185524

তিন ভাগে বিএনপির নির্বাচনী পরিকল্পনা

আগামী এক বছরকে তিন ভাগে ভাগ করে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা তৈরি করছে বিএনপি। পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগের দিনগুলোর প্রথম তিন মাস সংগঠন গোছানো ও নিরপেক্ষ সরকারের প্রতিষ্ঠায় জনমত তৈরি করে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হবে। এতে কাজ না হলে পরবর্তী তিন মাস আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় করে নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে। বাকি মাসগুলো নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হবে।

গত রবিবার দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও এ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়। এতে সিদ্ধান্ত হয়, যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, সে ক্ষেত্রে সরকারকে সব রাজনৈতিক দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। নইলে বিএনপি নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠার সফল আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নির্বাচনে অংশ নেবে।

এদিকে রবিবার রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর বিদেশে খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর সম্পদের বিষয়ে মিথ্যা তথ্য দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উকিল নোটিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত এক আইনজীবী জানান, এটি চলতি সপ্তাহের যে কোনো দিন পাঠানো হতে পারে।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়া হতে পারে এমন শঙ্কা নিয়েও নানা আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে নেতারা বলেন, সরকারের উদ্দেশ্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়াকে অযোগ্য ঘোষণা করা। এ বিষয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে খালেদা জিয়া নেতাদের স্পষ্ট করে বলেন, এ নিয়ে ভয়ের কোনো কারণ নেই। বৈঠকে উপস্থিত বেশিরভাগ নেতাই মত দেন, সরকার সহজে নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মেনে নেবে না। তাদের বাধ্য করতে হবে। শিগগির আবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বেশকিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত আসবে বলে জানা গেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিতে চায়। এ ক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্ব হলো, নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি। সরকার এক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে আন্দোলনের মাধ্যমেই দাবি আদায় করে নির্বাচনে যাবে বিএনপি।

স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য জানান, আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েই এগোচ্ছে বিএনপি। সরকার যদি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি না করে, তা হলে শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আন্দোলনের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। তবে আগামী তিন মাস দেশব্যাপী নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে জনমত তৈরি করবে বিএনপি। এর পর সরকারের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করা হবে। একই সঙ্গে দাবির পক্ষে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করা হবে। সরকার লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি না করলে এর পর বেগম খালেদা জিয়া গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ডাক দেবেন। ওই সময় আন্দোলনের কৌশল কী হবে, তা নিয়েও সিনিয়র নেতাদের মতামত নেন।

স্থায়ী কমিটির একাধিক নেতা বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার ভবিষ্যৎ নিয়েও স্থায়ী কমিটির সদস্যরা মতামত তুলে ধরেন। এর পর একই বিষয়ে দলের সিনিয়র আইনজীবী নেতাদের মতামতও নেন বিএনপিপ্রধান। সবার বক্তব্যেই মামলায় সাজা হতে পারে এমন শঙ্কার কথাই জানানো হয়। এক আইনজীবী নেতা বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিচার শেষ পর্যায়ে। বেগম জিয়া এখন আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য রাখছেন। যুক্তিতর্কের পরই রায়। রায়ে নিম্ন আদালতে সাজা হলেও উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার কথাও বেগম জিয়াকে জানান আইনজীবী নেতারা। তবে সরকার কোনো আইন করে নিম্ন আদালতের সাজা হলে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করে কিনা, এ নিয়েও শঙ্কার কথা বলা হয় বৈঠকে।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়ে গতকাল বিএনপির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। সেখানে বলা হয়, স্থায়ী কমিটির সভা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছে, বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা নজিরবিহীন দ্রুততার সঙ্গে নিষ্পন্ন করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারের জোর দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। তবে বৈঠকে একাধিক নেতা বলেন, দেশি-বিদেশি জনমত পক্ষে থাকায় শেখ মুজিবুর রহমানকে মিথ্যা মামলায় পাকিস্তানিরা ফাঁসির রায় দিলেও তা কার্যকর করতে পারেনি।

একইভাবে খালেদা জিয়ার পক্ষে দেশের জনগণ রয়েছে। আমরা রাজপথে থাকলে খালেদা জিয়ার সাজা দেওয়ার সাহস সরকার করবে না। বৈঠকে এক নেতা বলেন, রাজপথে নামলেই তো মামলাসহ নানাভাবে নির্যাতন করে। এর জবাবে অপর এক নেতা বলেন, তারেক রহমানকে ইতোমধ্যে দন্ড দেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়াই বিএনপি। তাই বিএনপিকে বাঁচাতে হলে রাজপথে নামা ছাড়া কোনো উপায় নেই। এ সময় নির্বাচনের আর কতদিন বাকি খালেদা জিয়া জানতে চাইলে নেতারা বলেন, নির্বাচনের আগের সময়টাকে তিন ভাগ করে এগোতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ের জন্য সংগঠন গুছিয়ে সফল আন্দোলন করতে পারলেই নির্বাচনে আমরা বিজয় হব।

স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্তে আরও বলা হয়, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিদেশে সম্পদ পাচার করে বিনিয়োগের মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট অভিযোগ আনা হয়েছে। বিএনপি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। অন্যথায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানানো হয়। রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সব দলকে সমান সুযোগ প্রদান এবং নিরাপত্তার জন্য সশস্ত্র বাহিনীকে মোতায়েন করার দাবি জানায় স্থায়ী কমিটি। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। রসিক নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীকে বিজয় করতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে আহ্বায়ক ও সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলুকে সদস্য সচিব করে একটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি ওই এলাকার কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে ধানের শীষের পক্ষে ভোট প্রার্থনা করবে।

সূত্র : আমাদের সময়

ad

পাঠকের মতামত