186190

সানি লিওনের ‘ভয়ে কাঁপছে’ ভারত সরকার

 

ঘোমটা মাথায় দিয়ে বসে আছেন বলিউড কাঁপানো অভিনেত্রী সানি লিওন। স্বামী ঘরে প্রবেশ করতেই সেই ঘোমটা খসে যায় সানির। উঠে দাঁড়ান তিনি। খুলে ফেলেন নেকলেস, কোমরের বিছা, একে একে সব গয়না। ততক্ষণে স্বামীও নিজের জামা খুলে ফেলেছেন।

এর পর কয়েক সেকেন্ড দেখা গেলেও, বেশিদূর এগোননি তারা। শেষ হয়ে যায় দৃশ্য। তাতেই ঘাড়ে কপালে ঘাম জমতে শুরু করেছে মোদি সরকারের। ‘জাত গেল জাত গেল’ রব চারিদিকে।

কেউ বলে ‘ওরে বাচ্চাদের চোখে হাত চাপা দে। মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে নে। মাথা নিচু করে মোবাইল ফোনে ব্যস্ত হয়ে যা।’ ভয়ঙ্কর ভয় যেন চেপে ধরছে গলা। যদি কিছু হয়ে যায়।কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত, এত ভয় পেয়ে কী লাভ? তার চেয়ে বরং সানি লিওনকেই উড়িয়ে দেয়া যাক চোখের সামনে থেকে।

সানি লিওন এখানে প্রতীক মাত্র। তার অভিনীত একটি কনডোমের বিজ্ঞাপন থেকে উপরের দৃশ্যটির বিবরণ। যে বিজ্ঞাপন আট থেকে আশি বছরের সবার দেখা হয়ে গেছে গত কয়েক মাসে। বিভিন্ন টেলিভিশন ও ইন্টারনেটের নানা চ্যানেলের মাধ্যমে।

নান দিক থেকে অভিযোগ পেয়ে সরকার ঠিক করেছে, শুধু সানি অভিনীত বিজ্ঞাপনটি কেন? কনডোমের সব বিজ্ঞাপনকেই দিনের আলো থেকে সরিয়ে রাতের গভীর অন্ধকারে নিয়ে চলে যাওয়া দরকার। টিভিতে এই সব বিজ্ঞাপন দেখানো যাবে না সকাল ছয়টা থেকে রাত ১০টার মধ্যে। যা হবে সব গভীর রাতে।

মোদি সরকারের ধারণা টিভিতে না দেখলে আর কোথাও গর্ভনিরোধক কোনো বিজ্ঞাপনের মুখোমুখি হবে না শিশুরা। এই ডিজিটাল যুগে যেখানে ইন্টারনেটে গিয়ে ‘পি’ টাইপ করলেই ‘পর্নোগ্রাফি’ শব্দ চলে আসে সেখানে এমন নিষেধাজ্ঞা হাস্যকর বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

যে দেশে এক বছরে এক কোটি ৫৬ লক্ষ গর্ভপাতের ঘটনার কথা জানা যায় (ল্যান্সেট গ্লোবাল হেলথ রিপোর্ট), যে দেশের ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সিদের মধ্যে মাত্র ২৫ দশমিক সাত শতাংশ এইচআইভি প্রতিরোধ সম্পর্কে জানে (ইউএনএইডস), যে দেশে ৬২ হাজার মানুষ এইডস সম্পর্কিত অসুখে মারা যায়, সে দেশের সরকারের পক্ষে কনডোমের মতো গর্ভনিরোধকের বিজ্ঞাপন দেখানোর সময় নিয়ে নিষেধাজ্ঞাই সাজে।

নারীদের ক্ষমতায়নের কথা বলেন যে দেশের প্রধানমন্ত্রী, সে দেশের পরিবার পরিকল্পনায় পুরুষদের যোগদানের অন্যতম হাতিয়ার নিয়ে কথা না বলাই তো ‘পবিত্র কাজ’ বলে ক্ষোভ ঝাড়ছেন অনেকেই।

অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, সমস্যা কী আসলে? শিশুদের জন্য গর্ভনিরোধক বিজ্ঞাপন অশ্লীল নাকি অনুপযুক্ত? এই বিজ্ঞাপন ছাড়া শিশুমনে প্রভাব ফেলার মতো কোনো ‘আইটেম নম্বর’ দেখা যায় না টিভিতে সম্প্রচারিত সিনেমায়? কুটিলতায় ভরা টিভি সিরিয়াল দেখে শিশুমনে কোনো প্রভাব পড়তে পারে না?

বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০১৭ সালে দাঁড়িয়ে স্রেফ নৈতিকতার অজুহাতে একটি সামাজিক ও জনস্বাস্থ্যের সমস্যাকে মোকাবিলা করার একটি অস্ত্রকে কালো কাপড় মুড়িয়ে রেখে দেয়া অর্থহীন।

যুক্তরাজ্যেও রাত নয়টার আগে টিভি চ্যানেলে কনডোমের মতো বিজ্ঞাপন দেখানো যেত না। সম্প্রতি সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছে। সেখানে টিনএজারের মধ্যে গর্ভধারণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শুধু বলা হয়েছে, ছোটদের মধ্যে জনপ্রিয় কোনো টিভি অনুষ্ঠানের মধ্যে এই বিজ্ঞাপন দেখানো যাবে না।

সেখানকার অ্যাডভার্টাইসিং স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি বলছে, আমরা কোনো বিজ্ঞাপন নিয়ে অভিযোগ পেলে বিজ্ঞাপনের বিষয়বস্তু নিয়ে তদন্ত করতে পারি। কিন্তু যে পণ্যের বিজ্ঞাপন, তা নিয়ে আমাদের কোনো মতামত থাকতে পারে না।

সমস্যাটি সেখানেই। ভারত সরকার একটি বিজ্ঞাপনের আধেয় নিয়ে আপত্তির কারণে সেই বিজ্ঞাপনটি আইনত নিষিদ্ধ করতে পারে। কিন্তু তাই বলে ‘ভয় পেয়ে আর ভয় দেখিয়ে’ দিনের বেলায় গর্ভনিরোধক কোনো বিজ্ঞাপনই দেখানো যাবে না বলে যে ফতোয়া দিয়ে দিয়েছে, তা নিছক বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়।

ad

পাঠকের মতামত