186402

অবাক করা তথ্য ফাঁস: একটি ‘নো বলে’র জন্য বোলারকে দেয়া হয় ২ কোটি টাকা!

ক্রিকেটে ফিক্সিং নিয়ে নতুন বিস্ফোরণ, আবারও সবার নজর গিয়ে পড়েছে বিশ্বের নানা প্রান্তের টি-টোয়েন্টি লিগগুলোর ওপর। যার মধ্যে রয়েছে আইপিএল এবং বাংলাদেশের বিপিএলও।

ইংল্যান্ডের ‘দ্য সান’ ট্যাবলয়েডের গোপন অভিযানে দুই ভারতীয় জুয়াড়ির সঙ্গে কথোপকথনে বেরিয়ে এসেছে আইপিএল-বিপিএল নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য। অন্যতম জুয়াড়ি, হিমাচল প্রদেশের হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে বয়সভিত্তিক বিভাগে খেলা সোবার্স জোবান দাবি করেছে, আইপিএলে দু’টি দলের সঙ্গে বেশ কয়েকটি ম্যাচে ফিক্সিং করেছেন।

 

শুধু আইপিএল বলে নয়, অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ বা বিপিএলেও রমরমা ফিক্সিং চলছে বলে জুয়াড়িদের কথোপকথনে বেরিয়ে এসেছে। এ সব লিগে প্রয়োজন হলে তারা স্পট ফিক্সিয়ের আয়োজনও করে দিতে পারে বলে ভারতীয় জুয়াড়িরা দাবি করে। এমনকী, জিম্বাবুয়েতে যে নতুন একটি ক্রিকেট লিগ চালু হচ্ছে, সেখানেও ফিক্সিং জাল তারা বিছিয়ে ফেলেছে বলে জানায় জোবান-রা।

লন্ডনের আন্ডারওয়ার্ল্ড জুয়াড়িদের লগ্নিকারী পরিচয় দিয়ে ভারতীয় জুয়াড়িদের কাছে এসেছিলেন ‘দ্য সান’-এর সাংবাদিকরা। জুয়াড়িরা নানা দেশের ক্রিকেটে বিছিয়ে থাকা ফিক্সিংয়ের জাল নিয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রস্তাব দেয়, জিম্বাবুয়ের নতুন লিগে টাকা লগ্নি করার। তারা এমনও জানায় যে, জিম্বাবুয়ের লিগে প্রচুর ম্যাচে ফিক্সিং হবে। তাদের কথা থেকে আরও জানা যায়, সিরিজের প্রথম বা শেষ ম্যাচে ফিক্সিং বেশি হয় না। কারণ এই দু’টি ম্যাচের উপর আইসিসির গোয়েন্দা বা বিভিন্ন দেশের ক্রিকেট সংস্থার দুর্নীতি দমন কমিশনের বেশি নজর থাকে।

ফিক্সিংয়ে নাম লিখিয়ে কত টাকা পেতে পারেন একজন ক্রিকেটার? দুই ভারতীয় জুয়াড়ির দেয়া ইঙ্গিত অনুযায়ী, একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে একটি ওয়াইড বল করার জন্য এক বোলারকে দেওয়া হয়েছিল প্রায় দু’কোটি টাকা। অঙ্কটা কত বড়, তা বোঝানোর জন্য একটি উদাহরণই যথেষ্ট।

ভারতীয় ক্রিকেট দলে সবচেয়ে বড় তারকা- যেমন বিরাট কোহলি, মহেন্দ্র সিংহ ধোনিরা এই মুহূর্তে বোর্ডের সঙ্গে চুক্তি থেকে সারা বছরে ২ কোটি টাকা ‘রিটেনার ফি’ পান। এর সঙ্গে প্রত্যেক ম্যাচের জন্য আলাদা করে ‘ম্যাচ ফি’ পান তারা। টেস্ট, ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টির জন্য আলাদা ‘ম্যাচ ফি’ রয়েছে।

