186146

গণধর্ষণের পর হত্যা করে চরম প্রতিশোধ!

নরসিংদীর শিবপুরের রাঘাব এলাকার কলাগাছিয়া নদী। খুব ভোরে মাছ ধরছিল দুই জেলে। তাদের চোখে পড়ে এক নারীর লাশ। তাদের হাঁকডাকে আশপাশের লোকজন ছুটে আসে। আসে পুলিশ। মহিলা পুলিশও ছিল তাদের সঙ্গে। নারীর শরীরে আঁচড়ের চিহ্ন। গলায় দাগ। পুলিশ সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে। নদীর পাড়ে তল্লাশি চালায়। খুঁজে পাওয়া যায় একটি মোবাইল ফোন।

পুলিশ ওই নারীর পরিচয় বের করতে সন্ধান চালায়। পুলিশ বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করে। মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে পুলিশ জানতে পারে নারীর নাম মাহমুদা আক্তার। তিনি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার বিল্লাল হোসেনের মেয়ে।

পুলিশ তদন্ত করতে যেয়ে জানতে পারে তার সাথে সুলতান নামে এক যুবকের বিয়ের হওয়ার কথা ছিল। সে তার বন্ধুবান্ধব নিয়ে ধর্ষনের পর হত্যা করে। পুলিশ জয়বগর চৌরাস্তা থেকে মোহাম্মদ ওসমানকে গ্রেফতার করে।

পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাতে কিশোরগঞ্জের লতিফাবাদ থেকে শফিকুল ইসলাম শরীফকে ও ভোলাইল থেকে সুলতানকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার ওসমান, শরীফ ও সুলতান জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আলমগীর আল মামুনের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

বিচার : ২০১৭ সালের অক্টোবরে নরসিংদীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. গোলাম রাব্বানী আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় দেন। দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের মৃত হোসেন আলী বেপারীর ছেলে সুলতান মিয়া ওরফে জামাই সুলতান (৩৫), একই উপজেলার মধ্যপানান গ্রামের আলী হোসেনের ছেলে শফিকুল ইসলাম শরীফ (৩২) ও নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার জয়নগর গ্রামের মৃত আ. মোতালিবের ছেলে ওসমান গনি (৩৪)।

মামলার অন্য একটি ধারায় তিনজনকে সাত বছর করে কারাদণ্ড এবং সুলতানকে এক লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক বছরের কারাদণ্ড ও বাকি দুজনকে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি কলাগাছিয়া নদীর তীর থেকে অজ্ঞাত পরিচয় এক নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় শিবপুর থানার এসআই মিজানুর ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেন। তদন্তের পর পুলিশ এই তিনজনকে গ্রেফতার করে।

তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, ওই নারী ময়মনসিংহের নান্দাইল থানার কিসমত আহমদাবাদ (চানপুর) গ্রামের মৃত বিল্লাল হোসেনের মেয়ে মাহমুদা আক্তার (২৮) বলে পরিচয় পাওয়া যায়। সেইসঙ্গে তাকে আসামিরা ধর্ষণের পর হত্যা করেছে বলেও স্বীকারোক্তিতে জানায়।

তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ১৪ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। মামলায় ২৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আদালত আসামিদের ফাঁসির রায় দিয়েছে। গোয়েন্দারা তদন্তে জানতে পারে সুলতান তার আগের পরিচিত। পরিবার বিয়েতে অমত দেওয়ায় কৌশলে মাহমুদাকে বাসা থেকে বের করে নিয়ে আসে সুলতান। শিবপুর নদীর পাড়ে নিয়ে তাকে দল বেঁধে ধর্ষণের পর হত্যা করে চরম প্রতিশোধ নেয়। সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন।

ad

পাঠকের মতামত