185537

ইতিহাসে জেরুজালেম

প্রায় চার হাজার বছর আগের কথা, হযরত ইব্রাহিম (আ.) জেরুজালেম এলাকায় নির্মাণ করেন একটি উপসানালয়। তার ও এক হাজার বছর পর নবী ও বাদশাহ সুলাইমান (আ:) জেরুজালেম শহর প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে নির্মাণ করেন বায়তুল মুকাদ্দাস বা মসজিদুল আকসা। ১৪শত বছর পূর্বে আমাদের রাসুল (সা.) মসজিদুল আকসাকেই ইসলামের প্রথম কিবলা বা নামাজের দিক হিসেবে নির্ধারণ করেন। যদিও পরবর্তিতে আল্লাহর নির্দেশে কিবলা হয় বায়তুল্লাহ। এভাবেই মসজিদুল আকসা একইসাথে মুসলমান,ইহুদি ও খ্রীস্টানদের পবিত্র স্থানে পরিনত হয়ে আসছে।

ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিক থেকে ইহুদিরা ফিলিস্তিনের দিকে ধেয়ে আসতে থাকে। পুরোমাত্রার ব্রিটিশ পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে তারা মুসলিম অধ্যুষিত মধ্যপ্রাচ্যের বুকে একটা ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে বসে। ইহুদি নেতা ডেভিড বেন গুরিয়ন ১৯৪৮ সালের ১৪ মে ‘ইসরায়েল’ নামে এক নতুন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করেন। পরের মাসেই তারা জেরুজালেমের পশ্চিমাংশ দখল করে নিয়ে নিজেদের রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত করে। মোটা দাগে তখন থেকেই জেরুজালেমে ইহুদি দখলদারি শুরু। ১৯৬৭ সালে তারা জেরুজালেমের বাকি অংশটুকুও ফিলিস্তিনিদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়। পূর্ব জেরুজালেমেই পবিত্র ওল্ড সিটির অবস্থান, যেটা মুসলিম-ইহুদি উভয় গোষ্ঠীর কাছে পবিত্র। আন্তর্জাতিক মতামত উপেক্ষা করে ইসরায়েল ১৯৮০ সালে ‘জেরুজালেম আইন’ পাসের মাধ্যমে পূর্ব জেরুজালেমকে নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করে এবং গোটা অঞ্চলকে নিজেদের রাজধানী ঘোষণা করে।

মার্কিন দূতাবাসকে তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তর করতে ১৯৯৫ সালেই একটি আইন প্রণয়ন করে মার্কিন কংগ্রেস। ট্রাম্পও দ্বিতীয়বারের মতো সেই সিদ্ধান্তটাই নিলেন। এই বিষয়টা নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে আবার উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে চরমভাবে। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে আরব লীগ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ফিলিস্তিন ছাড়াও সৌদি আরব, আমিরাত, তুরস্ক, জর্ডান, ফ্রান্স, কাতার, মিসর, মরক্কো, কুয়েত, জার্মানি ও ইরাক সিদ্ধান্তকে অগ্রহণযোগ্য আখ্যা দিয়েছে। জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনকে বলেন, ‘জেরুজালেমের ঐতিহাসিক ও বৈধ মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করে এমন সিদ্ধান্ত না নেওয়াই উচিত।’ তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতির পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে। এটা শুধু জর্ডান বা ফিলিস্তিনের নাগরিকদের নয়, পুরো আরব ও মুসলিম বিশ্বের বিষয়।’

এদিকে জেরুজালেম নিয়ে সীমা লঙ্ঘন না করতে ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান। ইসরায়েলি রাজধানীর স্বীকৃতি দিলে তেল আবিবের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের হুমকি দিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার জর্ডানের বাদশা আবদুল্লাহ, মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি ও সৌদি আরবের বাদশা সালমানের সঙ্গে কথা বলেছেন ফিলিস্তিনের স্বশাসন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। তারা সবাই ট্রাম্পকে সতর্ক করেছেন। বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা এমন সিদ্ধান্তে শান্তি প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে। উন্মাতাল হয়ে পড়তে পারে পুরো অঞ্চল। এদিকে ইসরাইলের একজন সিনিয়র মন্ত্রী ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। বলেছেন, যেকোনো সহিংসতা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত আছেন তারা। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে সারা বিশ্বের চোখ এখন ইজরাইলে। সামনের ইতিহাস কিভাবে লেখা হবে। বলা যায় না এখনো। আল জাজিরা, মিডল ইস্ট মনিটর

ad

পাঠকের মতামত