ওভারের শেষ বলে উইকেট হারানোটা স্পট ফিক্সিংয়ে এখন খুবই জনপ্রিয় বলে জানা গিয়েছে। এর উপরেই কোটি কোটি টাকার বাজি হতে পারে। আইপিএলে ক্রিকেটারদের সঙ্কেতের ব্যাপারটিও খুব জোরালভাবে রয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় জুয়াড়িরা। এ ব্যাপারে ক্রিকেটারদের কাছে নাকি আগে থেকেই পরিষ্কার বার্তা চলে যায়। কখনও ক্রিকেটারেরা পরে নেন লাল রংয়ের ঘড়ি। আবার কখনও হাফ স্লিভ ছেড়ে ফুল স্লিভ টি-শার্ট পরে বল করতে এলেন কেউ।

সাধারণ দর্শকদের মনে হতে পারে, হয়তো বেশি শীত লাগছে বলে বোলার পাল্টে নিলেন গায়ের জামা। গ্যালারিতে বসে থাকা জুয়াড়িরা ‘স্পটার’ বুঝে গেলেন, ওটা আসলে একটা সিগন্যাল। অর্থাৎ, বাজি শুরু করো এবার। আগে থেকে ক্রিকেটারটির হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে ‘স্ক্রিপ্ট’। কোন ওভারে কত রান দিতে হবে। সেই অনুযায়ী তার বোলিং শুরু হয়ে যাবে তখন।

ক্রিকেট যেমন প্রায়ই দেখা যায়, বোলার বল করতে দৌড় শুরু করেও মাঝপথে থেমে যায়। এতদিন মনে করা হতো ছন্দ পাচ্ছেন না বলে বোলার থেমে গেছেন। টিমম্যান এই বোলার বাজে বল করতে চান না।

কে ভাবতে পারত, এটা আসলে একটা সঙ্কেত! গ্যালারিতে বসে আছে জুয়াড়ি। এটা তার জন্য বিশেষ ইশারা, ভারতের বাজির বাজারে টেলিফোন লাইন খুলে ফেলো। আমরা তৈরি।

অভিযুক্ত ১: সোবার্স জোবান
• ভারতে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেছেন। হিমাচল প্রদেশে জন্ম। খেলেছেন হিমাচল ও দিল্লির হয়ে হয়ে বয়সভিত্তিক বিভাগের ক্রিকেটে।
• গোপন ক্যামেরা অভিযানে ফাঁস করেছেন, গত দশ বছর ধরে ফিক্সিং করছেন আর এক ভারতীয় জুয়াড়ি প্রিয়াঙ্কা সাক্সেনার সঙ্গে।
• দিল্লির বসন্ত বিহারে থাকেন। সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল থেকে জানা যায়, বিলাসবহুল জীবন কাটান। বিদেশের দর্শনীয় স্থানে ঘুরে বেড়ান।

অভিযুক্ত ২: প্রিয়াঙ্কা সাক্সেনা

• জোবানের কথায়, বড় একজন তামাক ব্যবসায়ী প্রিয়াঙ্কা। দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্যবসায়িক যোগাযোগ রয়েছে।
• দিল্লির এই জুয়াড়িকেই এখন বিশ্ব ক্রিকেটে ফিক্সিংয়ে ‘মাস্টারমাইন্ড’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে।
• গোপন ক্যামেরা অভিযানে দাবি করেছেন, অনেক ক্রিকেটারকে চেনেন। দুর্নীতিগ্রস্ত ক্রিকেটারদের দিয়ে ‘কাজ’ও করাতে পারেন।
• জোবানের কথা অনুযায়ী, দিল্লি থেকে বেআইনি ফিক্সিংয়ের নেটওয়ার্ক চালান প্রিয়াঙ্কা।

সূত্র : আনন্দবাজার

ad

পাঠকের মতামত