেইল করে একাধিকবার ওই তরুণীকে ধর্ষণ করে

আলতো ভাবে শরীর স্পর্শ করেন ডাক্তার। পরীক্ষা করেন শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ। চর্ম রোগে আক্রান্ত এক রোগী ডাক্তারের কাছে গেলে প্রথম দিনেই এমন ঘটনা ঘটান ডাক্তার নামের ধর্ষক। ভয় দেখান এই বলে-তুমি জটিল রোগে আক্রান্ত। ঠিকমতো চিকিৎসা না হলে কিডনি নষ্ট হয়ে যাবে। এমনকি ক্যানসারও হতে পারে।

ভয় পেয়ে যায় তরুণী। ডাক্তার আশ্বস্ত করেন, চিন্তা করো না- দেশে এই রোগের জন্য বড় মাপের ডাক্তার আমিই। আপাতত একটা মলম লাগিয়ে দিচ্ছি। এসব কথা বলতে বলতেই শরীরের জামা খোলার চেষ্টা করেন। তিনি ডাক্তার রিয়াদ সিদ্দিকী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চর্ম ও যৌন বিভাগের মেডিক্যাল অফিসার। ঢাকা থেকে ভোলায় গিয়ে প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখেন মাসের নির্দিষ্ট দিনে। তরুণীর শরীরে সাদা দাগ সৃষ্টি হচ্ছে। এ নিয়ে চিন্তিত পরিবার। এ কারণেই ঢাকা থেকে যাওয়া বড় ডাক্তারকে দেখানোর সিদ্ধান্ত নেন। প্রথম দিনেই কথোপকথনের একপর্যায়ে মলম লাগানোর কথা বলে শরীরের পোশাক খোলার চেষ্টা করেন ডাক্তার রিয়াদ।

তরুণী বাধা দেন। রিয়াদ বলেন, ‘ডাক্তারের প্রতি ভরসা রাখতে হবে। লজ্জা রাখলে হবে না। তোমার শরীর দেখে মলম দিতে হবে। ওষুধ দিতে হবে।’ ওই তরুণী জানান, এভাবেই কৌশলে একের পর এক জামা খোলে বিবস্ত্র করা হয় আমাকে। মলম লাগানোর নামে স্পর্শকাতর স্থানে হাত বুলান রিয়াদ। তরুণীকে মানসিকভাবে দুর্বল করেন। বিবস্ত্র করার মধ্যেই শেষ নয় বিষয়টি। এক পর্যায়ে ভয়-ভীতি দেখিয়ে, ব্ল্যাকমেইল করে তরুণীর সম্ভ্রম লুটে নেয় ডাক্তার রিয়াদ। চিকিৎসার জন্য ভোলা থেকে ঢাকা আসতে হয়েছে তাকে। এ সময়ে একাধিকবার ধর্ষণের শিকার হয়েছেন তরুণী। সর্বশেষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাক্তারের বিশ্রামাগারে তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়। সরকারি এই প্রতিষ্ঠানে ধর্ষণের ঘটনা ঘটলেও সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এমনকি কোনো তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়নি। এ ঘটনায় মামলা হলেও গ্রেপ্তার করা হয়নি ওই ডাক্তারকে।

নির্যাতিত তরুণী ভোলার একটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। দীর্ঘদিন থেকেই চর্মরোগে ভুগছিলেন। তরুণী ও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে ঘটনার সূত্রপাত গত বছরের অক্টোবরে। ভোলা জেলা সদরের সদর রোডের যমুনা মেডিক্যাল সার্ভিসেস নামক প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা করাতে যান চর্ম রোগাক্রান্ত ওই তরুণী। মাসে একাধিকবার ঢাকা থেকে সেখানে গিয়ে রোগী দেখেন ডা. মো. রিয়াদ সিদ্দিকী। তার চেম্বারের সামনে অপেক্ষারত থাকেন রোগীরা। পেছনে আলাদা কক্ষে রোগী দেখেন রিয়াদ। রোগ নিরূপণ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সুদর্শনা ওই তরুণীর পরিচয় জেনে নেন। তরুণীর কাছাকাছি যেতে রিয়াদ কথা বলেন তার মা-বাবার সঙ্গে। নিজেকে দেশের বড় মাপের ডাক্তার দাবি করে আশ্বস্ত করেন তরুণীর পরিবারকে।

চিন্তার কোনো কারণ নেই। তিনি রোগীর পাশে আছেন। চিকিৎসা দেবেন। এভাবেই চিকিৎসার নামে তরুণীর সঙ্গে ভিন্নরকম সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। রিয়াদের কথামতো ২৯শে ডিসেম্বর আবার তার কাছে যান ওই তরুণী। এবারও একই কায়দায় বিবস্ত্র করেন তাকে। জড়িয়ে ধরেন। তরুণী বাধা দেন।

কান্না করেন। তাৎক্ষণিকভাবে ডাক্তার রিয়াদ ওড়না দিয়ে তার মুখ বাঁধেন। হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আগের বিবস্ত্র করার দৃশ্য ভিডিও করা আছে। চিৎকার করলে তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়া হবে। ওই তরুণী কৃষক পরিবারের সন্তান। সর্বশেষ চর্ম ও যৌন বিভাগের ডাক্তার রিয়াদ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলা করেছেন রাজধানীর শাহবাগ থানায়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক রিপন কুমার বিশ্বাস বলেন, গত ৩১শে ডিসেম্বর ওই তরুণী চিকিৎসা করাতে বিএসএমএমইউতে ডা. রিয়াদের কাছে যান।

তখন হাসপাতালে নিজস্ব চেম্বারে ডা. রিয়াদ তাকে ধর্ষণ করেন বলে ওই তরুণী অভিযোগ করেছেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়, ইতিপূর্বেও চিকিৎসার নামে একাধিকবার ওই তরুণীকে ধর্ষণ করে ভিডিও ধারণ করে রাখা হয়েছে এবং কাউকে বললে ভিডিও ছড়িয়ে দেয়া হবে বলে হুমকি দেন ডা. রিয়াদ। মঙ্গলবার আদালতে তরুণীর জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। ডা. রিয়াদ বর্তমানে পলাতক রয়েছেন বলেও জানান শাহবাগ থানার এসআই রিপন।

ad

পাঠকের মতামত