186205

অধিনায়ক ও একজন মাশরাফি ভাই

মাশরাফি বিন মুর্তজা। সতীর্থদের কাছে যিনি বটবৃক্ষের ছায়ার মতো। কারো কাছে বড় ভাই, আবার কারো কাছে আদর্শ। মাঠ কিংবা মাঠের বাইরে, সব জায়গাতেই আদর-শাসনে আগলে রাখেন তিনি। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) পঞ্চম আসর উপলক্ষে জাতীয় দলের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করা সেই সতীর্থরাই রুপ নিয়েছিল প্রতিপক্ষে। তবুও ভালোবাসার মুগ্ধতা ছড়াতে ভোলেননি বিপিএলের পাঁচ আসরের চারবারই শিরোপা জেতা মাশরাফি।

ম্যাচ চলাকালীন কত ফন্দিই না আঁটছিলেন তাদের বিরুদ্ধে! কিন্তু ম্যাচ শেষ হতেই এগিয়ে এসেছেন একজন বড় ভাই হিসেবে। বুকে টেনে নিয়েছেন পরম ভালোবাসায়। আগের ম্যাচের দুঃস্বপ্ন ভুলে পরের ম্যাচে কিভাবে সামনে এগিয়ে যাওয়া যায়, শিখিয়েছেন তার মন্ত্র। ভুল সংশোধন করে সামনে এগিয়ে যেতে দিয়েছেন অভয়। বিপিএলের পঞ্চম আসরে প্রায় প্রতি ম্যাচ শেষেই দেখা মিলছিল এমন দৃশ্যর।

যেমন – ম্যাচ হারার পর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে জড়িয়ে ধরা, ঝড়ো ইনিংস খেলার পর সাব্বির রহমানকে জড়িয়ে ধরে অভিনন্দন জানানো, অলরাউন্ড পারফরম্যান্স প্রদর্শন করা নাসির হোসেনের কপালে স্নেহের চুমু এঁকে দেওয়া। এছাড়াও তরুণ পেসার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে গাল টিপে আদর করে দেওয়া, ফাইনাল জেতার পর সাকিব আল হাসানকে কোলে তুলে নেওয়া সহ এমন অনেক দৃশ্যই দেখা গেছে সদ্য শেষ হওয়া বিপিএল জুড়ে।

তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাঝেও একজন বড় ভাই হিসেবে মাশরাফি আগলে রেখেছেন তার সতীর্থদের। এবারের আসরের সপ্তম ম্যাচেই চিটাগং ভাইকিংসের পেসার শুভাশিষ রায় তেড়ে গিয়েছিলেন মাশরাফি। সংবাদ সম্মেলনে কিন্তু সেই মাশরাফিই সবার আগে সর‍্যি বললেন। তারপরও যখন দেশ জুড়ে শুভাশিষকে ঘিরে সমালোচনার ঝড় বইছে, তখন তা থামাতেও এগিয়ে এসেছিলেন রংপুর রাইডার্সের এই অধিনায়ক।

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে পাঁচ ছক্কা খাওয়ার পর বিপিএলের সদ্য শেষ হওয়া আসরে রাজশাহী কিংসের বিপক্ষে এক ওভারে ৩২ রান দেন সাইফউদ্দিন। পরের ম্যাচে দেখা হতেই সাইফউদ্দিনকে কাছে টেনে নেন মাশরাফি। পরের ম্যাচে ভাল খেলার প্রেরণা দেন। এছাড়া শেষ ওভারে মার খাওয়া জাতীয় দলে পেস আক্রমণের সঙ্গী তাসকিন আহমেদকে ম্যাচ শেষে মাথায় হাত বুলিয়ে ভুল ধরিয়ে দেওয়ার দৃশ্যও নিঃসন্দেহে চোখ এড়ানি কারোর।

দলীয় যত খেলা আছে, তার মাঝে ক্রিকেটেই অধিনায়কের গুরুত্বই সবচেয়ে বেশি। মাঠে থাকা অবস্থাতেই মুহূর্তের মাঝে অধিনায়ককে নানা রকম সিদ্ধান্ত নিতে হয়। বোলিং পরিবর্তন, ব্যাটসম্যানের দুর্বলতা বুঝে ফিল্ডিং পরিবর্তন, অফ ফর্মে থাকা কোনো খেলোয়াড়কে সমর্থন দেওয়া, সব খেলোয়াড়ের সাথে সম্পর্ক ঠিক রাখা, একই সঙ্গে নিজের ফর্মের দিকে লক্ষ্য রাখা- কাজগুলো নিঃসন্দেহে কঠিন।

তবে মাঠের বাইরেও অধিনায়কের এমন অনেক কাজ থাকে। অভিভাবক হিসেবে সবাইকে আগলে রাখতে হয়। যেখানে মাশরাফির তুলনা কেবল মাশরাফি নিজেই। মাশরাফি হলেন সেই অধিনায়ক, যিনি হাঁটুর তীব্র ব্যথা নিয়েও সবার আগে বল ধরতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। দলে সেই বার্তাটা ছড়িয়ে দেন, নিজের জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়েই লড়াই করব। বাকিরা উজ্জীবিত হন, ঝাঁপিয়ে পড়েন। লড়াই করেন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। এ সব কারণেই মাশরাফি রীতিমতো বাংলাদেশের ক্রিকেটে কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছেন।

সূত্র: প্রিয়

ad

পাঠকের মতামত