186290

জেরুজালেম ইস্যুতে সৌদির ভূমিকায় ক্ষুব্ধ মুসলিম বিশ্ব

আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে একতরফাভাবে জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ও তেলআবিব থেকে দূতাবাস স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত ঘোষণায় বিশ্বজুড়ে সমালোচিত হচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল ট্রাম্প। মুসলিম বিশ্ব তো বটেই এ সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নও। আর ক্ষোভে ফুঁসছে আরব বিশ্ব। দেশে দেশে চলছে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ। পোড়ানো হচ্ছে ট্রাম্প ও ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর কুশপুত্তলিকা।

.
এমন প্রেক্ষাপটে সংকট উত্তরণে গতকাল (বুধবার ১৩ ডিসেম্বর) তুর্কি প্রেসিডেন্টের আহ্বানে ঐতিহাসিক ইস্তাম্বুল শহরে অনুষ্ঠিত হলো ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর শীর্ষ সম্মেলন। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইব এরদুগান বর্তমানে ওআইসির চেয়ারমান। এই শীর্ষ সম্মেলনে ওআইসিভুক্ত ৫৭টি মুসলিম দেশের ৪৮ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। লক্ষণীয় ব্যাপার হলো এতে অতিথি সদস্য হিসেবে অংশ নিয়েছেন ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো।

গতকাল সম্মেলন থেকে সম্মিলিতভাবে জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী ঘোষণা করা হয়। মার্কিন অবস্থানের বিরুদ্ধে সবাই সোচ্চার কণ্ঠে কথা বলেন। এতে করে মুসলিম বিশ্বে নতুন আশাবাদ তৈরি হয়েছে। পর্যবেক্ষক মহলের মতে, এই সম্মিলিত আওয়াজ এখন বিশ্বসম্প্রদায়ের সামনে জোরালভাবে তুলে ধরা দরকার। যাতে জাতিসঙ্ঘও এ ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা রাখে। যেমনটি সম্মেলনে দাবি জানিয়েছেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।

এদিকে শীর্ষ মুসলিম সম্মেলন নিয়ে সৌদি আরব নেতৃত্বাধীন জোটের ভূমিকায় মুসলিম বিশ্বে নতুন ক্ষোভের তৈরি হয়েছে হারামাইন শরিফাইন তথা দুই সম্মানিত শহরের খাদেম দেশ সৌদি আরবের বিরুদ্ধে।

সৌদি এ জোট কার্যত ইস্তাম্বুল সম্মেলন বয়কট করেছে। এতে সৌদি আরব, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের কোনো রাষ্ট্র কিংবা সরকারপ্রধান অংশ নেননি। তারা সম্মেলনে মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন। সম্মেলনে সৌদি আরব তাদের ধর্মমন্ত্রীকে পাঠিয়েছে। সৌদির ঘনিষ্ঠমিত্র মিশর আর সংযুক্ত আরব আমিরাত পাঠিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ের কর্মকর্তা। বাহরাইন তাদের আইনমন্ত্রীকে এই শীর্ষ পর্যায়ের সম্মেলনে পাঠিয়েছে।

আজ (বৃহস্পতিবার) আরব বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী মিডিয়া আল জাজিরা অনলাইন একটি ক্যারিকেচার ছাপিয়েছে। পত্রিকাটির সিনিয়র আর্টিস্ট আহমাদ রামাদানের আঁকা ওই ক্যারিকেচারের ক্যাপশনে লেখা হয়েছে :

ইস্তাম্বুলে কুদস নিয়ে শীর্ষ সম্মেলন..

অনুপস্থিত আরব ও মুসলিম নেতারা..

উপস্থিত ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট!!

ছবিতে দেখা যাচ্ছে মার্কিন পতাকা মোড়া ট্রাম্পের হাত ডিঙিয়ে ইস্তাম্বুলের ঐতিহাসিক ব্লু মসজিদের দিকে হাঁটছেন ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো। পক্ষান্তরে সম্মেলনে না এসে দূরে দাঁড়িয়ে আছেন কয়েকজন আরব নেতা। আর তাদের অংশগ্রহণ না করাকে বুড়ো আঙুল দিয়ে সাধুবাদ জানাচ্ছেন ট্রাম্প।

সৌদি জোট এমন সময় এ কাণ্ড ঘটাল যখন সৌদি আরবের সম্মতিতে ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা করেছেন এমন অভিযোগ উঠেছে। ট্রাম্পের ঘোষণায় বিবৃতিতেই সীমাবদ্ধ আছে সৌদি আরব। এমনকি সৌদি গণমাধ্যমে জেরুজালেম নিয়ে সংবাদ প্রকাশে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে দেশটির বিরুদ্ধে। সৌদির প্রায় সবক’টি শীর্ষ সংবাদমাধ্যমে জেরুজালেমের পরিবর্তে দেশটিতে সিনেমা হল বানানোর অনুমতির খবর নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছে।

অন্যদিকে, ট্রাম্পের জেরুজালেম ঘোষণা নিয়ে যখন সৌদি জোটের বাইরে গোটা মুসলিম বিশ্ব উত্তাল, তখন ‘শান্তির বার্তা’ নিয়ে ইসরাইল সফর করেছে বাহরাইনের একটি প্রতিনিধিদল। ওই প্রতিনিধিদলকে ফিলিস্তিনে ঢুকতে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ফিলিস্তিনিরা। এরই মধ্যে আজ সামনে এলো আগুনে ঘি ঢালা নতুন সংবাদ। বুধবার ইসরাইলের গোয়েন্দামন্ত্রী ইসরিয়েল কাটজ সৌদি আরবের যুবরাজকে এ সফরের আমন্ত্রণ জানান। খবর : এএফপি, হারেজৎ, স্পুটিনিক ও ডেইলি সাবাহ।

সৌদি পত্রিকা ইলাফ- এ বলা হয়েছে, জেরুজালেমকে রাজধানীর স্বীকৃতি নিয়ে গালফ দেশগুলোর সঙ্গে ইহুদি ইসরাইলের সম্পর্কের চরম অবনতি হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে শান্তি প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব দিতেই মুহাম্মদ বিন সালমান ইসরাইল সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, সৌদি নেতৃত্বাধীন এই জোটই কাতারের ওপর সর্বাত্মক অবরোধ আরোপ করেছে। এই সম্মেলনে কাতারের আমির এবং প্রেসিডেন্ট অংশ নিয়েছেন। শুরু থেকেই ট্রাম্পের ঘোষণার বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়ে আসছে কাতার।

ad

পাঠকের মতামত