191268

আপনার অজান্তেই যেভাবে হারাচ্ছেন সন্তান ধারণের সক্ষমতা!

বর্তমান সময়ে ক্রমশ গর্ভধারণ সহ সন্তান জন্মদানের সক্ষমতা হারাচ্ছেন অনেক দম্পত্তি। সাম্প্রতিক বিভিন্ন পরিসংখ্যানে ও চিকিৎসকদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী এ সংখ্যা প্রকট আকার ধারন করছে। অনেকটা না জেনেই অথবা প্রয়োজনীয় সচেতনতার অভাবেই এই সক্ষমতা হারাচ্ছেন হাজারো -লাখো দম্পত্তি । ফলশ্রুতিতে সংসারে ও দাম্পত্য জীবনে আসছে নানা বিড়ম্বনা ও হতাশা । এমন ঘটনার ফলে বিবাহ বিচ্ছেদ থেকে শুরু করে ঘটছে নানা ধরনের অনাকাংখিত ঘটনা । অথচ আমাদের কারোই এসব কাম্য নয়। বাচতে হলে জানতে হবে । আজ পাঠকদের জন্য ‘বন্ধ্যাত্বের কারণ সহ সমাধানের বিষয়ে বিশেষজ্ঞের ডাইরি থেকে থাকছে নানা পরামর্শ –

বন্ধ্যাত্ব কি ?
দুই বছর বা এর অধিক সময় কোন ধরনের জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ছাড়া গর্ভধারণে ব্যর্থ হলে তাকে ডাক্তারি ভাষায় বন্ধ্যাত্ব হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। প্রতি ১০০ জন দম্পতির মধ্যে ৮৪ জন প্রথম বছরে এবং ৯২ জন দ্বিতীয় বছরের মধ্যে গর্ভধারণ করতে সমর্থ হন। তাই বলা যায় প্রতি ১০০ জন দম্পতির মধ্যে ৮ জন বন্ধ্যাত্বের শিকার হন।
এক বছর বা এর অধিক সময় কোন ধরনের জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ছাড়া গর্ভধারণে ব্যর্থ হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। তবে বয়স ৩৫ এর বেশি থাকলে ৬ মাস চেষ্টার পরই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।

বন্ধ্যাত্বের কারণ সমুহ
বন্ধ্যাত্বের বহুবিধ কারণ থাকে, স্বামী-স্ত্রী যেকোন একজন বা উভয়ের ক্ষেত্রে সমস্যা থাকতে পারে। গর্ভধারণের জন্য দরকার একটি সুস্থ্ ওভাম(ডিম),সবল বীর্য ও নরমাল ইউটেরাস বা জরায়ু। এর যেকোন জায়গায় সমস্যা হলে গর্ভধারণে ব্যর্থতা দেখা দিতে পারে।

প্রাথমিক ভাবে বন্ধাত্ব্যের কারণকে তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। এগুলো হচ্ছে এনুভলেশন(ডিম্বাশয় থেকে ওভাম বা ডিম নিঃসরণ না হওয়া), জরায়ু বা ডিম্বনালীর সমস্যা এবং পুরুষ সঙ্গীর সমস্যা।

ওভুলেসন বা ডিম্বস্ফুটন না হওয়ার কিছু কারণ সমুহ
পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমঃ

হরমনের অস্বাভাবিক মাত্রায় নিঃসরণঃ কিছু কিছু হরমোন যেমন প্রলেক্টিন,থাইরয়েড হরমোন অথবা পিটুইটারি FSH, LH হরমোনের অস্বাভাবিক মাত্রায় নিঃসরণ ওভুলেশন ব্যাহত করে।

ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি বা কম থাকা।

প্রিমেচিউর ওভারিয়ান ফেইলিউরঃ

অতিরিক্ত মানসিক চাপ।

অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, ক্যান্সার কিংবা কিডনি রোগেও অভুলেশন ব্যাহত হতে পারে।

কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি সাময়িক বা পুরোপুরি ভাবে ওভারিকে অকার্যকর করে দিতে পারে।

জরায়ু বা ডিম্বনালীর সমস্যাঃ

জারায়ুর টিউমার যেমন এডিনোমায়োসিস,ফাইব্রয়েড বা পলিপ।

পেলভিক ইনফ্লামেটরি ডিজিজ (পি আই ডি) অথবা যেকোনো ইনফেকশনের কারণে ডিম্বনালী বন্ধ হয়ে ওভাম এবং শুক্রানু নিষিক্তকরনের পথ বন্ধ করে দিতে পারে।

এন্ডোমেত্রিওসিস বন্ধ্যাত্বের একটি পরিচিত কারণ। এ রোগের লক্ষণ মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, পেটে ব্যথা ইত্যাদি।

ইনফেকশন বা এন্ডোমেত্রিওসিস জরায়ু এবং এর আশে পাশের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক এনাটমি নষ্ট করে বন্ধাত্ব্যের কারণ ঘটায়।

মেল(পুরুষ) ফ্যাক্টরঃ ৩০% ক্ষেত্রে পুরুষ সঙ্গীর সমস্যার কারণে বন্ধ্যাত্ব হতে পারে।

