185327

জেনে নিন কবর জিয়ারত করার সঠিক নিয়ম

 

আবদুল্লাহ বিন বারিদা থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, তোমরা কবরস্থানে গমন কর, কেননা এটা তোমাদের আখেরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।’ (মুসলিম, তিরমিজি)।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) তাঁর মায়ের কবর জিয়ারত করে এত কাঁদলেন যে, তাঁর কান্না দেখে আশপাশের সবাই কাঁদল। তারপর রাসূল (সা.) বললেন, ‘আমি আমার প্রভুর কাছে অনুমতি চেয়েছি আমার মায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার। কিন্তু আমাকে অনুমতি দেয়া হয়নি। অতঃপর অনুমতি চাই মায়ের কবর জিয়ারত করার জন্য। এবার আমাকে অনুমতি দেয়া হলো। অতএব, তোমরা কবর জিয়ারত কর। কেননা এটা আখেরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয়।’ (মুসলিম, আবু দাউদ)।

Need Traffic? See Your Content on the Largest Sites in the World
Ads by Revcontent
আয়েশা (রা.) বলেন, ‘একদিন নবীজী (সা.) আমার কাছে রাতযাপন করেন সে দিন তিনি শেষ রাতে জান্নাতুল বাকি নামক কবরস্থানের উদ্দেশে বেরিয়ে যান।’ (মুসলিম)।

কবর জিয়ারত আমাদের প্রিয় নবীর (সা.) একটি গুরত্বপূর্ণ সুন্নত। দুনিয়ার মোহ ও প্রাচুর্যের চাকচিক্যে ভুলে থাকা মানুষদের মাঝে-মধ্যেই কবরস্থানে গমন করা উচিত। কেননা এটা নিজেদের সংযত করতে, আল্লাহ ও পরকালের কথা স্মরণ করাতে খুবই সহায়ক।

জিয়ারতের উদ্দেশ্যঃ

ইমাম ইবনুল কায়িম (রহ.) বলেছেন, রাসূল (সা.) যখন কবর জিয়ারত করতেন, কবরের অধিবাসীদের জন্য দোয়া করা এবং তাদের জন্য ক্ষমা চাওয়ার উদ্দেশ্যেই জিয়ারত করতেন। (ফিকহুস সুন্নাহ।)

জিয়ারতের নিয়মঃ

বিভিন্ন হাদিস থেকে জানা যায়, রাসূল (সা.) প্রায় সময়ই শেষ রাতে কবর জিয়ারত করতেন। তাই সম্ভব হলে শেষ রাতে কবর জিয়ারত করা উত্তম। কেননা মন তখন অধিক নরম থাকে। তাছাড়া অন্য সময়ও কবর জিয়ারত করা রাসূল (সা.) থেকে প্রমাণিত। অধিকাংশ আলেমের মতে, জুতা-স্যান্ডেল পায়ে রেখে কবরের কাছে যাওয়া যায়। তবে ইমাম আহমদের মতে, প্রয়োজন না হলে জুতাসহ যাওয়া মাকরুহ। (ফিকহুস সুন্নাহ)।

জিয়ারতকারী যখন কবরের কাছে পৌঁছবে, মৃত ব্যক্তির মাথা বরাবর কিবলামুখী হয়ে দাঁড়াবে। জিয়ারতকারী কবরবাসীকে সম্বোধন করে সালাম দেবে এবং তাদের জন্য মহান প্রভুর কাছে ক্ষমা চেয়ে দোয়া করবে। এ ক্ষেত্রে হাত তুলে ও না তুলে উভয় অবস্থায় দোয়া করা যাবে। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বাকি কবরস্থানে পৌঁছে হাত উঠিয়ে দোয়া করেছিলেন। (মুসলিম)

জিয়ারতের দোয়াঃ

আয়েশা (রা.) বলেন, আমি রাসূলকে (সা.) জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল। কবরবাসীকে কী বলব? তখন তিনি বললেন, হে আয়েশা তুমি বলবে, ‘মোমিন ও মুসলমানদের বাসভূমির অধিবাসীদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমাদের মধ্যে থেকে যারা আগে আগে চলে গেছে এবং যারা পেছনে রয়েছে আল্লাহ তাদের সবার ওপর করুণা বর্ষণ করুন। ইনশাআল্লাহ আমরা তোমাদের সঙ্গে মিলিত হব। (মুসলিম)

উপরোক্ত দোয়াগুলোর সমর্থনে কোরআনের একটি আয়াত উল্লেখ করা যায়। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘আর যারা তাদের পরে এসেছে এবং বলেছে, হে আমাদের রব! আমাদের ক্ষমা কর এবং আমাদের যেসব ভাই ঈমান সহকারে অতিবাহিত হয়েছে, তাদেরও ক্ষমা কর। আর মোমিনদের জন্য আমাদের মনে কোনো বিদ্বেষ সৃষ্টি করো না। হে আমাদের রব! তুমি তো ক্ষমাশীল, মমতাময়।’ (সূরা হাশর : ১০)।

