185152

বালকদের ক্ষুদ্র পুরুষাঙ্গ নিয়ে কিছু পরামর্শ ও চিকিৎসা

অনেক পিতা-মাতা তাদের পুত্রসন্তানের ক্ষুদ্রাকৃতির পুরুষাঙ্গ দৃষ্টিগোচর হওয়ার কারণে শিশুবিশেষজ্ঞ ও হরমোন বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হয়ে থাকেন। তারা আসলে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন এ বিষয়টি নিয়ে। এটি আসলে কোনো কোনো সময় একটি শরীর গাঠনিক সমস্যা; অনেক সময় হরমোন জনিত সমস্যা। কিন্তু শুরুতেই এটি আসলেই ছোট কিনা সে বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে যাওয়া জরুরি।

হরমোন বিশেষজ্ঞগণ নির্দিষ্ট পদ্ধতিমতে অঙ্গটি মাপেন এবং বয়স ভিত্তিক একজন বালকের পুরুষাঙ্গের আকৃতির সঙ্গে এর তুলনা করেন। যদি পুরুষাঙ্গটির আকার (যেটি সাধারণত: নির্দিষ্ট চাপে টেনে ধরে ফিতার সাহায্যে মাপা হয়) ওই বয়সি একটি বালকের পুরুষাঙ্গের আকারের আদর্শমানের ২.৫ মান কম না হয়, তাহলে তাকে ক্ষুদ্রাকার পুরুষাঙ্গ (Micropenis) বলা হয় না।

এক্ষেত্রে আরও অন্য কোনো সমস্যা থাকতে পারে। যেমন-দৈহিক স্থুলতার কারণে আশপাশের চর্বিতে ডুবন্ত পুরুষাঙ্গ (Buried Penis)-এটি প্রধান কারণ হতে পারে। এছাড়া পুরুষাঙ্গের নিচের অংশ অণ্ডথলির চামড়ার সঙ্গে সংযুক্ত থাকলেও এ রকম মনে হতে পারে। খাৎনার সময় লিঙ্গটির আশপাশের ত্বকে ঢাকা পড়ে যেতে পারে।

কারণসমূহ:

(১) টেস্টেস্টেরন হরমোন উৎপাদনের ঘাটতি-(ক) অণ্ডকোষের সমস্যাজনিত কারণে (খ) অ্যান্ড্রেনালগ্রন্থি, পিটুইটারিগ্রন্থি ইত্যাদির অকার্যকারিতা

(২) টেস্টেস্টেরন হরমোনের কার্যকারিতার সমস্যা (ক) গ্রোথহরমোন, আইজিএফ-১ ঘাটতি, অ্যান্ড্রোজেনের অকার্যকারিতা ইত্যাদি কারণে টেস্টেস্টেরনের কার্যকারিতায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে।

