185804

বিপদে পড়লে কল করুন ৯৯৯ নম্বরে

‘শুভ সকাল, আসসালামু আলাইকুম। ’ বলতেই ফোনের অন্যপ্রান্ত থেকে এক সেবাপ্রত্যাশী বলেন, ‘এইটা পুলিশের নম্বার? আমার সাহায্য দরকার।
আমি নদীতে আছি। লুট হইছে। পুলিশ পাঠান। ’ গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে যখন পুলিশের জাতীয় জরুরি সেবা ‘৯৯৯’ কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত তখনই কেন্দ্রে আসে ফোনটি। এরপর ফোনটি দ্রুত কল ডেসপাচারের কাছে হস্তান্তর করেন কল টেকার। পরে তত্ক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

দুপুর ২টা ১০ মিনিটে ময়মনসিংহের পুরোহিতপাড়া থেকে আরেকটি কল আসে ৯৯৯ নম্বরে। এক সেবাপ্রত্যাশী বলেন, ‘দুই কক্ষের একটি বাসায় আগুন লেগেছে, দ্রুত ফায়ার সার্ভিসকর্মীদের পাঠান। ’ তখনই ময়মনসিংহ সদর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে বিষয়টি জানিয়ে দেন ৯৯৯ কল সেন্টারের সংশ্লিষ্ট কর্মী।

পরে তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, আগুনে কিছু আসবাবপত্র পুড়েছে, তবে কেউ হতাহত হয়নি।

গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ‘৯৯৯’ উদ্বোধনের দিনই সাধারণ ভুক্তভোগীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়। সকাল ১১টার দিকে রাজধানীর আবদুল গণি রোডে পুলিশের ক্রাইম কন্ট্রোল অ্যান্ড কমান্ড সেন্টারে এই সেবার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। পরে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ৯৯৯ নম্বরে কল করে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুল্যান্স সম্পর্কিত জরুরি সেবা পাওয়া যাবে।

এখানে কল করার জন্য কোনো টাকা খরচ হবে না, এমনকি মোবাইল ফোনে টাকা না থাকলেও কল করা যাবে। আগে আইসিটি ডিভিশনের আওতায় এই সেবাটি থাকলেও গত ২৬ অক্টোবর থেকে পুলিশ পরীক্ষামূলকভাবে চালু করে।

গতকাল কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, উদ্বোধনের পরই ব্যাপক সাড়া পড়েছে। আগে ২৪ ঘণ্টায় গড়ে ১০ হাজার ফোন এলেও গতকাল বিকেল ৩টা ২১ মিনিটে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ৯ হাজার ৮৪৪। গতকাল দুপুর পর্যন্ত সাতটি সিএসএফ (কল ফর সার্ভিস) ক্লোজ বা সমাধান করা হয়েছে। এভাবে গত এক মাসে ১২২টি এবং এক সপ্তাহে ৪৯টি সমাধান করা হয়। সবচেয়ে বেশি সেবা ফায়ার সার্ভিসের। এক মাসে সমাধান করা কলের মধ্যে ২৮টি ছিল অগ্নিকাণ্ডসংক্রান্ত।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ৯৯৯ নম্বরটি অপ্রচলিত এবং জনসচেতনতার অভাবে অপ্রয়োজনীয় কলই বেশি আসছে। তবে সেবাপ্রার্থীদের কলগুলো তিনটি পর্যায়ে পাঁচ স্তরের পুলিশ সদস্যরা এই সেবা দিচ্ছেন। এখন দিনে ১৫ হাজারের বেশি ফোন আসবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমেরিকায় কোথাও আগুন লাগলে জরুরি নম্বরে ফোন করা হলে সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নেভায়। বাংলাদেশেও এ রকম একটি সেবা উদ্বোধন করা হলো। যাতে একটি কলেই পুলিশের সেবা পাওয়া যায়। ৯৯৯ নম্বরে ডায়াল করে দেশের যেকোনো জায়গা থেকে পুলিশের সাহায্য পাওয়া যাবে। ’

সজীব ওয়াজেদ আরো বলেন, ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কার্যক্রম তথ্য-প্রযুক্তি খাতে আরেকটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে। ৯৯৯ নম্বরটি শুধু জরুরি সেবা প্রদানের জন্য। তথ্য জানার জন্য আরেকটি নম্বর অচিরেই চালু করা হবে। ’ তিনি বলেন, ‘আজ ১২ ডিসেম্বর জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি দিবসে ৯৯৯ দেশের ১৬ কোটি মানুষের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার। ’ এ সময় তিনি জঙ্গি অপারেশনে বাংলাদেশ পুলিশের সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহেমদ পলক, যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

পরে ওসমানী মিলনায়তনে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘উন্নত অনেক দেশে একটি ‘শর্ট কোডে’ কল করে জরুরি সেবা পাওয়ার এই ব্যবস্থা চালু রয়েছে। এবার বাংলাদেশও সেই পর্যায়ে উন্নীত হলো। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পক্ষে আরো একটি ধাপ এগিয়ে গেল সরকার। পর্যায়ক্রমে এই নম্বরের মাধ্যমে সব জরুরি সেবা দেওয়া হবে। ’

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেন, ‘বিপদের সময় মানুষ পুলিশকে ফোন করে। কিন্তু সারা দেশে পুলিশের এত ইউনিটের নম্বর মনে রাখা সম্ভব নয়। তাই আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর আমি একটি সংক্ষিপ্ত নম্বরে পুলিশি সেবা দেওয়ার উদ্যোগ নেই। ’

আইজিপি জানান, ৯৯৯ নম্বরে একসঙ্গে ১২০টি পর্যন্ত কল গ্রহণ করার সক্ষমতা রয়েছে। এই মুহূর্তে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সেবা পুরোদমেই দেওয়া যাবে। আপাতত সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি সাড়ে চার হাজার অ্যাম্বুল্যান্স তালিকভুক্ত করা হয়েছে, যারা এই সেবা দেবে। ভবিষ্যতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকেও কল করে এ সেবা পাওয়া যাবে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ৯৯৯-এ যেসব কল আসে তার বেশির ভাগই ভুল করে আসা মোবাইল ফোনসংক্রান্ত। কারণ একটি অপারেটর ও উবারের নম্বরের সঙ্গে এর মিল আছে। এরপর আসে ক্রাইং বা ব্লাইং কল। অপ্রত্যাশিত এসব কল অনেকে কৌতূহলে করে থাকে। কেউ হয়রানির জন্যও করে। তবে পুলিশ সদস্যরা অপেক্ষায় থাকেন সিএফএস কলের জন্য। এ কল পেলে পুলিশ ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুল্যান্সের সেবা নিশ্চিত করেন ৯৯৯ কর্মীরা।

কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সুপার (এসপি) তবারক উল্লাহ বলেন, ২৬ অক্টোবর থেকে তাঁরা পরীক্ষামূলকভাবে চালু হলেও জনসচেতনতা ছিল না। এখন মানুষ সচেতন হয়ে ফোন করে সেবা চাইবে বলে আমরা আশা করছি।

ad

পাঠকের মতামত