কবর যিয়ারতের সময় কতিপয় সুরা পাঠ করার বিশেষ ফজীলত হাদীস শরীফে বর্নিত আছে।

সুরা এখলাস

হযরত আলী রাঃ থেকে বর্নিত , নবী করীম সাঃ বলেন, যে ব্যক্তি কবরস্থানের পাশ দিয়ে যাবার সময় ১১ বার সুরা এখলাস পাঠ করে কবরবাসীর জন্য ছওয়াব রেছানী করবে সে ঐ কবরস্থানে দাফনকৃত মৃতদের সংখ্যার সমান ছওয়াব লাভ করবে।

সুরা ফাতেহা ও সুরা তাকাছুরের ফজীলত

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্নিত , নবী করীম সাঃ বলেন, যে ব্যক্তি কবরস্থানে প্রবেশ করে সুরা ফাতেহা, সুরা এখলাস ও সুরা তাকাছুর পাঠ করে বলবে হে আল্লাহ, আমি তোমার কালাম থেকে যা পাঠ করেছি, তার ছওয়াব এই কবরস্থানের মুমিন নর- নারীদের জন্য দান করলাম, কেয়ামতের দিন তারা তার জন্য সুপারিশকারী হবে।

 

সুরা ইয়াসিনের ফজীলত

হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্নিত , নবী করীম সাঃ বলেন, যে ব্যক্তি কবরস্থানে প্রবেশ করে সুরা ইয়াসীন পাঠ করবে, আল্লাহতায়ালা সেই কবরস্থানের মৃতদের আজাব লাঘব করবেন এবং উক্ত ব্যাক্তি সেখানে দাফনকৃত মৃতদের সমান সংখ্যক ছওয়াব লাভ করবে।

এছাড়া সুরা মূলক, আয়তুল কুরছী, সুরা ফালাক, সুরা নাস এবং কোরান মজ়িদ যতটুকু পারা যায় তেলোয়াত করা ভাল।

কবরস্থানে বর্জনীয়ঃ

 

১. কবরের ওপর বসা, তাতে হেলান দেয়া বা তার ওপর দিয়ে চলাচল বৈধ নয়। তবে ইবনে ওমর, আবু হানিফা ও মালেকের মতে, প্রয়োজনে তা বৈধ। (মুসলিম, আবু দাউদ ও ফিকহুম সুন্নাহ)। জাবের (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) কবর পাকা করতে, কবরের ওপর বসতে এবং কবরের ওপর কোনো নির্মাণ কাজ করতে নিষেধ করেছেন। (মুসলিম)। স্বাভাবিক কবরের চেয়ে উঁচু কবর ভেঙে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। (মুসলিম)। ২. কবরকে হাত দিয়ে স্পর্শ করা, চুমু দেয়া, কবরের চারপাশে ঘোরা, মৃতের কাছে প্রার্থনা করা, তাদের নামে কসম খেয়ে দোয়া চাওয়া, মৃতের কাছে সাহায্য পেশ করা ও মনের আকুতি পেশ করা জঘন্য শিরক ও হারাম কাজ। (ফিকহুস সুন্নাহ, মাআরেফুল কোরআন)। ৩. কবরে বাতি জ্বালানো, মসজিদ নির্মাণ করা ও নামাজ আদায় করা নিষিদ্ধ। (বোখারি, মুসলিম)। ৪. কবরকে কোনো কিছু দিয়ে ঢাকা বা আবৃত করা বৈধ নয়। (বোখারি)। ৫. কবরের কাছে জন্তু জবাই করা মাকরুহ। (ফিকহুস সুন্নাহ)।

মহিলাদের কবর জিয়ারতঃ

ইমাম মালেক আহমদ ও কিছু সংখ্যক হানাফি আলেম মহিলাদের কবর জিয়ারতের অনুমতি দিয়েছেন। তারা দলিল হিসেবে ইবনে মুলাইকার হাদিস পেশ করেন। ইবনে মুলাইকা বলেন, একদিন আয়েশা (রা.) কবরস্থান থেকে এলেন। আমি বললাম, আপনি কোথা থেকে এলেন? তিনি বললেন, আমার ভাই আবদুর রহমানের কবর থেকে। আমি বললাম, রাসূল (সা.) কি কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেননি? তিনি বললেন, হ্যাঁ প্রথমে নিষেধ করেছেন, পরে আবার আদেশ দিয়েছেন। (হাকেম ও বায়হাকি)। হাফেজ জাহাবি হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। (ফিকহুস সুন্নাহ)।

এ হাদিস থেকে জানা গেল মহিলাদের জন্য কবর জিয়ারত করা বৈধ। তাছাড়া যেহেতু আখেরাতকে স্মরণ করানোই কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্য, সেহেতু এটা নারী-পুরুষ সবার জন্যই সমানভাবে প্রযোজ্য ও প্রয়োজন। (ফিকহুস সুন্নাহ)। তবে অবশ্যই এ ক্ষেত্রে পর্দার শর্ত রক্ষা করতে হবে।

ad

পাঠকের মতামত