185801

দুনিয়া কাঁপানো সেই ঘটনায় মালদ্বীপে দলে দলে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ

প্রায় পাঁচশত বৎসর আগের কথা। এক অলৌকিক ঘটনায় মালদ্বীপে ব্যাপকভাবে ইসলামের আলো ছড়িয়ে পড়েছে। লোকজন দলে দলে দাখিল হয়েছিলেন ইসলাম ধর্মে।প্রখ্যাত মুসলিম পর্যটক আল্লামা ইবনে বতুতা (রহ.) বড় মাপের ইতিহাসবিদ ছিলেন। তিনি সমগ্র দুনিয়া ভ্রমণ করেছেন। তিনি তাঁর সফরনামায় মালদ্বীপের উক্ত ঘটনা সম্পর্কে লিখেছেন যে, ভ্রমণ করতে করতে তিনি মালদ্বীপে পৌছলেন।

দেখলেন, মালদ্বীপের প্রতিটি শহর-নগর আজানের মধুময় ধ্বনিতে মুখরিত। মালদ্বীপ ভূমি নামাযের সিজদায় আলোকিত। এ অবস্থা দেখে আল্লামা ইবনে বতুতা খুবই বিস্মিত হলেন।কারণ, তার জানা মতে কোনো ইসলাম প্রচারক মালদ্বীপে আসেন নি। তাহলে এখানে এভাবে ইসলামের আলো ছড়ালো কীভাবে?
ইবনে বতুতা (রহ.) তখন সেখানকার অধিবাসীদেরকে মালদ্বীপের মানুষের ইসলামে দীক্ষিত হওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলেন।
তারা অতি আশ্চর্যজনক একটি ঘটনা তাকে শোনালেন।

ঘটনাটি হলো-
আরবের কোনো এক বাণিজ্য জাহাজ পূর্ব বিশ্বের দিকে যাত্রা করে যাচ্ছিলো। ঘটনাচক্রে জাহাজটি তুমুল সমুদ্র ঝড়ে পতিত হয় এবং ঝড়ের কবলে পড়ে জাহাজটি ডুবে যায়। জাহাজের অভিযাত্রী সবাই মারা যান।সেই মুসলিম যাত্রী দলের একজন
মাত্র লোক কোনো এক কাষ্ঠখন্ডকে অবলম্বন করে আল্লাহর মেহেরবাণীতে বেঁচে যান এবং এই দ্বীপে এসে আশ্রয় নেন।
তিনি ছিলেন এক আরব যুবক এবং হাফেজে কুরআন। তার নাম হাফেজ আবুল বারাকাত।
এই অচেনা অপরিচিত দ্বীপে কোথায় যাবেন তিনি? কে তাকে আশ্রয় দিবেন.? এখানেতো তার কোনো বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয়-স্বজন নেই।

অবশেষে এই আরব যুবক এক বৃদ্ধার বাড়ীতে আশ্রয় নিলেন। যুবকটি জঙ্গলে কাঠ কেটে তা বিক্রয় করে জীবকা নির্বাহ করতো। এভাবেই চলছিলো তার জীবন।একদিন যুবকটি বাড়ীতে এসে দেখলেন- বৃদ্ধা কাঁদছেন এবং তার পাশে তার যুবতী মেয়েও কাঁদছে।

যুবক জিজ্ঞেস করলেন- কী হয়েছে আপনাদের? আপনারা কাঁদছেন কেন? বৃদ্ধা বললেন- আজ আমার মেয়ে মারা যাবে। যুবক বললেন- কেন? তিনি মারা যাবেন কেন? তিনিতো সুস্থ! বৃদ্ধা আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করে বললেন- ওই যে দেখুন, মৃত্যু আমাদের সামনে। যুবক বাড়ীর সামনে তাকিয়ে দেখলেন, রাজার সৈন্যরা দাঁড়ানো।

যুবক বললেন- তারা কি আপনার মেয়েকে হত্যা করবে? বৃদ্ধা বললেন- না, ব্যাপারটি তা নয়। রাজার এই সৈন্যরা আমার মেয়েকে নিয়ে যাবার জন্য এসেছে। কেননা, আমাদের এই দ্বীপে প্রতি বৎসর একটি নির্দিষ্ট তারিখে এক সামুদ্রিক বিপদের উদ্ভব হয়।

যার থেকে রক্ষা পাওয়ার পদ্ধতি হলো আমাদের দ্বীপবাসীদের পক্ষ থেকে এক যুবতী মেয়েকে ওইদিন সূর্য ডোবার পর সমুদ্র উপকূলে একটি মন্দির আছে সেখানে রেখে আসতে হয়। পরের দিন সকালে সরকারি লোকজন সমুদ্রের কিনারা থেকে ওই মেয়েকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে নিয়ে আসে। প্রতিবারই লটারির মাধ্যমেই নিরূপণ করা হয়- কোন মেয়েকে পাঠানো হবে। এবার লটারিতে আমার মেয়ের নাম উঠেছে। তাই আজ রাতে তাকে সমুদ্র উপকূলে পাঠাতে হবে। সেখানে তার মৃত্যু অনিবার্য।
যুবক বৃদ্ধার মুখে এ বেদনাদায়ক ঘটনা শুনে বললেন- আজ আপনাদের মেয়েকে সেখানে পাঠাবেন না। আজ রাতে আমিই সেখানে যাবো।

দেখি, সেখানেৃ কী হয়। প্রয়োজনে আপনার মেয়ের পরিবর্তে আমার জান দিয়ে দেবো। এরপর যুবক বললেন- রাজার সৈন্যরা যাতে বুঝতে না পারে, তাই আপনার মেয়ের পোশাক আমাকে পরিয়ে দিন। আমিই আজ তাদের সাথে যাবো।
উল্লেখ্য যে, যুবকের বয়স ছিলো খুবই কম। তাঁর দাড়ি-গোফ কিছুই গজায়নি। কাজেই মেয়ের বেশে তার ধরা পড়ার আশংকা ছিলো না। বৃদ্ধা যুবকটিকে নির্ঘাত মৃত্যুর দুয়ারে ঠেলে দিতে রাজী হচ্ছিলেন না। কিন্তু যুবকটি বুঝালেন যে, তিনি মুসলমান। মুসলমানগণ আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করেন না। আর জীবন ও মৃত্যু একমাত্র মহান আল্লাহর হাতে।

ad

পাঠকের মতামত