185545

১৩ প্লট ও ২ বাড়ির মালিক ওয়াসার সাবেক ইন্সপেক্টর!

মো. শহীদুল ইসলাম। প্রথমে ছিলেন ঢাকা ওয়াসার মিটার রিডার, এরপর ইন্সপেক্টর। পোস্টিং ছিল ফকিরাপুল এলাকায়। এক বছর আগে অবসর নিয়েছেন। বর্তমানে তার সম্পদ শত কোটি টাকারও বেশি। বেতন অল্প টাকা হলেও কিনেছেন ১৩টি প্লট ও দুটি বাড়ি। ব্যাংক-ব্যালান্স আর জমি সবমিলে প্রায় শত কোটি টাকার সম্পদ।

সম্প্রতি এ ধরনের একটি অভিযোগ জমা পড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দফতরে। অভিযোগটি গ্রহণ করেছে দুদক। অভিযোগ করেছেন রাজধানীর ফকিরাপুলের এক বাসিন্দা।

অভিযোগে বলা হয়, ঢাকা ওয়াসার অবসরপ্রাপ্ত ইন্সপেক্টর ও সাবেক সিবিএ নেতা শহীদুল ইসলাম অবৈধভাবে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে চাকরি করলেও বর্তমানে তার সম্পদের পরিমাণ শত কোটি টাকা। মিটারসহ ওয়াসার সংযোগে নানা দুর্নীতি করে এসব অর্থ উপার্জন করা হয়েছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, শহীদুলের ১৩টি প্লটের মধ্যে ছয়টি বনশ্রী এলাকায়, যার বাজার মূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা। এছাড়া স্ত্রী, ছেলে ও তিন মেয়ের নামেও রয়েছে জমি ও প্লট।

তবে জাগো নিউজের কাছে নিজের এসব সম্পদের কথা অস্বীকার করেন শহীদুল ইসলাম। তিনি বলেন, এটা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। আমার শুধু একটি বাড়ি আছে তাও টিনশেড। ওটা ভাড়া দেয়া। আর কিছু নেই। বনশ্রীর একটা প্লট আমার ছেলের। আর দুই মেয়ের নামে কিছু প্লট আছে। ওইগুলো আমার নয়।

জাগো নিউজের অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকার নন্দীপাড়ায় শহীদুলের একটি বহুতল ভবন রয়েছে। ভবনের নাম ‘মাফিয়া কটেজ’। এটি স্ত্রী মাফিয়া বেগমের নামে নামকরণ করা।

ভবনের এক ভাড়াটিয়া নাম প্রকাশ না করে জানান, তার মালিক শহীদুল ইসলাম। তিনি ওয়াসায় চাকরি করতেন। তার কাছ থেকে ঘর ভাড়া নিয়েছেন তিনি।

সরেজমিন ওই ভবনে গিয়ে মালিকের নাম জানতে চাইলে শহীদুল ইসলামের স্ত্রী মাফিয়া বেগম বলেন, দয়া করে আপনারা কোনো বিভ্রান্তি করবেন না।

নন্দিপাড়ার মাফিয়া কটেজের পাশেই রয়েছে শহীদুল ইসলামের প্রায় ১০ কাঠার আরেকটি প্লট। সেখানে টিনশেড ঘর বানিয়ে ভাড়া দেয়া হয়েছে। সেটি শহীদুল ইসলামের নিজের নামে। এছাড়া কুমিল্লার বরুড়াতে তার একটি বাড়ি রয়েছে।

দুদকের জমা দেয়া অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ রয়েছে, শহীদুলের কেনা পাঁচ কাঠার আরেকটি প্লট রয়েছে নন্দীপাড়া এলাকার প্রধান সড়কে। সামনে দোকান ও পেছনে টিনশেড বাড়ি বানিয়ে ভাড়া দেয়া হয়েছে।

নন্দীপাড়ার বাড়ির কাছে এক বিঘার ওপর ‘বাগান বাড়ি’র আদলে শহীদুল ইসলাম গড়ে তুলেছেন আরেকটি বাড়ি। বাড়ির নাম ‘তিন কন্যা নীড়’। বাড়িটি তিন মেয়ে ইয়াসমিন বেগম, বিলকিস আক্তার বীণা ও সিনথিয়া ইসলামের নামে লিখে দেয়া।

বনশ্রীর আবাসিক এলাকায় প্রায় চার কাঠার একটি প্লট কিনেছেন ছেলে শামসুল ইসলামের নামে। প্লটটি ভাড়া দিয়েছেন এক ব্যবসায়ীর কাছে।

এ বিষয়ে শহীদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আমার কোথায় কী আছে সেটা আমি ইনকাম ট্যাক্সের ফাইলে উপস্থাপন করেছি। এসব অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

দুদকে দায়ের করা অভিযোগপত্রে অভিযোগকারীর নাম ও ফোন নম্বর উল্লেখ রয়েছে। ফোন নম্বরে জাগো নিউজের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে বলা হয়, তিনি ফকিরাপুলের বাসিন্দা। ওই এলাকার দায়িত্বে ছিলেন শহীদুল ইসলাম।

অভিযোগকারী জাগো নিউজকে বলেন, ‘নাম-ঠিকানা এবং ফোন নম্বর আমার হলেও অভিযোগটি আমি করিনি। যিনি অভিযোগ করেছেন তিনি হয়তো আমার সম্পর্কে অনেক জানেন, তাই আমার সব তথ্য দিয়ে অভিযোগ দিয়েছেন।’

অভিযোগকারী বেনামি হলেও অভিযোগপত্রে একটি সিল দিয়ে সেটি গ্রহণ করেছে দুদক। দুদক সূত্র জানায়, অভিযোগটি গ্রহণ করা হলেও তা তালিকাভুক্ত করা হয়নি। অভিযোগটি যাচাই-বাছাই করে দুদকের এখতিয়ারভুক্ত মনে হলে একজন অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হবে। ওই কর্মকর্তা পরবর্তীতে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।

চাকরিরত অবস্থায়ও শহীদুল ইসলামের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ ছিল। ২০১৪ সালে রাজধানীতে অবৈধ পানির জার বাজারজাতের দায়ে দুই ব্যক্তিকে এক মাস করে কারাদণ্ড দিয়েছিলেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। দোষীদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার প্রমাণ পাওয়ায় সেসময় পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা গুনতে হয়েছিল শহীদুল ইসলামকে।
সূত্র: জাগো নিউজ

ad

পাঠকের মতামত