রোগ নিরুপণ: যে সব ছেলের ক্ষুদ্রাকৃতির পুরুষাঙ্গের কারণ নিয়ে পৃথিবীতে আসা হয়, তাদের জন্মের পর হতে অধিকাংশ রোগের তথ্যমূল্যায়ন জরুরি। এর মধ্যে নবজাতকের জণ্ডিস, হাইপোগ্লাইসেমিয়া, ব্রিচ ডেলিভারি জন্ম পরবর্তী সময়ে শ্বাসকষ্ট, অতিধীরগতির দৈহিক বৃদ্ধি ইত্যাদি সম্পর্কে সঠিক ইতিহাস দেখা জরুরি। ছেলেটির ঘ্রাণ শক্তি ঠিক আছে কিনা, সেটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। দৈহিক আকৃতির অস্বাভাবিকতা জিনগত ত্রুটির নমুনা বহন করে। সেক্ষেত্রে হাতের আঙ্গুলগুলো ঠিক আছে কিনা, হাতের তালু, পায়ের তালু স্বাভাবিক কিনা, শরীরের উপরের ও নিচের অংশের অনুপাত: কেমন, মুখের আকৃতি অস্বাভাবিক কিনা অথবা স্তন বৃদ্ধি পাচ্ছে কিনা এগুলো দেখা জরুরি। ছেলেটির অণ্ডথলিতে যদি অণ্ডকোষ অনুপস্থিথ থাকে, তাহলে এটি উপরে পেটের কোন অংশে আটকিয়ে আছে ধরে নেয়া যায়। সেক্ষেত্রে টেস্টেস্টেরনের ঘাটতিজনিত সমস্যা প্রকট হবে, আরো অন্য সমস্যাগুলোর সঙ্গে ক্ষুদ্রাকৃতির পুরুষাঙ্গ হবে।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা: প্রথমেই ছেলেটির টেস্টেস্টেরন হরমোন, এলএইচ, এফএসএইচ, ডিএইচটি ইত্যাদি হরমোনের রক্তের মাত্রা পরিমাপ করতে হবে। এর যে কোন একটি বা একাধিক হরমোনের ঘাটতি থাকার সম্ভাবনা বেশি। এইচসিজি দিয়ে একটা উদ্দীপক পরীক্ষা করা হয়। থায়রয়েড হরমোনের মাত্রা নিরুপণ করা জরুরি। পেটের নিচের অংশের আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয়। কারো কারো ক্ষেত্রে পেটের এমআরআই করার প্রয়োজন পড়ে।

জেনেটিক টেস্ট: ক্যারিও টাইপিং ও কোনো কোন সময় জেনেটি এনালাইসিস করার প্রয়োজন হয়।

চিকিৎসা: যদি টেস্টেস্টেরনের ঘাটতি থাকে (হাইপোগোনাডিজম), তবে বাইরে থেকে টেস্টেস্টেরন দিয়ে চিকিৎসা করাটা অনেক সহজ পদ্ধতি। টেস্টেস্টেরন ইনজেকশন মাংসপেশির গভীরে তিন সপ্তাহ পর পর সাধারণত দেয়া হয়। তবে সেটি চার সপ্তাহ পর পর বা কোন সময় দুই সপ্তাহ পর পরও দেয়া হয়। এই ইনজেকশনের ফলাফল বেশ দ্রুতই পাওয়া যায়, তবে মনে রাখতে হবে যে, এটি দীর্ঘ দিন ব্যবহারের জন্য কখনোই দেয়া হয় না; তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। যাদের অণ্ডকোষটি উপরে পেটের কোন জায়গায় আটকিয়ে ছিল, এই টেস্টেস্টেরণ ইনজেকশনের ফলে তা অন্ডথলিতে নেমে আশার সম্ভাবনা থাকে। তবে সকল ক্ষেত্রে টেস্টেস্টেরণ দিয়ে ভাল ফল পাওয়া যাবে এমন ভাবার সুযোগ নেই। জিনগত ত্রুটিতে সাধারণত কিছুই করার সুযোগ থাকে না।

একটি কথা মনে রাখা দরকার যে, যতজন ছেলেকে ক্ষুদ্রাকৃতির পুরুষাঙ্গের জন্যে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তাদের অধিকাংশই দৈহিক স্থ্থুলতার কারণে আপাতঃদৃষ্টিতে ক্ষুদ্রাকৃতির পুরুষাঙ্গ স্বদৃশ্য সমস্যাই আক্রান্ত। সেক্ষেত্রে ছেলেটির দৈহিক উচ্চতা ও বয়স সাপেক্ষে কাঙ্ক্ষিত দৈহিক ওজন অর্জনের দিকে পিতা-মাতাকে অধিক মনযোগ দিতে হবে। খাদ্য ব্যবস্থাপনা ও শারীরিক শ্রমের কাঠামো সেক্ষেত্রে বেশ সহায়ক হবে।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ (হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ)। সূত্র: মানবজমিন

ad

পাঠকের মতামত