190892

মাহাথির মোহাম্মদ এত বছর পর কেন প্রধানমন্ত্রিত্বের লড়াইয়ে?

মালয়েশিয়ায় এবারের নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দলীয় জোট পাকাতান হারাপান-এর সঙ্গে মিলে প্রধানমন্ত্রী পদে লড়তে যাচ্ছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ।

৯২ বছর বয়সী ২০০৩ সালে ক্ষমতা হস্তান্তরের পর দীর্ঘ বিরতি দিয়ে এবার তিনি নিজ সরকারের উপ-প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইবরাহিমের দলের হয়েই নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছেন, যাকে অনৈতিক কর্মকাণ্ড ও দুর্নীতির অপবাদ দিয়ে নিজেই পদচ্যুত করেছিলেন; ১৫ বছর জেলও খাটিয়েছিলেন।

মাহাথির সক্রিয় প্রার্থী হিসেবে লড়তে যাচ্ছেন ইউনাইটেড মালয়স ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (ইউএমএনও) দলের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন জোট বারিসান ন্যাসিওনাল-এর বিরুদ্ধে। এই ইউএমএনও’র প্রধান হিসেবেই টানা ২২ বছর দেশ শাসন করেছিলেন তিনি।

কিন্তু সসম্মান স্বেচ্ছা-অবসরের এত বছর পর কেন আবার ক্ষমতার লড়াইয়ে এই বর্ষিয়ান রাজনীতিক? তাও আবার শত্রুর সঙ্গে হাত মিলিয়ে নিজের এক সময়কার দলের বিপক্ষে?

মালয়েশিয়ার সংবিধান অনুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধের কোনো এক সময় দেশটির বর্তমান সংসদ বিলুপ্ত হবে। এর দু’মাসের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা চতুর্দশ জাতীয় সাধারণ নির্বাচন।

গত বছরের জুনে মাহাথির দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছিলেন, বিরোধী দল অবশ্যই আগামী নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাককে হারানোর ক্ষমতা রাখে। ওই সময়ই আবারও সক্রিয় রাজনীতিতে অংশ নেয়ার সম্ভাবনা থাকার ইঙ্গিত দেন তিনি।

এরপর জুলাইয়েই তিনি আগামী নির্বাচনে লড়ার কথা বলেন ‘যদি’ পরিস্থিতি খুব খারাপ হয় এবং তার নির্বাচনে ফেরাটা জরুরি হয়ে পড়ে। বিরোধী রাজনৈতিক দল মালয়েশিয়ান ইউনাইটেড ইন্ডিজেনাস পার্টি (পিপিবিএম)-এর চেয়ারম্যান হিসেবে মাহাথির জানান, তার দলে বহু প্রার্থী রয়েছেন যাদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা রয়েছে।

মাহাথির মোহাম্মদ-মালয়েশিয়া
একত্রে থাকাকালে মাহাথির মোহাম্মদ ও আনোয়ার ইবরাহিম
‘চতুর্দশ সাধারণ নির্বাচনে আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবই সেটা নিশ্চিতভাবে বলছি না,’ বলেন তিনি, ‘পরিস্থিতি চূড়ান্ত পর্যায়ের খারাপ হয়ে গেলেই শুধু আমি নির্বাচনে দাঁড়াবো। এই মুহূর্তে পরিস্থিতি ততটা খারাপ মনে হচ্ছে না।’

কিন্তু মাহাথিরের দৃষ্টিতে সম্ভবত এবার পরিস্থিতি যথেষ্ট মরিয়া হয়ে উঠেছে। আর এ কারণেই আবারও ক্ষমতার দৌড় প্রতিযোগিতায় নাম লেখালেন তিনি।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে রয়েছে অসংখ্য দুর্নীতির অভিযোগ। এমনিতেও নিয়মানুযায়ী ২০১৮ সালের আগস্টের মধ্যে নাজিবকে অবশ্যই নির্বাচন আয়োজন করতেই হবে। তার ওপর আবার দুর্নীতির কেলেঙ্কারি। এমন সময় দ্বিতীয় দফা সমকামিতা ও দুর্নীতির অভিযোগে আরও ৫ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন মালয়েশিয়ার বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের সবচেয়ে জনপ্রিয় বিরোধী দলীয় নেতা আনোয়ার ইবরাহিম।

তাই এমন অবস্থায় দুই দশ ক্ষমতায় থাকা ‘জনপ্রিয় স্বৈরশাসক’ মাহাথির মোহাম্মদকেই নাজিব-শাসনের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। মালয়েশিয়ার বৃহত্তম রাজনৈতিক জোট বারিসান ন্যাসিওনালের বিরুদ্ধে নির্বাচনে জয় পেতে মাহাথিরের ভক্তদের সমর্থন খুব বেশি দরকার পাকাতান হারাপানের।

আপাতদৃষ্টিতে পাকাতান হারাপানের জন্য জয় এই মুহূর্তে কাম্য মূলত দু’টি কারণে: ১. দুর্নীতির দায়ে সমালোচিত নাজিব রাজাককে ক্ষমতা থেকে সরানো; আর ২. আনোয়ারের মুক্তি।

ডিসেম্বরে পরিচালিত এক উন্মুক্ত জরিপে দেখা যায়, বারিসান ন্যাসিওনালের সঙ্গে লড়ে পিপলস জাস্টিস পার্টি (পিকেআর) নেতৃত্বাধীন পাকাতান হারাপানের জন্য পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া যথেষ্ট কঠিন হবে। কেননা জোটের নিজের মধ্যেই রয়েছে নির্বাচন নিয়ে বিভেদ। সঙ্গে নির্বাচনী এলাকায় বিভাজনে আনা সাম্প্রতিক পরিবর্তনও জোটটির জন্য একটি বড় প্রতিকূলতা।

মাহাথির মোহাম্মদ-মালয়েশিয়াকিন্তু শেষ পর্যন্ত লড়ে জিততে পারলে পার্লামেন্টে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবার সম্ভাবনাও রয়েছে দলটি। আর আপাতত সেটা সম্ভব যদি মাহাথির থাকেন এই জোটের প্রার্থী।

পাকাতান হারাপান ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে দলীয় প্রধান হিসেবে আনোয়ারের রাষ্ট্রীয় ক্ষমার জন্য আবেদন করা হবে। কেননা মাহাথির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের পর তার উপ-প্রধানমন্ত্রী হবেন আনোয়ার ইবরাহিমের স্ত্রী এবং পিকেআর-এর বর্তমান প্রেসিডেন্ট ওয়ান আজিজাহ ওয়ান ইসমাইল। আনোয়ারকে একবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমার অধীনে মুক্ত করে আনলেই তিনি ক্ষমতাসীন জোটের প্রধান হিসেবে সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করার অনুমোদন পাবেন এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় বসতে পারবেন। তখন সরে দাঁড়াবেন মাহাথির।

অর্থাৎ আপাতদৃষ্টিতে বিশ্লেষণ করলে মনে হয়, মালয়েশিয়ায় উদারনৈতিক মূল্যবোধের প্রচারক এবং গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত হয়ে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা মাহাথির মোহাম্মদের অবসর গ্রহণের এত বছর পর আবারও নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় নামার উদ্দেশ্য ঠিক নিজে ক্ষমতায় থাকা নয়। বরং বর্তমান সরকারকে হটিয়ে পাকাতান হারাপানকে ক্ষমতায় আনা এবং এক সময়ের শত্রু আনোয়ার ইবরাহিমকে মুক্ত করে দেশের প্রধানমন্ত্রী বানানো। উৎস: চ্যানেল আই অনলাইন।

ad

পাঠকের মতামত