185239

সকালে শিক্ষক বিকেলে ফেরিওয়ালা ডাক্তার!

‘ভাই, ঘাড়ে হাত দিয়েন না। মেডিকেল চেকআপ কোনো ফাইজলামির বিষয় না। নড়াচড়া করলে প্রেসার উল্টাপাল্টা দেখাইবো।’

শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর নিউমার্কেট পোস্ট অফিসের অদূরে কাঁচাবাজারের পশ্চিম পাশে ভ্যানের সামনে দাঁড়িয়ে এক বৃদ্ধের হাতে স্টেথিস্কোপ বেঁধে প্রেসার মাপছিলেন এক তরুণ যুবক।

তার পরনে প্যান্ট, শার্ট ও চামড়ার স্যান্ডেল এবং মাথায় টুপি। কাঁধে ছোট্ট একটি ব্যাগ ও হাতে স্টেথিস্কোপ। এ সময় পাশে বসে থাকা এক ভ্যানচালক দুষ্টুমি করে বৃদ্ধের ঘাড়ে হাত রাখতেই যুবক ওই ভ্যানচালককে উদ্দেশ করে এসব কথা বলছিলেন।

যুবকের কথা শুনে সমস্বরে হেসে ওঠেন আরও কয়েকজন ভ্যানচালক। এ সময় যুবক বলে ওঠেন, ‘রাস্তায় ফেরি কইরা ডাক্তারি করি বইল্লা মনে কইরেন না কিছু জানি না। শোনেন, ইন্টার পাস কইরা এলএমএফ কোর্স করছি। তারপর ডেন্টালেরও কোর্স করছি। প্রাইভেট হাসপাতালে চাকরি করছি। শুধু তাই না, মিরপুরে দোকান লইয়া নিজে চেম্বার চালাইছি। আইজ ভাগ্য দোষে ফেরি করে ডাক্তারি করি।’

অনেকটা আবেগতাড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন যুবক। কৌতূহলবশত এ প্রতিবেদক এগিয়ে গিয়ে আলাপ করলে তার সংগ্রামী জীবনের কথা জানতে পারেন।

যুবকের নাম আলমগীর। কুমিল্লার দেবীদ্বার থানার লক্ষ্মীপুরে গ্রামের বাড়ি। বর্তমানে স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে রাজধানীর মিরপুরে থাকেন। মাদরাসা থেকে ইন্টারমিডিয়েট (আলিম) পাস করে এলএমএফ কোর্স করে কিছুদিন প্রাইভেট হাসপাতালে চাকরি করেছেন। পরে ডেন্টালের ওপর কোর্স করে নিজেই মিরপুরে ৬০ ফুট রাস্তার পাশে চেম্বার খুলে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন। ভালোই চলছিল দিনগুলো।

আলমগীর জানান, যখন ৩০০ ফুট রাস্তা তৈরি হয় তখন দোকান ভেঙে মার্কেট করায় তিনি লাখ টাকা অগ্রিম দিয়ে দোকান নিতে পারেননি। সংসারের খরচ ও ছেলেমেয়েদের খরচ চালাতে চোখে সরষে ফুল দেখছিলেন। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়।

আলমগীর আরও জানান, সংসার চালাতে মিরপুরে ইসলামি ফাউন্ডেশন পরিচালিত একটি মক্তবে আরবি পড়ান। বিকেলে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে ফেরি করে ডাক্তারি করেন।

প্রেসার মাপতে ১০ টাকা ও ডায়াবেটিস পরীক্ষা করাতে ৩০ টাকা নেন। তার স্ত্রীও ব্র্যাক পরিচালিত একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন।

তিনি জানান, রাস্তাঘাটে বেশিরভাগ মানুষ ডাক্তারি করা নিয়ে টিটকিরি করে। কিন্তু কেউ জানে না ডাক্তারি না জানলে করন যায় না।

‘ভাগ্যের ফেরে আজ পথে পথে ঘুরছি। কিন্তু আশা আছে আবার দোকান দিয়ে চেম্বারি করমু’ এ কথা বলে সামনের দিকে এগিয়ে গেলেন আলমগীর।

ad

পাঠকের মতামত