শুক্রানু বা বীর্য যথেষ্ট গতিশীল না হলে বা অস্বাভাবিক গঠনগত কারণে বন্ধ্যাত্ব হতে পারে।

কোন কারণে শুক্রানু তৈরি ব্যাহত হলে, যেমন জিনগত ত্রুটি, ভেরিকোসেলি, টেস্টিসের টিউমার বা ইনফেকশন অথবা কোন ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া জনিত কারণে নরমাল শুক্রানু তৈরি বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে।

পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রেই গর্ভধারণের হার বয়স বাড়ার সাথে কমে যায়। ৩৫ বছরের পর থেকে মেয়েদের ওভুলেশনের হার কমতে থাকে, একইসাথে শুক্রানুর কার্যকারীতাও বয়সের সাথে সাথে কমে। তাই এই চিকিৎসায় বিলম্ব হলে সাফল্যের হারও কমে যায়।

বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় আই ইউ আই:
আই ইউ আই বা ইন্ট্রা-ইউটেরাইন ইনসেমিনেসন বন্ধ্যাত্ব রোগের একটি চিকিৎসা পদ্ধতি যেখানে হাজব্যান্ডের স্পার্মকে প্রক্রিয়াকরন করে ওয়াইফের জরায়ুতে স্থাপন করা হয়।

কাদের করা হয়?

আনএক্সপ্লেইন্ড ইনফারটিলিটি অর্থাৎ যখন বন্ধ্যাত্বের কোন যথাযথ কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না এবং ওভুলেশন ইনডুসিং মেডিসিন দিয়ে কনসিভ করতে ব্যর্থ হলে।

অল্প মাত্রায় স্পার্ম এবনরমালিটি থাকলে, যেমনঃ

অলিগোস্পারমিয়াঃ স্পার্ম এর পরিমাণ কম হলে।

এস্থিনোস্পারমিয়াঃ স্পার্ম এর মোটিলিটি বা গতি কম হলে।

টেরাটোস্পারমিয়াঃ স্পার্ম এর সাইজ এবং শেপ এবনরমাল হলে।

হাজব্যান্ডের ইজাকুলেশন জনিত সমস্যা থাকলে।

এছাড়াও এন্ডোমেত্রিওসিস এর কারণজনিত বন্ধ্যাত্ব, সারভিক্স এর মিউকাস সমস্যা, স্পার্ম এলার্জী ও জরায়ুর গঠনগত সমস্যা থাকলে আই ইউ আই করা হয়।

কীভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে?
আই ইউ আই দুই ভাবে করা যায়, ডিম্বস্ফুটন এর জন্য বাহ্যিক স্টিমুলেসন প্রদান করে অথবা প্রাকৃতিক ভাবে ডিম্বস্ফুটন এর জন্য অপেক্ষা করে। বাহ্যিক স্টিমুলেসন প্রদান করে ডিম্বস্ফুটন করলে কনসিভ করার হার বাড়ে। হরমোনের মাত্রা পরিমাপ করে বা ট্রান্স ভেজাইনাল আলট্রাসাউন্ড এর মাধ্যমে ডিম্বস্ফুটন পর্যবেক্ষন করা হয়।

ওভুলেশন হবার ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে স্পার্ম সংগ্রহ করে অপেক্ষাকৃত দ্রুত গতিসম্পন্ন ও স্বাভাবিক স্পার্ম গুলো আলাদা করা হয়। এরপর প্লাস্টিকের ক্যানুলা ও সিরিঞ্জের মাধ্যমে তা জরায়ুতে স্থাপন করা হয়। এটা স্থাপন করার পর কোন রকম ব্যথার ঔষধ দরকার হয় না। স্থাপনের ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর বাসায় যেতে পারবে এবং স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারবে। স্পার্ম স্থাপনের দুই সপ্তাহ পর প্রেগনেনসি টেস্ট করা হয়।

কোন ঝুঁকি আছে কী?
এই প্রক্রিয়ায় তেমন বড় ধরনের কোন ঝুঁকি নেই। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে যেই জটিলতাগুলো হতে পারে তা হলো-

স্পার্ম বা ক্যানুলা থেকে জরায়ু ও ডিম্বনালীতে জীবানুর সংক্রমণ ঘটতে পারে।

ডিম্বস্ফুটন স্টিমুলেটরি ঔষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জনিত জটিলতা ও একাধিক বাচ্চা গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকে।

সফলতার হার কেমন?

আই ইউ আই ৪- ৬ বার পর্যন্ত করা যায়। সফলতার হার বন্ধ্যাত্বের কারণের উপরে নির্ভর করে। সাধারণত প্রতি বারে কনসিভ করার চান্স থাকে ৮-১৮%।

৪ থেকে ৬ বার আই ইউ আই করার পর কনসিভ করতে ব্যর্থ হলে এর পরবর্তী পদক্ষেপ হচ্ছে IVF/ICSI (টেস্ট টিউব বেবী ) যা এই পদ্ধতির চেয়ে ব্যয়বহুল ও সময় সাপেক্ষ।

ad

পাঠকের মতামত