184491

‘কোলে নিয়া পালছি তখন লাগছে, অহন মায়েরে লাগে না’

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বহির্বিভাগে পার্কিং করা একটি দামি জিপগাড়ির সামনে মাটিতে বসেছিলেন মধ্যবয়সী এক নারী। সামনে তিনটি ব্যাগের পোটলা। একটু পর পর এদিক সেদিক তাকিয়ে কাউকে খুঁজছিলেন। এ সময় রাস্তা দিয়ে যারাই হেঁটে যাচ্ছিলেন তারা দামি গাড়ির সামনে মাটিতে ওইভাবে তাকে বসে থাকতে দেখে কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিলেন। সম্প্রতি এ প্রতিবেদকের চোখে এ দৃশ্য ধরা পড়ে।

অন্যদের মতো এ প্রতিবেদকও কৌতূহলবশত এগিয়ে গিয়ে এখানে এভাবে বসে আছেন কেন- বলতেই তিনি ভয়ে জবুথবু হয়ে বলেন, ‘চোখটা দিয়ে খালি পানি পড়ে, আইছিলাম ডাক্তার দেখাইতে। ছোট পোলাডা এহানে বহাইয়া কই জানি গেছে। এহানে বসাতে কোনো অপরাধ অইছে নাকি’ জানতে চাইলেন তিনি।

ওই নারীর নাম আমেনা বেগম। টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর থানার পাকুডিয়া ইউনিয়নের আকতারাইলে গ্রামের বাড়ি। ছেলে নয়নের সঙ্গে ডাক্তার দেখাতে এসেছেন।

তার সঙ্গে কথা বলার সময় ছেলে নয়ন উপস্থিত হয়ে জানায়, সে নারায়ণগঞ্জে দিনমজুরের কাজ করে। বেশ কয়েকমাস যাবত মায়ের চোখ দিয়ে পানি পড়ে, চোখ কচলায়। মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় ডাক্তার দেখিয়েছেন। ওই ডাক্তার প্রাইভেট ক্লিনিকে সাড়ে তিন হাজার টাকায় অস্ত্রোপচার করে দেবেন বলেছেন। কিন্তু টাকার অভাবে অস্ত্রোপচার করতে পারেননি।

এলাকার এক পরিচিত ছেলে ঢামেকে চাকরি করে। তার ওপর ভরসা করে আগেরদিন ঢাকায় এসেছেন। ওইদিন ডাক্তার দেখালে তিনি এক্সরেসহ আরও কয়েকটি পরীক্ষা দেন। পরীক্ষা করালেও সেদিন রিপোর্ট পাননি ল্যাবরেটরি থেকে। পরেরদিন রিপোর্ট দেয়া হবে বলে জানিয়েছে।

আমেনা বেগম জানান, গুলশানে এক বাসায় তার বড় মেয়ে গৃহকর্মীর কাজ করে। কোথাও রাত কাটানোর ব্যবস্থা না থাকায় মেয়ে যে বাসায় কাজ করে সেখানেই রাত কাটিয়েছেন।

কিছুক্ষণ পর ছেলে নয়ন সেখানে উপস্থিত হয়ে জানায়, রিপোর্ট দেখে ডাক্তার ১০দিন ওষুধ খেয়ে আবার আসার পরামর্শ দিয়েছেন। তাই এখন বাড়ি ফিরে যেতে হবে। এ কথা শুনে আমেনা বেগম বলেন, তুইতো আবার কাজে চলে যাবি, আবার কে আমারে নিয়া আইবো।

 

আপনার মোট কয়জন সন্তান জানতে চাইলে তিনি কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থাকেন। এক পর্য়ায়ে বলেন, নয়ন ছাড়াও তার আরও একটি ছেলে (বড়) আছে। গত ১২ বছর যাবত বিদেশে থাকে। গ্রামে অনেক জমিজমা, পাকা দালান করেছে।

বড় ছেলে বিদেশে দীর্ঘদিন রয়েছে, মাকে টাকা পয়সা দেয় কিনা প্রশ্ন করলে ওই নারীর দু’চোখ বেয়ে পানি ঝরতে থাকে। তিনি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, যহন ছোট আছিল তহন কোলে নিয়া পালছি, মায়ের দরকার আছিলো, অহন বড় অইছে, বউ বাচ্চা অইছে, অহন আর মায়েরে লাগে না।

আমেনা বেগম জানান, ছোট ছেলে নয়ন দিনমজুরের কাজ করলেও সব সময় তার খোঁজ খবর নেয়। যৎসামান্য রোজগার থেকেও তাকে প্রতি মাসে কিছু টাকা দেয়। টাকাওয়ালা ছেলের চেয়ে টাকা না থাকলেও ছোট ছেলেই ভাল বলে জানান তিনি। চলে যাওয়ার সময় বলতে থাকেন, অহন আর মায়েরে নাগে না (লাগে না), অহন আর…।

ad

পাঠকের মতামত