186069

কেমন সিনেমা দেখতে চান সৌদিরা ?

বিনোদন ডেস্ক: প্রায় চার দশক পর প্রেক্ষাগৃহের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে সৌদি আরব সরকার। তিন কোটিরও বেশি মানুষের এ আনকোরা বাজার সিনেমা শিল্পের জন্য বিনিয়োগের দারুণ সুযোগ তৈরি করেছে। মার্কিন সিনেমা জায়ান্ট এএমসি এন্টারটেইনমেন্ট সুযোগটি কাজে লাগাতে সৌদি আরবে প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণ ও পরিচালনায় চুক্তি সই করেছে।

সৌদি আরবে ৩৫ বছর পর সিনেমার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়ার পর সৌদি নাগরিকরা কি ধরনের সিনেমা দেখতে চান টুইটারে তা নিয়ে সম্ভাব্য অনেক নাম ও ধারণা দিয়েছেন। টুইটারে এসব সিনেমার নাম থেকে সৌদি নাগরিকদের সিনেমা রুচি সম্পর্কে অনেকটা রসিকতা ও কৌতুকের বহি:প্রকাশ ঘটেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক একাধিক নাম দিয়ে এধরনের ছবি দেখার দারুণ ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন।

এমন কয়েকটি সিনেমার নাম হচ্ছে, ‘ ফাস্টিং এন্ড ফিউরিয়াস’ ‘রিটার্ন অব দি জেদ্দা’, ‘হোয়েন হারিরি মেট সালাফি’, ‘দি ডে আফটার বিন নায়েফ’, ‘দি কাতার গেমস’, ‘দি ফোরটি ইয়ার-ওল্ড ভার্জিন,’ ‘গন উইথ দি ওবলারস’, ‘ হেয়ারি পটার’, ‘স্লিপিং উইথ ইসরায়েল’, ‘সুন্নি ওয়ারস: দি লাস্ট সুফি’, ‘মুনসাইট’, ‘শিরক-৩’, ‘দি এ্যামাজিং সালাফি-ম্যান’, ‘দি ওলফ অব রিয়াদ’ ও ‘ দি ক্রনিক্যালস অব সালমান’।

এসব প্রস্তাবিত সিনেমার টাইটালে আরব শেখদের রাজনীতি, ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরবের গোপন সম্পর্ক নিয়ে তির্যক দৃষ্টিভঙ্গী উঠে এসেছে। কাতারের ওপর অবরোধের বিষয়টিও বাদ যায়নি। যেখানে বাক-স্বাধীনতার তীব্র অভাব রয়েছে সৌদিতে সেখানে ধর্মীয় এ রাজ্যের বিধিনিষেধ নিয়ে উপহাস করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সিনেমার নাম প্রকাশ করছেন অনেকে। তারা এসব সিনেমার নামকরণে পশ্চিমা সিনেমার নামকরণ বা টাইটেলও মাথায় রাখছেন।

এমন আরো কয়েকটি সিনেমার প্রস্তাবিত নাম হচ্ছে, ‘দি প্যাজিয়ন অব দি ইসা,’ ‘পাল্প ফিৎনাহ,’ ‘ডার্ক নাইট রিব্বা’, ‘ বোলিচ এ্যাকাডেমি,’ ‘পাইরাইটস অব দি কুরবান,’ ‘ দি নিকাহ বুক,’ ‘হোয়েন হালাল মেট সালাফি,’ ‘গেট রেডি টু লাফ,’ ‘ হ্যারি পটার এ্যান্ড দি প্রিজন অব রিৎজ-কার্লটন,’ ‘ আই নো হোয়াট ইউ এট লাস্ট রামাদান’, ‘ বিদা’হ বয়েস, বিদা’হ বয়েস, হোয়াট ইউ গনা ডু,’ ‘মিশন ইমপসিবল,’ ‘ দি ওয়াবি অব ওজে’, ‘ হারামিলটন’, ‘ রিটার্ন অব দি জেদ্দা’, ‘রিয়াদ অব দি লস্ট আর্ক,’ ‘জিনবাস্টারস,’ ‘টেন থিংস আই হেট এ্যাবাউট জিউ,’ ‘বিহাহিন্ড ইয়েমেনি লাইন্স’, ‘ হোয়েন হ্যারি মেট সালাফি’ ইত্যাদি।

পশ্চিমা ধাঁচ বা সংস্কৃতির সিনেমা সৌদি সিনেমা হলগুলোতে চলবে কি না, সে সম্পর্কে এখনো কিছু বলা হয়নি। তবে আগামী বছর মার্চ নাগাদ সৌদি সিনেমা হলগুলোতে দর্শকরা সিনেমা উপভোগ করতে পারবেন। ইরানের তৈরি চলচ্চিত্র বিশ্বে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ ও অস্কার পুরস্কার পেলেও দেশটির কোনো চলচ্চিত্র সৌদি আরবে প্রদর্শিত হবে কি না সে ব্যাপারেও কোনো সুস্পষ্ট ঘোষণা আসেনি। মিডিল ইস্ট আই

সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স অর্থাৎ ভবিষ্যৎ বাদশাহ মহম্মদ বিন সালমান বলেছেন, তাঁর দেশ আরও ‘উদারপন্থি’ ও ‘উন্মুক্ত’ হয়ে উঠবে৷ দেশ থেকে মৌলবাদী ইসলামি আদর্শ ‘দূর’ করারও অঙ্গীকার করেন তিনি৷ রিয়াদে বিনিয়োগকারীদের এক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন৷ ‘‘আমরা আগে যেমন ছিলাম সেই অবস্থায় ফিরছি – এমন একটি দেশ, যেখানে উদারপন্থি ইসলাম বিরাজমান এবং যেটি সব ধর্মের মানুষজন ও বিশ্বের জন্য উন্মুক্ত থাকবে,’’ বলেন সালমান৷ ৩২ বছর বয়সি এই ক্রাউন প্রিন্স বলেন, ‘‘আমরা শিগগিরই জঙ্গিবাদের যেটুকু বাকি আছে, তা সমূলে উৎপাটন করব – আমরা ইসলামের উদারপন্থি শিক্ষা ও নীতির প্রতিনিধিত্ব করি৷’’

সৌদি প্রিন্স মোহাম্মেদ বিন সালমান উদারীকরণের যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তারই অংশ হিসেবে দেশটিতে প্রেক্ষাগৃহ উন্মুক্ত করে দেয়া হলো। সৌদি যুবরাজ মূলত বিনোদনমূলক কৌশল গ্রহণের মাধ্যমে অজনপ্রিয় ভর্তুকি হ্রাস পদক্ষেপে ভারসাম্য আনতে চাইছেন। যদিও এজন্য ধর্মীয় মৌলবাদীদের রোষানলে পড়তে হচ্ছে তাকে।

সৌদি আরবের মোট জনসংখ্যার বেশির ভাগের বয়স ২৫ বছরের নিচে। এ তরুণ প্রজন্ম পার্শ্ববর্তী দেশে সিনেমা দেখতে চায় অথবা ইউটিউবে সিনেমা দেখে। এ অবস্থায় প্রেক্ষাগৃহের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পর বিশ্বের নামিদামি সিনেমা চেইনগুলো এখন সৌদির এ আনকোরা বাজারে প্রবেশে উন্মুখ হয়ে আছে। এরই মধ্যে এএমসি এন্টারটেইনমেন্ট চুক্তি সই করেছে। এএমসির পক্ষ থেকে দেয়া বিবৃতিতে ও সৌদির রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যমগুলোয় বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

তবে এএমসির চুক্তির বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি। এমনকি আর্থিক শর্তাবলিও এখন পর্যন্ত অপ্রকাশিত রয়েছে। আধুনিক বিনোদনজগতের কাছে নিজেদের উন্মুক্ত করায় সৌদি আরবে সিনেমা শিল্প দ্রুত এগিয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা করছে এএমসি। প্রতিষ্ঠানটির সিইও অ্যাডাম অ্যারন এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন, ‘সিনেমা শিল্পের জন্য এ ঘোষণা একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এটি সৌদির তিন কোটির বেশি জনসংখ্যার সঙ্গে এএমসির যোগসূত্র স্থাপনের অনন্য সুযোগ। কারণ আমরা জানি, সৌদির চলচ্চিত্রপ্রেমী নাগরিকরা সিনেমা দেখার জন্য প্রায়ই পার্শ্ববর্তী দেশগুলোয় যায়।’

কানসাসভিত্তিক এএমসি বিশ্বের বৃহত্তম প্রেক্ষাগৃহ পরিচালনাকারী কোম্পানি। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে কোম্পানিটির ১১ হাজার প্রেক্ষাগৃহ রয়েছে। তাদের অনেক প্রেক্ষাগৃহই অদেয়ন ব্র্যান্ডের আওতায় পরিচালিত হয়।

তবে সৌদি আরবে জাঁকিয়ে বসা এএমসির জন্য খুব একটা সহজ হবে না। কারণ কোম্পানিটিকে দুবাইয়ের ভিওএক্স সিনেমাসের মতো শক্তিশালী আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে। এরই মধ্যে ভিওএক্সের স্বত্বাধিকারী কোম্পানির সিইও মাজিদ আল ফোত্তিয়াম এএফপিকে সোমবার জানান, তারাও সৌদি আরবে ব্যবসা সম্প্রসারণের কথা ভাবছেন। তিনি বলেন, ‘সৌদি আরবে ভিওএক্স সিনেমার সম্প্রসারণে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের সৌদি গ্রাহকের সবাই ভিওএক্সের সঙ্গেই থাকবেন— এ বিষয়টি নিশ্চিত রাখতে চাই।’

সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা সিনেমা থিয়েটারগুলোকে লাইসেন্স প্রদানের কাজ শিগগিরই শুরু করবে। মার্চের মধ্যেই প্রথম প্রেক্ষাগৃহ চালুর আশা করছে দেশটি। ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০০টি প্রেক্ষাগৃহ চালুর পরিকল্পনা করছে সৌদি সরকার। দেশটির সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় আশা করছে, এ শিল্পের সুবাদে অর্থনীতিতে ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলার যুক্ত হবে।

ad

পাঠকের মতামত