186245

‘আমরা মরি কোনো সমস্যা নাই, নেত্রীকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে’

ভোরেই প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের কান্ডারী মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর সংবাদ পান। এই খবর তাঁকে আপ্লুত করে। টেলিফোনে শেখ হাসিনা কথা বলেন তাঁর ছেলের সঙ্গে। এরপর প্রধানমন্ত্রী মহিউদ্দিন চৌধুরীকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন। মন্তব্য করেন, ‘চট্টগ্রাম একজন অভিভাবক হারাল।’ চট্টগ্রামে কয়েকদফা ফোন করে প্রধানমন্ত্রী তাঁর খোঁজ-খবর নেন। এরপর মন্তব্য করেন, ‘একে একে প্রবীণরা চলে যাচ্ছে। আমারও যাবার সময় হয়ে গেছে।’ তরুণদের হাতে নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়ে শান্তিতে বিদায় নিতে চাই।’ ৭০ বছর বয়সী প্রধানমন্ত্রী এরপর আবেগ ধরে রাখতে পারেননি। তাঁর চোখ অশ্রুশিক্ত হয়ে ওঠে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উনি মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।’

১৯৮১ সালের ১৭ মে এক ঝাঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ পরিবেশে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ফিরে এসে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। এ সময় যাঁরা তাঁকে নি:শর্ত সমর্থন দিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের মূল সমস্যা ছিল দুই চৌধুরীর দ্বন্দ্ব। মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং আখতারুজ্জামান চৌধুরী ছিলেন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের দুই স্তম্ভ। শেখ হাসিনা দুজনকে নিয়ে বহুবার বসেছেন, কথা বলেছেন। বিরোধ না মিটলেও তাঁরা সংকটকালে শেখ হাসিনার জন্য ঐক্য করেছেন। চট্রগ্রামে শেখ হাসিনার কঠিনতম সময় ছিল ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি। ওই দিন লালদিঘীতে জনসভায় যাবার সময় স্বৈরাচারী এরশাদের নির্দেশে পুলিশ কমিশনার রকিবুল হুদা শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য গুলী চালায়। দুজন নির্ভীক কর্মী ঝাঁপিয়ে পরে নিজের জীবন দিয়ে রক্ষা করে শেখ হাসিনাকে। ওই সময় চট্রগ্রামের আন্দোলনের প্রাণ পুরুষ ছিলেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। উপস্থিত সবাইকে বলেছিলেন, ‘ আমরা মরি কোনো সমস্যা নাই, নেত্রীকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। শেখ হাসিনা বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে। শেখ হাসিনা বাঁচলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাঁচবে। তিনি না থাকলে আমরা জিরো।’ এ কথাটা তিনি বারবার বিভিন্ন সিনিয়র নেতাকে বলেছেন। ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে মহিউদ্দিন চৌধুরীর ভালো সম্পর্ক ছিলো। মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রায় সব মামলাই লড়তেন ড. কামাল হোসেন। একদিন ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে মহিউদ্দিন বললেন, ‘আপনি নেত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। দেখা করলেই দেখবেন, তিনি সব ভূলে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর মতই তাঁর হৃদয়। শেখ হাসিনার সঙ্গে দূরত্ব মানে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দূরত্ব।’ ড. কামাল হোসেন কিছু বলেননি। অনেক সময় চট্টগ্রাম নিয়ে নেত্রীর সিদ্ধান্তে কষ্ট পেয়েছেন, কিন্তু নেত্রীর প্রতি আস্থা হারাননি। তার প্রিয় মন্তব্য ‘শেখ হাসিনা ছাড়া আঁরা কন?’ (আমরা কে?) আর শোনা যাবে না। শেখ হাসিনাও অগাধ বিশ্বাসে বলবেন না ‘আমি কিছু জানি না, চট্টগ্রামে আমি গণ্ডগোল দেখতে চাই না।’ আওয়ামী লীগের একটা খূঁটি যেন সরে গেলো। বিদায় মহিউদ্দিন চৌধুরী। সূত্র-বাংলা ইনসাইডার

ad

পাঠকের মতামত