184401

গৃহপরিচারিকা নির্যাতনের ঘটনায় স্বামী-স্ত্রী জেল হাজতে

পাবনার চাটমোহরে বন্দি অবস্থায় উদ্ধার গৃহপরিচারিকা সুমি খাতুনকে (১৫) উদ্ধারের ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। সুমির মা আঞ্জুয়ারা খাতুন বাদি হয়ে চাটমোহর থানায় মামলা দায়েরের পর গৃহকর্তা পৌর শহরের ছোট শালিকা মহল্লার আবদুস সোবাহান বিচ্ছু, তার স্ত্রী ফেরদৌসী বেগমকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে পুলিশ। সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাদেরকে আটক করে চাটমোহর থানা পুলিশ। আবদুস সোবাহান বিচ্ছু ঐ এলাকার মৃত সদর উদ্দিন মন্ডলের ছেলে।

এদিকে মেয়ে সুমিকে উদ্ধারের খবর পেয়ে ঢাকা থেকে সোমবার রাতে মেয়ের কাছে ছুটে আসেন বাবা শফিকুল ইসলাম ও মা আঞ্জুয়ারা খাতুন। এ সময় হাসপাতালে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। বারে বারে মূর্ছা যান মা আঞ্জুয়ারা ও বাবা শফিকুল। তারা বিলাপ করে বলতে থাকেন, ‘আমরা মেয়ের সুখ খুঁজতে গিয়েছিলাম। কিন্তু আজ সুখের বদলে আমার মেয়ের এই করুণ পরিণতি। আমরা এই নির্যাতনের ন্যায় বিচার চাই। আর কোন বাবা-মা যেন এমন ভুল না করে!’ তাদের এই বিলাপ শুনে পুরো হাসপাতালের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। পুলিশ, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও উৎসুক জনতা কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। সবাই কাঁদলেন। তবে হাঁসলো সুমি। দীর্ঘ ৫ বছর পর মা-বাবা ও স্বজনদের কাছে পেয়ে অনেকটাই খুশি সে।

তবে মা আঞ্জুয়ারা খাতুন বুকে জড়িয়ে ধরতেই মুখ ফিরিয়ে নেয় সুমি। এ সময় সে তার মায়ের উদ্দেশ্যে বলে, ‘এখন কেন কাঁদছো। আমাকে কাজে দেয়ার সময় মনে ছিল না!’

এর আগে মানবাধিকার কমিশন চাটমোহর উপজেলা শাখার সভাপতি সাংবাদিক কেএম বেলাল হোসেন, থানার ওসি তদন্ত মো. শরিফুল ইসলাম, থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল লতিফ সুমির শারীরিক খোঁজ খবর নেন। এ সময় তারা সুমির মা-বাবার সাথে কথা বলেন এবং যাবতীয় সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন।

হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে সুমি বলে, ‘আমাকে তারা মারপিট করতো, খাবার কম দিত। বাবা-মার সাথে কথা বলতে দিত না, বাড়ির বাইরে বের হতে দিত না। আমি ভয়ে প্রথমে কিছু বলিনি। বললে ওরা আমাকে মেরে ফেলতো। ওরা মানুষ না, অমানুষ; আমি তাদের বিচার চাইনা; ওদের বিচার আল্লাহ করবেন।’

সুমির চাচা মাসুদ রানা বলেন, ‘আমার ভাইয়ের মেয়ে দেখতে খুব সুন্দর ছিল। তাকে নির্যাতন করে এমন করা হয়েছে। আমরা গরীব মানুষ। অভিযুক্তরা বিভিন্নভাবে আপোষ-মীমাংসার কথা বলছে। কিন্তু আমরা এর নায্য বিচার চাই।’

সুমির মা আঞ্জুয়ারা খাতুন বলেন, রোববার রাতে খবর পাওয়ার পর থেকেই ওই বাড়ির মহিলা (ফেরদৌসী বেগম) বারে বারে মোবাইলের মাধ্যমে মামলা না করার অনুরোধ জানান এবং টাকা নিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করার কথা বলেন। আমি তাদের কোন কথায় রাজি হইনি। আমার মেয়েকে নির্যাতনের জন্য সঠিক বিচার চাই।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এসএম আহসান হাবিব জানান, এ ঘটনায় সুমির মা বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। অভিযুক্ত দু’জনকে আটক করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে আটককৃত দু’জনকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে চাটমোহর পৌর শহরের ছোট শালিকা মহল্লা (কালীনগর) থেকে গৃহবন্দি অবস্থায় গৃহপরিচারিকা সুমিকে উদ্ধার করে চাটমোহর থানা পুলিশ। সে দীর্ঘ ৫ বছর ধরে আঃ সোবাহন বিচ্ছুর বাসায় কাজ করে। তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে প্রায়শই বিচ্ছুর স্ত্রী ফেরদৌসি বেগম ও ছেলে ফজলে রোহান লাঠি ও রড দিয়ে মেয়েটিকে নানা অজুহাতে মারপিট করতো এবং টয়েলেটে বন্দি করে রাখতো। শুধু তাই নয় মেয়েটিকে (সুমি) চাহিদা মাফিক খেতে দিত না এবং বাড়ির বাইরে বের হতে দিত না। পরবর্তীতে মেয়েটি শারীরিকভাবে রোগাক্রান্ত হয়ে শুকিয়ে যায়। প্রতিবেশীরা বিষয়টি মানবাধিকার কর্মীদের এবং থানা পুলিশকে অবহিত করেন। রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে সুমিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। তবে প্রথমে সুমি গৃহকর্তা ও গৃহকর্তীর ভয়ে কোন অভিযোগ না করায় পুলিশ অভিযুক্তদের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়। এরপর শনিবার সকালে সে কিছুটা সুস্থ হলে সাংবাদিকদের নির্যাতনের বর্ণনা দেয়

ad

পাঠকের মতামত