185116

এবার আসছে হেফাজতের জোট

ডেস্ক রিপোর্ট : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে রয়েছেন এমন নেতাদের নেতৃত্বাধীন সাতটি রাজনৈতিক দল নিয়ে একটি ইসলামী জোট গঠন করা হচ্ছে। আগামী বছরের শুরুতেই এই জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটতে পারে। আর এই দলের নেতৃত্বে থাকছে বিএনপির সঙ্গ ত্যাগ করা ইসলামী ঐক্যজোট। এই সাত ধর্মভিত্তিক দল ২০০৮ সালে ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ বা প্রায় ৪৪ লাখ ভোট পেয়েছিল। ভোটের সমীকরণ এবং সরকারের সহযোগিতা সামনে রেখেই এই জোটের তত্পরতা চলছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। জানতে চাইলে ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘ইসলামী ঐক্যজোট আদর্শবান নেতা-কর্মী ও আলেমদের সমন্বিত প্লাটফরম। স্বকীয় অবস্থানে থেকে আমরা এখন সামনে এগিয়ে যেতে পারছি। তবে ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা সব দলই অনুভব করছে। মূলত প্রকৃত ইসলামী দলগুলোকে আমরা ঐক্যের আহ্বান জানাচ্ছি। আশা করছি আগামী বছরের শুরুতেই একটি ঐক্যবদ্ধ প্লাটফরম তৈরি করা যাবে। তবে ১৪-দলীয় জোটে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

আমরা সংসদের ৩০০ আসনেই নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। ’ জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইসলামভিত্তিক সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে বড় জোট গড়তে এক বছর ধরে কাজ করছে ইসলামী ঐক্যজোট। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের বাইরে বড় জোট হলে নির্বাচনী সমঝোতায় সুফল পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন দলের নেতারা। সমমনা দলগুলোকে নিয়ে জানুয়ারি মাসে বড় সমাবেশ করে জোট ও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে ঘোষণা দেওয়ার কথা ভাবছেন তারা। বেশ কয়েকটি ইসলামভিত্তিক রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের সমর্থক ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে নিয়ে জোট গঠনের চেষ্টা করছে বিএনপির সঙ্গ ত্যাগ করা ইসলামী ঐক্যজোট।

ইসলামী ঐক্যজোট নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হেফাজতের সঙ্গে সম্পৃক্ত বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও খেলাফত আন্দোলনের জোটে আসা অনেকটাই নিশ্চিত। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের শরিক খেলাফত মজলিস ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামকেও জোটে আনার চেষ্টা চলছে। এ দুটি দলও হেফাজতের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই চার দলের নেতারা হেফাজতেরও গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। চরমোনাইয়ের পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনকেও জোটে চায় ইসলামী ঐক্যজোট। এ দলটির হেফাজতের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক নেই। এ ছাড়া অনিবন্ধিত একটি শক্তিশালী দল এ জোটে থাকতে পারে। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ও কমবেশি ভোট রয়েছে এমন সব ধর্মভিত্তিক দলকেই ইসলামী ঐক্যজোটের নেতৃত্বে একটি পৃথক জোটে একাট্টা করার চেষ্টা চলছে। তবে ভোট থাকলেও নিবন্ধন হারানো জামায়াতে ইসলামীকে এ জোটে টানা হচ্ছে না।

জানা গেছে, জোট গঠিত হলে তা ‘স্বতন্ত্র’ অবস্থানে থাকবে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে সরাসরি জোট করবে না। আওয়ামী লীগও কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক ইসলামী দলগুলোকে মহাজোটে চায় না। তারা বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট থেকে তাদের দূরে রাখতে চায়। ২০০১ সাল থেকেই কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক অধিকাংশ দল বিএনপির সঙ্গে রয়েছে। এ দলগুলোর ভোট আবারও যেন বিএনপির পক্ষে না যায়, তা নিশ্চিত করতেই ধর্মভিত্তিক দলগুলোর মাধ্যমে পৃথক জোট গঠনের চেষ্টা করা হচ্ছে। আর এ কারণে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বহু চেষ্টা করেও মূলধারার ইসলামী দলগুলোকে তার নেতৃত্বাধীন জোটে পাননি। ইসলামী ঐক্যজোট ও হেফাজতের সঙ্গে সম্পৃক্ত কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জোট গঠনে সফল হলে আগামী নির্বাচনে তারা কয়েকটি আসনে ছাড় পেতে পারেন মহাজোটের কাছ থেকে। গত বছরের জানুয়ারিতে বিএনপি জোট ছাড়ে ইসলামী ঐক্যজোট। তবে দলটির ছোট একটি অংশ ইসলামী ঐক্যজোট (রকিব) নামে নতুন দল গঠন করে বিএনপির সঙ্গে রয়ে গেছে। মূলধারাটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী ও মুফতি ফয়জুল্লাহ।

দলটির নেতাদের কাছ থেকে জানা গেছে, বিএনপির সঙ্গ ত্যাগ করায় সরকারের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিল সমাবেশের মামলায় যেসব নেতা আসামি হয়ে আত্মগোপনে ছিলেন, তারা এখন প্রকাশ্যেই রাজনীতি করতে পারছেন। সম্প্রতি সরকারের সঙ্গে হেফাজতের সম্পর্কও উষ্ণ হয়েছে। গত ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে গণভবনে যান হেফাজত আমির শাহ আমদ শফী। তাকে পাশে নিয়ে কওমি মাদ্রাসা সনদের স্বীকৃতির ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। হেফাজত ও অন্যান্য ধর্মভিত্তিক দলের দাবি মেনে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ভাস্কর্য অপসারণ করা হয়। এর আগে তাদের সুপারিশে পরিবর্তন আনা হয় পাঠ্যপুস্তকে। যে দলগুলোকে জোটে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে, তার মধ্যে ভোটের মাঠে সবচেয়ে ভালো অবস্থা ইসলামী আন্দোলনের।

তবে ইসলামী ঐক্যজোট চেষ্টা করলেও চরমোনাই পীরের দল জোটে আসবে কিনা, তা এখনো নিশ্চিত নয়। দলটির নেতা আহমদ আবদুল কাইয়ুম জানান, তারা এখনো জোট নিয়ে ভাবছেন না। তবে ইসলামী আন্দোলনের নীতি-আদর্শ ও নেতৃত্ব মেনে জোট হতে পারে। অষ্টম সংসদ নির্বাচনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের দুজন এমপি ছিলেন। এ দলটি বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে রয়েছে। সংগঠনের একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে নতুন জোটের চেষ্টা চলছে, তাতে তাদেরও আমন্ত্রণ রয়েছে। তবে ২০ দল ছাড়ার সম্ভাবনা আপাতত নেই। বিএনপির কাছ থেকে ‘মূল্যায়ন’ না পাওয়া মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাকের নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিস নুতন জোটের বিষয়ে কিছুটা আগ্রহী বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ প্রতিদিন

ad

পাঠকের মতামত