185735

যুক্তরাষ্ট্রে আতঙ্কে প্রবাসী বাংলাদেশিরা

যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটনে বোমা হামলার ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে দেশটিতে বসবাসরত বাংলাদেশীদের মধ্যে। কারণ এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আকায়েদ উল্লাহ (২৭) নামে এক বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছে। নিউইয়র্ক পুলিশ জানিয়েছে, সাত বছর আগে আকায়েদ নিউইয়র্কে যান এবং সর্বশেষ তিনি ব্রুকলিনে বসবাস করছিলেন।

উল্লেখ্য, টাইম স্কয়ার সাবওয়ে স্টেশন থেকে বাসস্টেশনে যাতায়াতের ভূগর্ভস্থ পথে গতকাল সোমবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে সাতটার দিকে ওই বোমা বিস্ফোরণে আকায়েদ উল্লাহ গুরুতর আহত হয়েছেন। এ ছাড়া তিন পথচারীও সামান্য আহত হয়েছেন। আকায়েদ পেশায় ট্যাক্সি ড্রাইভার। নিউইয়র্কে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমন প্রায় ১০ হাজার উবার ও ট্যাক্সিচালক আছেন।

নিউইয়র্ক থেকে সাজ্জাদ রাকিব জানান, এ ঘটনার পর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে। সবার মধ্যে একধরনের চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।

ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশিদের তুলে ধরা প্রতিক্রিয়ায়ও স্পষ্টই আতঙ্কের ছাপ। নিউইয়র্কের ফিল্ম একাডেমির সাবেক ছাত্র প্রবাসী বাংলাদেশি আলী পি রিহান তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, নিউইয়র্কে আজ বাংলাদেশি হিসেবে পরিচয় দিতে গিয়ে লজ্জায় মারা যাচ্ছি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিউইয়র্কপ্রবাসী বাংলাদেশিদের

অনেকে সন্দেহভাজন হামলাকারী আকায়েদের ড্রাইভিং লাইসেন্সের ছবিও তুলে ধরছেন লেখালেখির সঙ্গে।
মিনহাজ আহমেদ নামে একজন তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, যদি আজ রাতে হয়? গাড়ি চালাতে লাইসেন্স, রেজিস্ট্রেশন ও ইন্স্যুরেন্সের কপি সঙ্গে রাখা বাধ্যতামূলক। ঘটনাক্রমে কাল রাতে আমার সঙ্গে শুধু লাইসেন্সই ছিল। তখন ম্যানহাটনে একটা গাড়ির সঙ্গে ঘষাঘষি ঘটে গেল। পুলিশ যখন রেজিস্ট্রেশন ও ইন্স্যুরেন্স দেখতে চাইল, আমি তখন আশঙ্কায় ছিলাম, পুলিশ না জানি কী করে! কিন্তু ঘটনাক্রমে আমার সঙ্গে পুলিশ খুবই বন্ধুসুলভ ও আন্তরিক আচরণ করেছে। আকায়েদের ঘটনার পর অজানা আশঙ্কায় ভুগছি। ভাবছি, আমাদের কী হবে।

নিউইয়র্ক প্রবাসী আরেক তরুণ লিখেছেন, এমন ঘটনা যদি আজ রাতে ঘটে এবং তিনি যদি জানতে পারেন, আমি বাংলাদেশি। তিনি কি একই আকায়েদের মতোই আচরণ করবেন? আমি আশাবাদী, তিনি করবেন না। ৯/১১-উত্তর পরিস্থিতি থেকে আমি সেই অভিজ্ঞতাই লাভ করেছি। আমি আরও ভাবছি, ওরাও কি আশা করছে যে, উদার আইন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর চোখ ফাঁকি দিয়ে পেছন দিয়ে কাজ সেরে ফেলতে পারবে? সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নিন্দা ও ঘৃণা জানাই।’

ট্রাম্প প্রশাসনের বিভিন্ন অভিবাসীবিদ্বেষী কর্মকা- নিয়ে প্রতিবাদকারী হিসেবে বেশকিছু কর্মকা-ে অংশ নিয়েছেন এবং প্রতিবাদ সংগঠিত করার কাজ করেন এমন একজন সোহেল মাহমুদ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ব্রুকলিনের ইস্ট ফর্টি এইট স্ট্রিটের বাসিন্দা আকায়েদ উল্লাহ। পুলিশ আর তদন্ত সংস্থাগুলো ঘিরে রেখেছে তার বাসা। তল্লাশি চলছে। আকায়েদ নাম জীবনে প্রথম শুনলাম আমি।
গতকাল তিনি ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, কিছুক্ষণ আগে ব্রুকলিনের একজন জানালেন, ছেলেটির বাড়ি নাকি সন্দ্বীপ। সন্দ্বীপ থেকে একজন জনপ্রতিনিধি জানালেন, ঢাকা থেকে পুলিশ সন্দ্বীপে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছেন আকায়েদ নিয়ে। নামধাম এদিক-ওদিক করে যুক্তরাষ্ট্রে আসা বহু পুরনো অভিবাসন-সংস্কৃতি। ‘আকায়েদ’ তেমন সংস্কৃতির সন্তান? হয়তো!

ব্রঙ্কসের একজন অভিবাসন আইনজীবী ও হেইট ক্রাইমবিরোধী সংগঠক মোহাম্মদ এন মজুমদার লিখেছেন, ধিক্কার জানাই তাদের, যাদের ঘৃণিত কর্মের দ্বারা দেশ ও জাতির বদনাম হয়। তিনি আরও লিখেছেন, সন্ত্রাসের কোনো ধর্ম নেই, জাতীয়তা নেই। একমাত্র পরিচয় সে সন্ত্রাসী এবং এদের সর্বোচ্চ শাস্তিই প্রাপ্য।
মহিতোষ তালুকদার নামের এক ব্যক্তি লিখেছেন, হামলায় যারা আহত হয়েছেন, তাদের জন্য আমার প্রার্থনা এবং সমবেদনা। সেই সঙ্গে, এটা একটা বাজে সকাল আমার জন্য, আমাদের জন্য, বাংলাদেশিদের জন্য। একটা লজ্জার সকাল আমার জন্য, আমাদের জন্য, বাংলাদেশিদের জন্য। ধিক ধিক ধিক আকায়েদুল্লাহ। বিজয়ের মাসে তোর মুখে একদলা থু!

এর বাইরে অনেকেই এ বিষয়ে কথা বলছেন এবং প্রতিবেশীসহ পরস্পরের খোঁজখবর নিচ্ছেন। এ ঘটনার প্রতিবাদ করার জন্য নিউইয়র্কের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত কয়েকশ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পুলিশ সদস্যের সংগঠন ‘বাংলাদেশ আমেরিকান পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন (বাপা)’ জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে। উৎস: দৈনিক আমাদের সময়।

ad

পাঠকের মতামত