185199

নতুন সংসারে তারা হয়ত সুখীও হবেন, কিন্তু জয়ের সুখ বা আনন্দের কী হবে?

প্রথম যখন জনসম্মুখে আসে শাকিব-অপুর সন্তান আব্রাম খান জয়, তখন তার চোখে মুখে বিস্ময়। টেলিভিশন চ্যানেলে তাকে নিয়ে লাইভে হাজির হওয়া মা অপু বিশ্বাসকে অপলক নয়নে অবাক হয়ে দেখছিল জয়। মা কেন কাঁদছে? সেই প্রশ্নের উত্তর সেদিন যেমন সে জানত না, একইভাবে নিজের বয়স একবছর দুই মাসে পা দেয়ার মাঝেই বাবা-মায়ের চূড়ান্ত বিচ্ছেদ কেন হল তা বোঝার ক্ষমতাও এখনও হয়ে ওঠেনি জয়ের।

এখনও ঠিক করে হাঁটা বা কথা বলা শিখতে না পারা জয় জানে না তার মায়ের জীবনে কতগুলো ঝড় বয়ে গেছে বা যাচ্ছে, জানে না নিজের ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাচ্ছে। এতদিন ধরে আগলে রাখা মা কে কী আইনের বেড়াজালে সাত বছর হলে তাকে ছেড়ে দিতে হবে? যে বাবার স্নেহ সে পেয়েছে গত এক বছরে হাতে গোনা মাত্র কয়দিন, সে কি সত্যিই তার সারাজীবনের ভরণপোষণ নেবেন?

এসব প্রশ্নের কোনটির উত্তর জানা বা বোঝার বয়সই যে শিশুর হয়নি, সে শিশুটির বাবা-মা নিজেদের দ্বন্দ্বের সমাধান করতে না পেরে বেছে নিয়েছেন বিচ্ছেদের পথ। ২০০৮ সালের ১৮ এপ্রিল (মতান্তরে ১৬ মার্চ) গোপনে বিয়ে, সবার অলক্ষে কলকাতায় জয়ের জন্মলাভ- এসব কিছুর পর সম্প্রতি হুট করেই অপুর বাসায় শাকিবের তালাকনামা পাঠানোর আলোচনায় ব্যস্ত সবাই। চূড়ান্তভাবে ডিভোর্স হয়ে গেলে যে কোন সময় হয়ত আবারও ঘর বাঁধতে পারেন শাকিব কিংবা অপু। নতুন সংসারে তারা হয়ত সুখীও হবেন। কিন্তু জয়ের সুখ বা আনন্দের কী হবে?

দ্য ফ্লাউয়ার অব ওয়ারঅভিভাবকত্ব আইন ১৮৯০ অনুযায়ী স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ হওয়ার পর সাত বছর পর্যন্ত ছেলেসন্তান হলে মায়ের কাছে থাকবে। এ সময় মা হবেন সন্তানের শরীরী অভিভাবক। কিন্তু কোনো সম্পত্তির অধিকারী হবেন না।

আইন অনুযায়ী সন্তানের স্বাভাবিক অভিভাবক হচ্ছেন বাবা। তবে এ সময় সন্তানের ভরণ-পোষণ বাবাকে বহন করতে হবে। সাত বছর পর তার শরীর ও সম্পত্তির অভিভাবক হবেন বাবা। সাত বছর পর বাবা যদি অন্যত্র বিয়ে করেন তখন নাবালক সন্তানের নিরাপত্তা ও বাবার কাছে থাকাটা অকল্যাণকর হলে এবং বাবা সন্তানের অভিভাবক নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হলে দাদি বা নানি বা মায়ের কাছে থাকতে পারে। আবার মা যদি অন্যত্র বিয়ে করেন তাহলে সে ক্ষেত্রে দাদি ও নানি অগ্রাধিকার পাবেন। তখন সন্তানের মতামত ও বিবেচনা করে আদালত নির্ধারণ করবেন।

এই আইনি ভাষা শিশু জয় মেনে নিতে পারবে কিনা, সেই জবাব একমাত্র সময়ই দিতে পারবে। ধরে নেয়া যাক, দ্বিতীয় বিয়ে করলেন না শাকিব কিংবা অপু, তারপরেও নিজের বাবা-মার সঙ্গে একসাথে পরিবারের মাঝে একটি শিশুর যে স্বাভাবিক বেড়ে ওঠা, সেই সুযোগ কিন্তু পাবে না ছোট্ট জয়। নিয়তির নিষ্ঠুরতায় তাকে বেছে নিতে হবে বাবা কিংবা মায়ের মধ্যে যে কোন একজনকে।

একটু বড় হলে যখন সে স্কুলে যাবে, চোখের সামনে সহপাঠীদের বাবা-মা কে একসঙ্গে দেখবে, তখন শিশু জয়ের মনে যে কষ্ট তৈরি হবে, তা নিয়ে কি স্বাভাবিক জীবন পাওয়া আসলেই সম্ভব? গত আট মাসে শাকিব-অপু নিয়ে প্রচারিত বা প্রকাশিত অসংখ্য সংবাদ, তাদের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব কিংবা নিজের জন্ম নিয়ে ঘোলা হওয়া জলের খবর যখন জানতে পারবে জয়, কী রকম প্রভাব পড়বে সেই কোমল মনে? এসব কথা কি একবারও ভেবে দেখেছেন শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস?

ঢালিউডের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা শাবনূরসহ অন্যান্য অনেক তারকাই বলছেন জয়ের জন্যই চূড়ান্তভাবে ডিভোর্সের আগে আরও একবার ভাবা উচিত শাকিব-অপুর। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবার আগে পাওয়া নব্বই দিনের পর সত্যিই যদি এই তারকা দম্পতির বিচ্ছেদ হয়, তখন জয়ের জীবন কোনদিকে মোড় নেবে সেটা এখনও বলা যাচ্ছে না।

২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর জন্ম নেয়া জয় অনেক প্রতিকুলতার মাঝে এই পৃথিবীতে আলোর মুখ দেখেছে। নিজের অস্তিত্বের প্রমাণও ছিল না কোথাও। বাবা-মা’র দ্বন্দ্ব বা যুদ্ধের মাঝের এই ফুল জনগণের স্নেহ ও ভালোবাসা পেয়েছে ঠিকই, কিন্তু জন্মের পর থেকেই সে বঞ্চিত নিজের বাবা-মা এর স্বাভাবিক সম্পর্ক দেখা থেকে। দর্শক ও ভক্তদের প্রত্যাশা তাঁদের পর্দার প্রিয় জুটি শাকিব-অপুর সন্তান যেন একটি সুস্থ্য ও স্বাভাবিক জীবন নিয়ে বড় হয়। উৎস: চ্যানেল আই অনলাইন।

ad

পাঠকের মতামত